যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে প্রশাসন। দুটি উপজেলার ৩১৯টি কেন্দ্রের বিপরীতে ৭ হাজার ফোর্স নিয়োগ করা হয়েছে। এরমধ্যে পুলিশ ২ হাজার ৯শ’৫০ জন এবং ৪ হাজার আনসার রয়েছে।
নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্পটে অপতৎপরতা রুখে দিতে ১০৭টি মোবাইল টিম কাজ করবে। এছাড়া যে কোনো পরিস্থিতি উত্তরণে এবং তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নিতে বিশেষ নির্দেশনা দিতে ৪ জানুয়ারি পুলিশ লাইন্সে নির্বাচনী ব্রিফিং প্যাারেড অনুষ্ঠিত হয়েছে।
যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নে এক হাজার পাঁচশ’ ৩০ জন প্রার্থীর ভোটযুদ্ধ বুধবার। ইউনিয়ন পরিষদগুলোর এ নির্বাচনে ছয় লাখ সাত হাজার ছয়শ’ ৯৬ জন ভোটার রয়েছেন। পুলিশ ফোর্সের পাশাপাশি ২৬টি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে পাঁচ হাজার তিনশ’ ৪১ কর্মকর্তা। ৩১৯টি কেন্দ্রের এক হাজার ছয়শ’ ৭৪টি কক্ষে ভোটার ও দায়িত্বরতদের নিরাপত্তায় প্রতি কেন্দ্রে ইন্সপেক্টর, এসআই, এএসআই ও কনস্টেবল মিলিয়ে ৮ জনকে করে নিযুক্ত করা হয়েছে।
পঞ্চম ধাপে যশোর সদর উপজেলার ১৫টি ও কেশবপুর উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে বিশেষ দিক নির্দেশনা দিয়ে নির্বাচনী ব্রিফিং প্যারেড হয়েছে পুলিশ লাইন্স মাঠে। ব্রিফিং প্যারেডে সভাপতিত্ব করেন যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ার্দার। উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিএসবি জাহাঙ্গীর আলম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ক-সার্কেল বেলাল হোসাইন, খুলনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গ-সার্কেল রাশেদ হাসান, নড়াইলের সহকারী পুলিশ সুপার অপারেশন এন্ড ক্রাইম জালাল উদ্দিনসহ পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
‘যার ভোট তিনি দেবেন, যাকে খুশি তাকে দেবেন’- এ নিরাপদ পরিবেশ তৈরির উপর জোর দেয়া হয় ব্রিফিং প্যরেডে। নাশকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারীসহ যশোর সদর ও কেশবপুর উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, মহিলা মেম্বর ও পুরুষ মেম্বর প্রার্থীদের উপরও নজরদারি করবে পুলিশ।
বুধবারের নির্বাচনকে ঘিরে বিগত কয়েক সপ্তাহে যশোর ও কেশবপুর উপজেলার ইউনিয়নগুলোতে দল সমর্থিত ও বিদ্রোহীদের মধ্যে হরহামেশাই বাক বিতন্ডা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বড় ধরণের গোলযোগ হয়েছে। সব ইউনিয়নেই নৌকার বিপক্ষে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা। যে কারণে গত কয়েক সপ্তাহে বেশ কয়েকটি নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। ইউনিয়ন পরিষদের চলমান ৫ম ধাপের নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর থেকেই জেলা পুলিশ সতর্ক অবস্থানে থাকলেও প্রার্থী ও সমর্থকরা সবাই আওয়ামী লীগ ও একই ঘরানার হওয়ায় তারা অনেকটা বেপরোয়া স্টাইল চলছে। এরই প্রেক্ষিতে ৪ জানুয়ারি পুলিশ সুপার স্পষ্ট ঘোষণা দিয়েছেন কোনো প্রকার বিশৃঙ্খলা বরদাস্ত করা হবে না। প্রার্থী ভোটার নেতা যিনিই নির্বাচন বিধি উপেক্ষা করবেন তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে যশোর ডিএসবির ডিআই ওয়ান এম, মশিউর রহমান জানিয়েছেন, নির্বাচনী নিরাপত্তায় সরকারি পরিপত্রে প্রতি কেন্দ্রে ৫ জন ফোর্সের কথা থাকলেও সেখানে দেয়া হয়েছে ৮ জন ফোর্স। পুলিশ আনসার মিলিয়ে থাকবে ৭ হাজার ফোর্স। চারস্তরের কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে সিনিয়র অফিসারদের নেতৃত্বে থাকবে বিশেষ টিম, চৌকস অফিসারদের সমন্বয়ে থাকছে স্ট্রাইকিং টিম, মোবাইল টিম।
এছাড়া যশোর সদর উপজেলায় ৮টি এবং কেশবপুরে ৮টি চেকপোস্ট থাকবে। গাড়ি, মোটরসাইকেল চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা হবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনী বিধিমালা মেনে চলার ব্যাপারে কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তিনি বলেন, এ কাজে যশোর জেলা পুলিশের সাথে যোগ দিয়েছেন খুলনা রেঞ্জের কয়েকজন দক্ষ সিনিয়র অফিসার ও নড়াইল পুলিশের উর্ধ্বতনরা। সব মিলিয়ে নিরাপত্তা বলয়ে থাকবে যশোর সদর ও কেশবপুরের নির্বাচনী কেন্দ্রগুলো।