পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় বসবাসরত মানুষকে প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে মায়ের মতো আগলে রেখে রক্ষা করে। ফলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এক বিরাট এলাকা সুন্দরবনকে অবলম্বন করে নিরাপদ রয়েছে। সুন্দরবন বাংলাদেশ তথা ধরিত্রী রক্ষায় অন্যতম রক্ষাকবজ হিসেবে কাজ করে। সুন্দরবন আমাদের জাতীয় সম্পদ। এটি এখন বিশ্বঐতিহ্য। সুন্দরবনের কারণে বিশ্বের বুকে বাংলাদেশকে আলাদা করে চিহ্নিত করা যায়।
‘সুন্দরবনকে ভালোবাসুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি সুন্দরবন দিবস ঘোষণা করুন’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুযারি) সাতক্ষীরায় সুন্দর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এব আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। সুন্দরবন দিবস উদযাপন কমিটি সাতক্ষীরা শহরের ম্যানগোভ সভাঘরে এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।
শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আব্দুল হামিদের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, সাতক্ষীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মোঃ নজরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, সামাজিক ব্যক্তিত্ব শেখ আজহার হোসেন, জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব ও দৈনিক পত্রদূত পত্রিকার উপদেষ্টা সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বন বিভাগের জেলা সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমের সহকারী বন সংরক্ষক নুরুন্নাহার। সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়নকর্মী সরদার গিয়াসউদ্দিন আহম্মেদ।
বক্তারা আরও বলেন, সুন্দরবন শুধুমাত্র পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনই নয়, বিশ্বে সুন্দরবনের মত এত সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র্য আর কোন বনে নেই। এই জন্যই সুন্দরবনকে বলা হয় ‘জীববৈচিত্র্যের জীবন্ত পাঠশালা’। সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় শিল্প স্থাপনা নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। সুন্দরবনের উপর নির্ভরশীল মানুষকে সচেতন করতে হবে। বন রক্ষায় স্থানীয় বন সংরক্ষণে সম্পৃক্ত করতে হবে এবং তাদের জ্ঞান কাজে লাগাতে হবে। সুন্দরবন বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সুন্দরবন ভ্রমণে আগ্রহী ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য ইকো টুরিজম নিশ্চিত করতে হবে। যথেচ্ছভাবে সুন্দরবনে গমনাগম বন্ধ করতে হবে।
স্বদেশ-সাতক্ষীরার নির্বাহী পরিচালক মানবাধিকারকর্মী মাধব চন্দ্র দত্তের সঞ্চালনায় সভায় মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক হারুন উর রশীদ, উন্নয়নকর্মী অধ্যক্ষ আশেক ই এলাহী, অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, বরসার সহকারী পরিচালক নাজমুল আলম মুন্না, কবি কবির রায়হান প্রমুখ। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ক্রিসেন্ট’র নির্বাহী পরিচালক আবু জাফর সিদ্দিক, কোস্টাল পিপলস ফোরাম-সিপিএফ’র পরিচালক ফারুক রহমান, হেড সংস্থার পরিচালক লুইস রানা গাইন, অর্জন ফাউন্ডেশনের পরিচালক মহুয়া মঞ্জুরী, সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের পরিচালক শেখ আফজাল হোসেন প্রমুখ।
সুন্দরবন দিবসের সমগ্র অনুষ্ঠান আয়োজনে অংশগ্রহণ করে, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা স্বদেশ, টিআইবি, আশা লোককেন্দ্র, সৃজনী মহিলা লোককন্দ্রে, অর্জন ফাউন্ডেশন, সুন্দরবন ফাউন্ডেশন, বিজিএফ, সুশীলন, উত্তরণ, সামস, হেড, অগ্রগতি সংস্থা, লিডার্স, ক্রিসেন্ট, প্রথম আলো বন্ধুসভা, রূপান্তর, সিপিএফ, সিডো, আশ্রয়, বেলা।
প্রসঙ্গতঃ বিগত ২০০১ সালে খুলনায় অনুষ্ঠিত হয় ১ম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন। সম্মেলনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন সেই সময়ের রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমেদ। সেই থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে সুন্দরবন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
বর্তমানে এই দিবস পালনের কর্মকান্ডে সংযুক্ত থাকে সুন্দরবন একাডেমী, বন বিভাগ এবং বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সুন্দরবন সংলগ্ন সাংবাদিক সমাজ এবং প্রকৃতিপ্রেমী আপামর মানুষ। অতিমারি করোনার কারণে ২০২০ সালের পর অন-লাইন ভিত্তিক এবং খুবই ক্ষুদ্র পরিসরে সুন্দরবন দিবস পালন করা হয়েছিল। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও প্রতিবারেরমত এবারও নানান আনুষ্ঠানিকতায় সুন্দরবন দিবস পালন করা হচ্ছে।
খুলনা গেজেট/ এসজেড