দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইতিহাসগড়া সিরিজ জয় পেয়েছে। সিরিজের শেষ ম্যাচে বল হাতে তাসকিন আর ব্যাট হাতে তামিম-লিটনের দারুণ পারফর্মেন্সে সহজ জয় পেয়েছে লাল সবুজের দল। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে টাইগাররা জয় পেয়েছিল। দ্বিতীয় ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা জয় পায়। শেষ ম্যাচে ৯ উইকেটে রোমাঞ্চকর জয় তুলে নেয় টাইগাররা।
সেঞ্চুরিয়নে প্রথম ওয়ানডে জিতে ১৯ ম্যাচ ও ২০ বছরের আক্ষেপ ঘুচিয়েছিল বাংলাদেশ। তবে জোহানেসবার্গে দারুণভাবে ঘুরিয়ে দাঁড়িয়ে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে প্রথম ওয়ানডের ভেন্যুতে ফিরে আরও একবার জ্বলে উঠে টাইগাররা। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে তাসকিন আহমেদের ৫ উইকেটে মাত্র ১৫৪ রানে গুটিয়ে যায় প্রোটিয়ারা। সহজ লক্ষ্য তাড়ায় তামিম ইকবাল এবং লিটন দাসের দারুণ ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটের বড় জয় পায় বাংলাদেশ। এমন জয়ে প্রোটিয়াদের মাটিতে প্রথমবার ওয়ানডে সিরিজ জিতলো তামিমের দল। এশিয়ার তৃতীয় দল হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সিরিজ জিতে বাংলাদেশের ইতিহাস।
জয়ের জন্য ১৫৫ রানের সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করেন বাংলাদেশের দুই ওপেনার তামিম ইকবাল এবং লিটন দাস। যদিও ইনিংসের প্রথম ওভারেই ফিরতে পারতেন লিটন। কাগিসো রাবাদার শর্ট বলে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন ডানহাতি এই ব্যাটার। তবে সেটা লুফে নিতে পারেননি কেশভ মহারাজ।
এরপর প্রোটিয়া বোলারদের দেখেশুনে খেলতে থাকেন লিটন ও তামিম। তাতে পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৫৮ রান তোলে বাংলাদেশ। যেখানে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে রাবাদার হ্যাটট্রিক চারে ১৬ রান তোলেন তামিম। পাওয়ার প্লে শেষ হওয়ার পর হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক।
ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের বলে এক রান নিয়ে ৫২ বলে হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তামিম। তাতে ৯ চারে এবারের সিরিজে প্রথম সেঞ্চুরির দেখা পেলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। হাফ সেঞ্চুরির পর থেকে প্রোটিয়া বোলারদের ওপর আরও চড়াও হতে থাকেন তামিম। তাবরাইজ শামসির বলে চার মেরে লিটনের সঙ্গে শতরানের জুটি পূর্ণ করেন বাঁহাতি এই ওপেনার।
এদিকে হাফ সেঞ্চুরির ঠিক আগ মুহূর্তে আউট হয়েছেন লিটন। মহারাজের ফুলার লেংথ বলে তুলে মারতে গিয়ে বাভুমার হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন ৪৮ রান করা লিটন। তবে তিনে নামা সাকিব আল হাসানকে সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের ৯ উইকেটের জয় নিশ্চিত করেন তামিম।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিংয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল প্রোটিয়ারা। ব্যাটিংয়ে নেমে দারুণ শুরু পেয়েছিল তারা। যদিও কুইন্টন ডি কককে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ক্যাচ বানিয়ে বাংলাদেশকে ব্রেক থ্রু এনে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ডি কক ৮ বলে ১২ করে আউট হয়েছেন। মিরাজকে লং অফের ওপর দিয়ে মারতে চেয়েছিলেন ডি কক। কিন্তু সেখানে ফিল্ডিংয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ সহজ ক্যাচ নিয়েছেন।
এরপর কাইল ভেরাইনেকে বোল্ড করে আউট করেছেন তাসকিন আহমেদ। এই স্পিড স্টারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে চেয়েছিলেন ভেরাইনে। কিন্তু তা ব্যাটের কানা ছুঁয়ে সোজা লাগে স্টাম্পে। ফলে ৯ রানেই ফিরতে হয়েছে তাকে। পরের ওভারে বল করতে এসেই একপ্রান্ত আগলে রাখা মালানকে ৩৯ রানে উইকেটের পেছনে মুশফিকের ক্যাচ বানিয়ে আউট করেছেন এই পেসার। ব্যক্তিগত ২ রানে প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমাকে এলবিডব্লিউ বানিয়েছেন সাকিব আল হাসান।
সাকিবের আবেদনে সারা দিয়ে আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়েছিলেন বাভুমা। রিপ্লেতে দেখা যায় বল লেগ স্টাম্পে হিট করেছে। আম্পায়ার্স কলের কারণে মাঠ ছাড়তে হয়েছে বাভুমাকে। এরপর ৪ রান করা ডাসেনকে ফিরিয়ে বাংলাদেশ শিবিরে স্বস্তি ফেরান শরিফুল ইসলাম। ওয়েইন পারনেলের বিকল্প হিসেবে খেলতে নামা ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলছিলেন। ডানহাতি এই ব্যাটারকে মুশফিকের ক্যাচ বানান তাসকিন।
এরপর ইনিংসের ২৯তম ওভারে এসে তিন বলের ব্যবধানে ডেভিড মিলার ও কাগিসো রাবাদাকে আউট করেন এই পেসার। তাতে ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বারের মতো পাঁচ উইকেট নেয়ার কীর্তি গড়েন তাসকিন। ১৪ বল খেললেও রানের খাতা খোলার আগেই লুঙ্গি এনগিদিকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানিয়েছেন সাকিব। এই বাঁহাতি স্পিনারের ওপর চড়াও হতে গিয়ে লং অফে সাবস্টিটিউট ফিল্ডার নাজমুল হোসেন শান্তর হাতে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। মহারাজ ২৮ রান করে শেষদিকে রান আউট হলে অল আউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।