সাতক্ষীরা সীমান্তে গুলিতে এক বাংলাদেশী যুবক নিহত হয়েছে। রোববার (৯ অক্টোবর) ভোর ৩টার দিকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার খৈতলা সীমান্তের মেইন পিলার ৯ এর কাছে শুন্যরেখা বরাবর এলাকায় এই গুলির ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় খুলনায় নেয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তবে বিএসএফ সীমান্তে গুলি করার কথা অস্বীকার করেছে।
নিহতের নাম মোঃ আবু হাসান (২৭)। তিনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কুশখালি গ্রামের মক্তব মোড়ের মোঃ হায়দার আলীর ছেলে।
নিহতের পিতা কুশখালি গ্রামের হায়দার আলী জানান, শনিবার রাত ১০ টার দিকে তার কাছে কিছু টাকা চায় আবু হাসান। কাছে টাকা না থাকার কথা বলায় সে পার্শ্ববর্তী বাজারে চায়ের দোকানে চলে যায়। এর পর রাতে সে আর বাড়ি ফেরেনি। খৈতলা সীমান্তের শূন্য রেখায় ভারতীয় দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ হাসানকে গুলি করে ফেলে রেখে গেছে মর্মে তিনি রোববার ভোর ৫টার দিকে মোবাইলে খবর পান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ভোর ৬টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেন। সেখান থেকে এম্বুলেন্সে খুলনায় নিয়ে যাওয়ার পথে সকাল ৭ টা ২০ মিনিটে ডুমুরিয়া নামক স্থানে হাসান মারা যায়। হাসান মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য খুলনার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে সেখান কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তবে নিহত হাসানের শ্বশুর সদর উপজেলার ঘোনা মোল্লা পাড়া গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান, তার জামাতা আবু হাসান ভারতীয় চোরাই পণ্য আনা নেওয়ার জন্য কাজ করতো। তার বিরুদ্ধে ৫টি মাদকের মামলাও রয়েছে। এক সপ্তাহ আগে তাকে পুলিশে ধরার পর ছেড়েও দিয়েছিল। শনিবার রাতে সে ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশে আনার জন্য পাসিং ম্যানের দায়িত্ব পালন করতে খৈতলা সীমান্তে অবস্থান করছিল। ভারতের দুবলী ক্যাম্পের বিএসএফ তাকে গুলি করেছে মর্মে তিনি জেনেছেন।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক ডাঃ আশরাফুল ইসলাম জানান, হাসানের পেটের ডান দিকে গুলিবিদ্ধ হয়।
সাতক্ষীরাস্থ বিজিবি ৩৩ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আল মাহমুদ পিএসসি জানান, সীমান্তে গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসানের মৃত্যুর ব্যাপারে বিএসএফ এর কাছে জানতে চাইলে তারা অস্বীকার করেছে। তবে এঘটনায় বিজিবি ও বিএসএফ এর মধ্যে ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে একটি পতাকা বৈঠকের অহবান করা হয়েছে। পতাকা বৈঠক কালিয়ানি সীমান্তের শূন্য রেখায় অনুষ্ঠিত হবে। তবে নিহত হাসান অবৈধপথে আনা ভারতীয় পণ্য পাসিং এর কাজ করতো বলে তিনি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মুনতাজ হোসেন (৪০) নামে এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। রোববার (৯ অক্টোবর) ভোরে বড় বলদিয়া সীমান্তের অদূরে ভারতীয় সীমান্তের মধ্য মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয়রা। পরে বিএসএফের সদস্যরা মরদেহ নিয়ে চলে যান।
নিহত মুনতাজ হোসেন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়নের ছোট বলদিয়া গ্রামের স্কুলপাড়ার মৃত নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি পেশায় গরু ব্যবসায়ী ছিলেন।
পারকৃষ্ণপুর-মদনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএএম জাকারিয়া আলম বলেন, শনিবার (৮ অক্টোবর) রাতে অবৈধভাবে গরু নিয়ে আসার জন্য ভারত সীমান্তে যান মুনতাজ হোসেন। রোববার সকালে ভারত সীমান্তের মধ্যে তার মরদেহ পড়ে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাংলাদেশিরা। বিএসএফের গুলিতে তার মৃত্যু হয়েছে। মরদেহ বিএসএফ নিয়ে গেছে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে আলোচনা সাপেক্ষে মরদেহ নিয়ে আসা হবে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য হযরত আলী বলেন, মুনতাজ আগে কাঠের ব্যবসা করতেন। এখন শুনছি অবৈধভাবে ভারত থেকে গরু নিয়ে এসে ব্যবসা করতেন। রাতে সীমান্তে গরু নিয়ে আসার সময় বিএসওফের গুলিতে মারা যান মুনতাজ। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বিএসএফ নিয়ে গেছে।
দর্শনা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম লুৎফুল কবীর বলেন, বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি নিহত হয়েছে বলে জেনেছি। আমি ঘটনাস্থলে যাচ্ছি। এরপর বিস্তারিত জানানো হবে।
খুলনা গেজেট/ টি আই/এমএম