যশোরে দিনে-দুপুরে হত্যার শিকার জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধোনির দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বুধবার দুপুরে শহরের বেজপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এদিকে, আলোচিত এ হত্যার ঘটনায় এখনও কেউ আটক ও থানায় কোন মামলা হয়নি। তবে স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এই হত্যার ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছে। পরিচিতজনরাই তাকে কুপিয়ে খুন করে বলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে জানিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে শহরের শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ের বাড়ির সামনে জেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি বদিউজ্জামান ধোনিকে (৫২) কুপিয়ে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।
নিহত ধনির শ্যালক তপু রহমান জানান, মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাড়ি থেকে বের হয়ে সামনের একটি ফার্মেসিতে বসেছিলেন বদিউজ্জামান ধোনি। এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসী রায়হান, রহিমসহ ৪/৫ জন তার ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। তারা ধনিকে উপর্যুপরি কুপিয়ে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ভর্তির পর অপারেশন থিয়েটারে তিনি মারা যান।
তিনি বলেন, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শামীম আহমেদ মানুয়া নামে এক ব্যক্তি তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসীদের দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। মানুয়াকে পুলিশ আটক করলে এ হত্যার রহস্য উদ্ঘাটন হবে বলে তিনি মনে করেন।
পুলিশ ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এলাকায় সজ্জন হিসেবে পরিচিত থাকলেও যুবদল নেতা বদিউজ্জামান ধোনির বিরুদ্ধে পুলিশের খাতায় হত্যাসহ সন্ত্রাসী বিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে ১২টি মামলা রয়েছে। এরমধ্যে যুবলীগ কর্মী ইয়াসিন আরাফাত হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি ছিলেন ধোনি। গত ১৬ ফেব্রুয়ারি বেজপাড়া ব্রাদার্স ক্লাবের সামনে হত্যার শিকার হন ইয়াসিন আরাফাত ওরফে হুজুর ইয়াসিন। এ মামলায় ধনি আটক হয়ে মাসখানেক আগে জেল থেকে বের হয়েছেন। স্থানীয়ভাবে মানুয়ার সাথে ধোনির বিরোধ ছিল, তিনি মৃত ইয়াসিন আরাফাতের শ্বশুর। ধোনি হত্যার পর প্রাথমিক তদন্তে রায়হান নামে এক হামলাকারীকে সনাক্ত করেছে পুলিশ। তাকে আটক করতে পারলেই হত্যাকাণ্ডের জট খুলবে বলে পুলিশ ধারণা করেছে। এ টার্গেটেই পুলিশ জেলাব্যাপী অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে।
ধোনি হত্যার বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, বদিউজ্জামান ধোনী একজন নির্ভেজাল রাজনৈতিক নেতা ছিলেন। তার সঙ্গে কারোর কোনো বিরোধ ছিল না। এভাবে দিনে-দুপুরে তাকে হত্যার বিষয়টি আমরা মেনে নিতে পারছি না। এ ঘটনায় যারাই জড়িত থাকুক প্রকৃত অপরাধীদের পুলিশ শনাক্ত করে বিচারের মুখোমুখি করবে এটাই প্রত্যাশা করি।
বিষয়টি নিয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসেন জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। বিএনপির স্থানীয় রাজনীতিতে মানুয়া পিছিয়ে পড়ে। আর যুবদল নেতা ধোনী এগিয়ে যায়। এর আগে নিহত ইয়াসিন আরাফাত মানুয়ার মেয়ের জামাই। যে কারণে তিনি এ হত্যাকান্ডের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। হত্যার পর পুলিশি প্রাথমিক তদন্তে রায়হান নামে এক হামলাকারীকে শনাক্ত করা হয়েছে। রায়হান মানুয়ার ভাগ্নে। তাকে আটক করতে পারলেই হত্যার জট খুলবে। এখনও ধনি হত্যায় কোনো মামলা হয়নি। তবে প্রকৃত অপরাধীদের আটকের জন্য পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, হত্যার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে নিহতের স্বজনদের সাথে কথা বলেছেন র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের সদস্যরা। এ বিষয়ে র্যাব-৬ যশোরের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার নাজিউর রহমান জানান, তিনি নিজে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। র্যাবের পক্ষ থেকে ছায়া তদন্ত চলছে।
ময়নাতদন্ত শেষে মঙ্গলবার বিকেলে যুবদল নেতা ধোনির মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন স্থান থেকে স্বজনরা আসার পর বুধবার বেলা ১১টার দিকে শংকরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে বেজপাড়া কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় অংশগ্রহণ করেন যুবদলের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মামুন হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মোনায়েম মুন্না, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের আহবায়ক শফিকুল ইসলাম মিল্টন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকার, বিএনপির খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, দেলোয়ার হোসেন খোকনসহ বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
খুলনা গেজেট/ টি আই