যশোরে ওএমএসের মাধ্যমে খোলাবাজারে গরীব মানুষের জন্য আটা বিক্রি বন্ধ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। এ কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নিম্নবিত্ত মানুষেরা। তাদেরকে প্রতি কেজি আটা ২২ টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের মত আটাও গরীব মানুষের হাতের নাগালের বাইরে চলে গেলো। এটা মরার উপর খাড়ার ঘা হয়ে দেখা দিয়েছে।
যশোরে সরকারিভাবে ন্যায্যমূল্যে মালামাল বিক্রির জন্য ১৪ জন ওএমএস ডিলার রয়েছেন। তাদের মাধ্যমে সপ্তাহের ছয়দিন ১১ মেট্রিকটন আটা বিক্রি করা হতো। সরকার ওএমএসের আটার দাম নির্ধারণ করে ১৮ টাকা কেজি।
বাজারে চাল ও আটার দাম বেশি থাকায় শ’শ’ মানুষ ওএমএসের দোকানে ভিড় করতো। একজন প্রতিদিন পাঁচ কেজি করে আটা নিতে পারতেন। এ আটা নিতে তাদের খরচ হতো মাত্র ৯০ টাকা। যেসব পরিবারে ডায়াবেটিক রোগী রয়েছে মূলত ওইসব পরিবারের লোকজন আটা কিনতে দৌড়ঝাঁপ করেন। ভোরবেলা থেকে প্রতিটি ওএমএস’র দোকানে মানুষ আটা কেনার জন্য অপেক্ষা করতেন। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তারা সংগ্রহ করতেন আটা।
কিন্তু হঠাৎ করে গত ১৬ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ওএমএসের আটা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে খাদ্য অধিদপ্তর। এ কারণে হা-হুতাশ করছেন নিম্নবিত্ত পরিবারের মানুষরা। বিশেষ করে যাদের রুটি খাওয়া জরুরি তারাই বিপাকে পড়েছেন।
বর্তমানে বাজারে আটার দাম অনেক বেশি। খোলা আটা ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্যাকেট আটা ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। একজন মানুষ ৯০ টাকায় যে পাঁচ কেজি আটা কিনতেন সেই একই পরিমাণ আটা কিনতে তাদের এখন ২শ’ টাকা লাগছে।
যারা প্রতিদিন ওএমএস থেকে পাঁচ কেজি করে আটা কিনতেন তাদের মাসে খরচ হতো ২ হাজার ১শ’ ৬০ টাকা। এখন বাইরের দোকান থেকে কিনতে খরচ হচ্ছে ৪ হাজার ৮শ’ টাকা। অতিরিক্ত গুণতে হচ্ছে ২ হাজার ৬শ’ ৪০ টাকা।
যশোরে প্রতিদিন ১১ মেট্রিকটন আটা বিক্রি হতো ওএমএসের মাধ্যমে। সেই হিসেবে ২৪ দিনে বিক্রি হতো ২শ’ ৬৪ মেট্রিকটন অর্থাৎ ২ লাখ ৬৪ হাজার কেজি। প্রত্যেকে পাঁচ কেজি করে কিনতে পারলে জেলায় ৫২ হাজার ৮শ’ মানুষ স্বল্পমূল্যের এই সুবিধা পেতেন। সেই সুবিধা আপাতত তারা আর পাচ্ছেন না। ফলে অর্ধ লক্ষাধিক নিম্ন আয়ের মানুষ অর্থনৈতিক চাপে পড়েছেন। যে কারণে তাদের নাভিশ্বাস উঠেছে।
জয়নাল আবেদীন নামে একব্যক্তি শহরতলির ধর্মতলার ওএমএস দোকান থেকে পাঁচ কেজি করে আটা নিয়ে ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিতেন। তিনি বলেন, আগে ১৮ টাকা কেজি আটা কিনতাম। প্রতিদিন ৯০ টাকা করে লাগতো। বর্তমানে সেই আটা কিনতে লাগছে ২শ’ টাকা। জন খেটে তার এ পরিমাণ আটা কেনা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ পরিবারে তিনজন ডায়াবেটিকের রোগী রয়েছে। এখন তাদের নাভিশ্বাস উঠছে।
একই কথা বলেন, রহিমা বেগম নামে এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, মেয়ের সংসারে থাকি। জামাই নেই। মেয়ে পরের বাড়ি কাজ করে সংসার চালায়। প্রতিদিন পাঁচ কেজি করে আটা কিনতাম ৯০ টাকা দিয়ে। এখন আর আটা বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে দোকান থেকে বেশি দামে আটা কিনতে না পেরে ৩০ টাকা করে চাল কিনছি। এ কারণে তারা সরকারের কাছে ফের ওএমএস’র আটা বিক্রি চালুর দাবি জানিয়েছেন।
এদিকে, খাদ্যবিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, গমের মজুত তলানিতে যাওয়ায় ওএমএসের আটা বিক্রি বন্ধ করেছে অধিদপ্তর। বর্তমান পরিস্থিতি সামাল দিতেই এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু বলেন, ১৬ মে থেকে ওএমএসে আটা বিক্রি বন্ধ করেছে অধিদপ্তর। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত আটা বিক্রি বন্ধ থাকবে।