যশোরের অভয়নগরে এ বছর প্রাকৃতিক কোন দুর্যোগের সৃষ্টি না হওয়ায় এবং অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করায় কুল চাষের বাম্পার ফলন হয়েছে। কুল চাষে স্বাবলম্বী হয়েছেন বুলবুল। ভাগ্য খুলেছে তার।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, অভয়নগরে অনুকূল পরিবেশ এবং কম খরচে বেশি লাভবান হওয়া যায় বলে এ অঞ্চলের বেশিরভাগ কৃষকরা কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এছাড়া এ অঞ্চলের বেশিরভাগ মৎস ঘেরের মালিকরা ঘেরের পাড়ে কুল চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
চাষিরা বলেন, মাছ চাষের সাথে ঘেরের পাড়ে গত বছর উপজেলার ৪৮ হেক্টর জমিতে কুল ও বরই চাষ হয়েছে। বাজার এবং চাষিদের চাহিদা অনুযায়ী এবার ৫০ হেক্টর জমিতে বরই এবং কুলের আবাদ হয়েছে। এ অঞ্চলে আপেল কুল, বাউকুল, বল সুন্দরী কুলের চাষের প্রচলন ছিল। কিন্তু বেশ কয়েক বছর ধরে বাণিজ্যিকভাবে টক বরইয়ের চাহিদা বেড়েছে। নতুন করে কেউ বাগান করতে চাইলে উন্নত জাতের কুল ও বরইয়ের চারা এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সহযোগিতা প্রদান করবে।
অভয়নগর উপজেলার পুড়াখালী গ্রামের নতুন উদ্যোক্তা কুল বাগান মালিক মো. বুলবুল গাজী জানান, গত বছর মাত্র ১ বিঘা জমি লিস/বরগা নিয়ে কুল চাষ করি। গত বছর কুল বিক্রি করেছি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে খরচ হয়েছিল সব মিলে ২৫ হাজার টাকা। এবার ইতিমধ্যে ২ লাখ টাকার কুল বিক্রি করেছি। এখনও ক্ষেতে ৬০/৭০ হাজার টাকার কুল রয়েছে। কুলের জমিতে গোবর সার ও রাসায়নিক সারের সঙ্গে ৪/৫ বার পানি দিতে হয়। পোকার আক্রমণ থেকে বাঁচাতে কুলের ফুল আসার আগেই কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয়।
বুলবুল গাজী আরও বলেন, মাত্র ২৫ হাজার টাকা খরচ করে দুই বছর আগে কুলের বাগান করেছেন। এবার সার, পানি, গোবরসহ সবমিলিয়ে ১০ হাজার টাকা খরচ করেছেন। দুই বছরে সব মিলে প্রায় ৩৫ হাজার টাকা খরচ করেছেন। গত বছর এবং এবছর মিলে মোট প্রায় চার লাখ টাকার বেশি কুল বিক্রি করেছেন। এতে দুই বছরে লাভ পেয়েছেন ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা। তিনি শুধু কুল চাষ করেননি। এর পাশাপাশি ঐ জমিতে শসা, করোলা, মালটাও চাষ করেছেন। কুল বিক্রির সাথে শসা ও করোলা বিক্রি করে এবছর ঐ ১ বিঘা জমিতে ২লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন।
তিনি আরও বলেন, তার সফলতা দেখে এই এলাকা ছাড়াও অন্যান্য গ্রামের চাষিরা নিজ উদ্যোগে কুল বাগান করছেন। তবে তিনি আক্ষেপের সাথে বলেন, মূলধন কম থাকায় আমি বেশি জমিতে চাষ করতে পারছি না। ব্যাংক লোনের জন্য কৃষি কর্মকর্তার চিঠি নিয়ে গেলেও ব্যাংক থেকে কোন লোন পাইনি।
অভয়নগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ গোলাম ছামদানী বলেন, অল্প খরচে বেশি লাভ হওয়ায় কুল চাষে আগ্রহ বেড়েছে। আমরা এ অঞ্চলের কুল চাষিদের সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগিতা করছি।
খুলনা গেজেট/ এস আই