সাতক্ষীরার শ্যামনগরের কাশিমাড়ি গ্রামে ‘বহু ঘূর্ণিঝড়ের সাক্ষী যারা’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভায় নবীনদের উপকূলে সংঘটিত ঘূর্ণিঝড়ের গল্প শুনিয়েছেন প্রবীণরা। শনিবার (১ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস উপলক্ষে ‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’ প্রতিপাদ্যে বেসরকারি সংস্থা বারসিকের সহযোগিতায় স্বেচ্ছাসেবক সংগঠন এসএসএসটি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
সভায় শ্যামনগর উপজেলা জনসংগঠন সমন্বয় কমটির সভাপতি শেখ সিরাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও বারসিক কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ মন্ডলের সঞ্চলনায় বক্তব্য রাখেন, প্রবীণ নারী সুফিয়া বেগম, আনোয়ারা খাতুন, সাহিদা বেগম, আমিরুননেছা, ছফুরা বেগম, এসএসএসটির স্বেচ্ছাসেবক স্বপন, হাবিবুর রহমান প্রমুখ।
সভায় প্রবীণ ব্যক্তিরা বলেন, আমরা উপকূলীয় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাস করি। এখানে বছরের নানা সময়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে। এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করেই আমরা টিকে আছি। অতীতে আমাদের এলাকা নানা প্রাণবৈচিত্র্যে ভরপুর ছিলো। আজ যেন তা রূপকথার গল্প। এখানে যেমন ছিলো প্রাচীন নানান ঐতিহ্য, গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু, তেমনি প্রাকৃতিক জলাশয় ও পুকুরগুলোতে ছিল হরেক রকমের মাছ। এলাকায় হতো নানা ধরনের ফল ও ফুল, নানান ধরনের সবজী, মসলা ও ডাল। গ্রামীণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও নানা খেলাধুলা ছিল বিনোদনের উৎস। সব কিছুই যেন শেষ হয়ে গেছে। এগুলোর বিলুপ্তির মূল কারণ ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও লবণাক্ততা।
এসময় প্রবীণরা ১৯৮৮ সালের ঝড়, সিডর, আইলা, রোহানু, মহাসেন, আম্পান, বুলবুল, ফনী, ইয়াসসহ নানা দুর্যোগের কথা তুলে ধরেন। তারা বলেন, আগেকার দিনে দুর্যোগ হতো কম। আর এখন ঘন ঘন ঝড় হচ্ছে।
সভায় তারা আরও বলেন, আগে মানুষ নানা বিনোদনের মধ্যে দিয়ে সময় কাটাতো। পাশাপাশি তারা পুষ্টিকর খাবার পেতো। সেজন্য রোগ বালাই কম হতো। আর এখন প্রতিটি এলাকা অসুখে ভরে গেছে। ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে মানুষ সহায় সম্পদ হারিয়ে খিটখিটে হয়ে গেছে। মানুষের ধৈর্য্য কমে গেছে। মানুষের মধ্যে দেখা দিচ্ছে নানা দ্বন্দ্ব।
সভায় উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নে নবীন ও প্রবীণ সকলের মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ, প্রাকৃতিক জলাশয়গুলো উন্মুক্তকরণ, জলাশয় ও সুপেয় পানির পুকুরগুলো পুনঃখনন, প্রবীণদের ভাতার পরিমান বৃদ্ধি ও তাদের বিনোদনের ব্যবস্থা করার সুপারিশ উঠে আসে।
খুলনা গেজেট/এসজেড