খুলনা, বাংলাদেশ | ১১ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৬ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় অটোরিকশার ৫ যাত্রী নিহত
  মানবতাবিরোধী অপরাধ : চিফ প্রসিকিউটর দেশে না থাকায় ফখরুজ্জামান ও সাত্তারের জামিন শুনানি ২ সপ্তাহ পেছাল আপিল বিভাগ
  আজ থেকে জাতীয় ছাত্র সংহতি সপ্তাহ শুরু
  অ্যান্টিগা টেস্ট: শেষ দিনে বাংলাদেশের দরকার ২২৫ রান, হাতে ৩ উইকেট

ধর্ষণ চেষ্টা মামলা তুলে নিতে ভিকটিম ও তার স্বামীকে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন

নিজস্ব প্রতি‌বেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নে ধর্ষণ চেষ্টা মামলার বাদি (ভিকটিম) ও তার স্বামীকে আটকিয়ে রেখে শারিরীক নির্যাতনসহ সাদা কাগজে জোরপূর্বকভাবে স্বাক্ষর নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) ধুলিহর ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

ভূক্তভোগী পরিবার ও স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার ধুলিহর ইউনিয়নের দুই সন্তানের জননী (৩৮)কে প্রায় উত্ত্যক্ত করতো ইউনিয়নের রুদ্রপুর গ্রামের হারাধন চৌকিদারের ছেলে রনজিত। একপর্যায়ে গত ২০ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যায় ব্যবসায়ীক কারণে ওই গৃহবধূর স্বামী বাড়ির বাইরে থাকার সুযোগে তাকে (গৃহবধূ) জোরপূর্বকভাবে ধর্ষণের চেষ্টা চালায় রনজিত। ওইসময় ধর্ষণ চেষ্টায় বাঁধা দিলে রনজিতের আঘাতে গুরুত্বরভাবে আহত হয় গৃহবধূ। এসময় তার চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে পালিয়ে যায় রনজিত। এঘটনায় ভূক্তভোগী পরিবারটি সাতক্ষীরা সদর থানায় মামলা করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে গত ২৪ ফেব্রæয়ারি সাতক্ষীরা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি পিটিশন মামলা দায়ের করেন (মামলা নং ৮১/২২) নির্যাতিত ওই গৃহবধু। ওইদিন আদালতের বিচারক এম.জি আযম গৃহবধূর জবানবন্দী রেকর্ড করে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গণ্য করতে সদর থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশনা দিয়ে একটি পুলিশ রিপোর্ট দাখিলের আদেশ দেন। তবে অভিযুক্ত রনজিত স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধির সমর্থক হওয়ায় ভূক্তভোগী গৃহবধূর দায়েরকৃত মামলাটি তুলে নিতে চাপ দেন ওই জনপ্রতিনিধি।

এসময় পরিবারটি মামলা তুলে নিবেনা বলে জানালে রোববার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সকালে গ্রাম পুলিশ দিয়ে ওই গৃহবধূ ও তার স্বামীকে বাসা থেকে তুলে আনেন জনপ্রতিনিধি।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, ভূক্তভোগী পরিবারটিকে জোরপূর্বক ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসার পর ভীতি সঞ্চার করে মামলাটি তুলে নিতে বলা হয়। এসময় ভিকটিমের স্বামী মামলা তুলে নিবে না বলে জানালে তাকে মারপিট করা হয়। প্রাণভয়ে গৃহবধুর স্বামী পালিয়ে গেলেও গৃহবধূকে আটকে রাখা হয়।
এব্যাপারে ভিকটিমের স্বামী জানান, রোববার সকালে দুজন গ্রাম পুলিশ আমাদেরকে জোরপূর্বক বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে আসে। ওই সময় মামলা তুলে নিতে চাপ দেওয়া হয়। একপর্যায়ে প্রাণভয়ে আমি দৌড়ে পালিয়ে আসলেও আমার স্ত্রীকে আটকিয়ে রাখা হয় পরিষদে।

এবিষয়ে নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ বলেন, পরিষদে যাওয়ার সাথে সাথে আমার স্বামীসহ আমাকে মারপিট করতে থাকেন জনপ্রতিনিধির লোকজন। এসময় আমার স্বামী প্রাণভয়ে পালিয়ে গেলে আমাকে একটা রুমের ভিতরে আটকে রাখা হয়। এভাবে কয়েকঘন্টা পর্যন্ত নির্জন একটা কক্ষে আমাকে আটকিয়ে রেখে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য চাপ দিতে থাকে। তবে আমি আমার জীবন চলে গেলেও মামলা তুলে নেব না জানালে ওইসময় আমাকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে নির্যাতন করেন ইউপি সদস্য বিস্টু সরকারসহ অনেকে। একপর্যায়ে বিকালে আমাকে দিয়ে জোরপূর্বকভাবে কয়েকটি সাদা কাগজে সই করিয়ে নেয় চেয়ারম্যান। পরে নির্যাতনকারী ব্যক্তিদের সাথে আমাকে বাড়িতে ফেরত পাঠান তিনি।

তিনি আরও বলেন, আমি বাড়িতে পৌঁছানোর সাথে সাথে আমার দায়েরকৃত মামলার আসামী রনজিত, ইউপি সদস্য বিস্টু সরকার আমার বাড়িতে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে ও বিভিন্ন ভাবে হুমকি ধামকি দেয়।
এব্যাপারে ধুলিহর ইউপি চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী ওই গৃহবধূ ও তার স্বামীকে মারপিটের কথা অস্বীকার করে বলেন, ওই গৃহবধূ কর্তৃক রনজিত এর বিরুদ্ধে করা ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগটি সম্পূর্ন মিথ্যে। তাছাড়া ওই মহিলার স্বভাব চরিত্র ভাল না। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আমি স্থানীয় ভাবে বসে মিমাংসা করার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু ওই মহিলা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের ডিনাই করে মিথ্যে মামলা করেছে। এঘটনা জানতে রেবাবার চৌকিদার দিয়ে তাদেরকে ডেকে পরিষদে এনেছিলাম। বিভিন্ন শালিসের কারণে ব্যস্ত থাকায় ওই মহিলা ও তার স্বামীকে কিছুক্ষন বসে থাকতে বলেছিলাম। কিন্তু ওর স্বামী একপর্যায় পালিয়ে যায়। যেহেতু তার স্বামী পালিয়ে গেছে সেকারণে মহিলার কাছ থেকে একটি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেই। আমার কোন লোকজন তাকে মারপিট করেনি বা হুমকি ধামকিও দেয়নি বলে জানান তিনি।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) গোলাম কবির বলেন, আদালত থেকে গৃহবধূর দায়েরকৃত অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণকরে তদন্ত প্রতিবেদনের জন্য সদর থানাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে গৃহবধূর দায়েরকৃত মামলা তুলে নিতে গৃহবধূসহ তার স্বামীকে আটকিয়ে রেখে নির্যাতন করার বিষয়ে তিনি অবগত নন।
তিনি বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে ওই পরিবারটির পুরো নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। একারণে ভুক্তভোগী ওই পরিবারকে যেকোন মারফত পুলিশের সাথে যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করেন তিনি।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!