৭ থেকে ৮ বছর যখন তার বয়স তখন থেকে চোখে কম দেখতেন। গরিব বাবার পক্ষে সম্ভব হয়নি চোখের চিকিৎসা আর লেখা পড়ার খরচ একসাথে বহন করা। অদম্য ইচ্ছা থাকলেও পারেননি লেখাপড়া করতে। বয়স যখন তার ১৬ বছর তখন পাইকগাছা উপজেলায় তার বিয়ে হয়। বিয়ের বছর দুইয়ের মধ্যে কন্যা সন্তানের মা হন। প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকা অসুস্থতা, চোখে কম দেখা, কাজ করতে না পারা, তার উপর কন্যা সন্তান। শুরু হয় স্বামীর নির্যাতন। নির্যাতনের এক পর্যায়ে স্বামী তাকে ছেড়ে দেয়। চলে আসেন বাবার বাড়িতে। শুরু হয় তার জীবন সংগ্রাম। গল্পটি বাল্যবিবাহের থাবায় কুড়িতেই ঝরে যাওয়া অসহায় ময়না খাতুনের (২০) ।
অনেক কষ্ট করে জীবন সংগ্রামে টিকে আছেন কয়রা উপজেলা কপোতাক্ষ নদীর তীরে মদিনাবাদ গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ময়না। তিনি বলেন, ‘চোখে ভালো দেখতি পাইনি। এক চোখে কোন রকম দেখতি পাই। একটা সন্তান হলি স্বামী ছেড়ি দিলো। তারপর বাবার বাড়িতে থাকি। খেয়ে না খেয়ে চলে দিন। নদীতে মাছ ধরি তাতেই কোন রকমে চলে। চোখে দেখতি পাইনি তাই রাতির জোয়ারে জাল টানতি পারিনি। দিনের জোয়ারে নদীতে জাল টানি। ছোট্ট মাছ চোখি দেখতি পাইনি তাই মাকে সাথে নিয়ে আসি। মাছ বেছি গুনে দেয়।’
প্রতিদিন কেমন আয় হয় জানতে চাইলে এ প্রতিবেদককে জানান, কোন দিন পঞ্চাশ কোনদিন এক’শ আবার কখনও কখনও দুই’শ থেকে আড়াই শত পোনা ধরতে পারেন তিনি। বাজার দরে প্রতিটা পোনা কোন দিন ৫০ পয়সা ৭০ পয়সা আবার কখনো ১ টাকা করে বিক্রি হয়। এভাবে ৫০ থেকে দেড়’শো টাকা করে আয় করেন তিনি। মাসে ১০ থেকে ১৫ দিন জাল টেনে দেড় থেকে ২ হাজার টাকা আয় হয়। আর বাকি সময় বসে থাকতে হয়।
ময়নার চান তার জীবনের পরিনতি যেন তার সন্তানের জীবনে না আসে। সে জন্য এক মাত্র সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ গড়ে তুলতে চান তিনি।
খুলনা গেজেট/ এস আই