সাতক্ষীরার কালিগঞ্জে প্রায় ৬ মাস আগে ছেলেকে হত্যা করে গোপনে কবর দেওয়ার ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের মা খালেদা বেগম বাদি হয়ে শনিবার (৫ আগষ্ট) সকালে এই মামলা দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ নিহতের বাবা ইমান আলী মোড়ল ও সৎ মা জোহরা খাতুনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নিহত কিশোরের নাম আরিফুল ইসলাম (১৭)। সে সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার চাম্পাফুল গ্রামের ঢালী পাড়ার ইমান আলী মোড়লের প্রথম স্ত্রীর ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, চাম্পাফুল গ্রামের ঢালী পাড়ার ইমান আলী মোড়ল তার শিশু ছেলে আরিফুল ইসলামকে রেখে প্রথম স্ত্রী খালেদা বেগমকে তালাক দিয়ে আরেক নারীকে বিয়ে করে। তাকেও তালাক দিয়ে পরে জোহরা খাতুনকে বিয়ে করে। তালাকের পর খালেদা বেগম তার বাবা’র বাড়িতে আর ছেলে আরিফুল ইসলাম বাবা ইমান আলীর কাছেই থাকতো। কিন্তু প্রায় ৬ মাস আগে থেকেই কিশোর আরিফুল ইসলাম নিখোঁজ রয়েছে। আরিফুল ইসলামের অবস্থান সম্পর্কে প্রতিবেশীরা তার বাবা ইমান আলী মোড়ল ও তৃতীয় স্ত্রী জোহরা খাতুনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলতো। একপর্যায় বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ হলে প্রতিবেশীরা চাম্পাফুল ইউপি’র ২নং ওয়ার্ডের সদস্য সাইলুজ্জামান খানকে জানান।
এসময় ইউপি সদস্য সাইলুজ্জামান খান ও ইউপি সদস্য কাইয়ুম গাইনসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা শুক্রবার বিকালে ইমান আলী মোড়ল ও সৎ মা জোহরা খাতুনের কাছে আরিফুল ইসলাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, গত ১ চৈত্রের রাতে তাদের ছেলে বাড়ির পাশের একটি গাছের ডালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছিল। পরদিন সকালে আরিফুলকে গাছে ঝুলতে দেখে তারা লাশ নামিয়ে কাউকে জানিয়ে বাড়ির পাশে কবর দেয়। আত্মহত্যার ঘটনা কাউকে জানাইনি কেন জানতে চাইলে তারা জানান, পুলিশকে জানালে মৃত ছেলের কিডনি খুলে নিয়ে যাবে এজন্য কাউকে না জানিয়ে বাড়ির পাশে কবর খুড়ে তাকে দাফন করা হয়।
ইমান আলী মোড়ল ও জোহরা খাতুনের রহস্যজনক আচরণ ও বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ইউপি মেম্বরা গ্রামবাসীর সহায়তায় আরিফুলকে হত্যার অভিযোগে ইমান আলী মোড়ল ও জোহরা খাতুনকে আটক করে থানায় খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে কালিগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে তাদের দু’জনকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা তাদের ছেলেকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এঘটনায় নিহত আরিফুলের মা খালেদা বেগম বাদি হয়ে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। লাশের ময়না তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে কবর থেকে লাশ উত্তোলন করা হবে তিনি জানান।
প্রসঙ্গত, আরিফুল ইসলাম ইমান আলী মোড়লের প্রথম স্ত্রীর গর্ভজাত সন্তান। দ্বিতীয় স্ত্রীর শরিফুল ইসলাম (১০) নামে একটি ছেলে রয়েছে। সে হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ছে। প্রথম ও দ্বিতীয় স্ত্রীকে তালাক দেয়ার পর ইমান আলী জোহরা খাতুন কে বিয়ে করে। তার কোন সন্তান নেই।
খুলনা গেজেট / এমএম