সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ১৩টি ইউপিতে উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের একজন প্রার্থীসহ চেয়ারম্যান পদে মোট ২৮ জন তাদের জামানাত হারিয়েছেন। নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোট ৬৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এদের মধ্যে বৈকারী ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান অসলে মাত্র ১১২৫ ভোট পেয়ে তার জামানাত হারিয়েছেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা ৩টি, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৫টি, বিএনপি ২টি, জামাত ২টি এবং নির্দলীয় স্বতন্ত্র একটিতে নির্বাচিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার ( ১১ নভেম্বর) উৎসবমুখর পরিবেশে ১৩টি ইউনিয়নে ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার পর গণনা শেষে রিটানিং অফিসারদ্বয় বেসরকারী ফলাফল ঘোষণা করেন।
ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী সদর উপজেলার বাঁশদহ ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনয়নে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মফিজুর রহমান (নৌকা) ৫১৩১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী মো: নাজমুল হাসান (মোটর সাইকেল) ৩৩৭০ ভোট পেয়েছেন। এখানে পাঁচ প্রার্থী যথাক্রমে আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক (টেলিফোন) ৩৩৫ ভোট, এ.এইচ.এম কামরুজ্জামান (চশমা) ২০৯৪ ভোট, বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আ’লীগের সভাপতি ও বর্তমান চেয়ারম্যান এসএম মোশাররফ হোসেন (আনারস) ১২০৯ ভোট, মোঃ ময়নুর রহমান (দুটি পাতা) ২৭ ভোট ও জাতীয় পার্টির শেখ শরিফুজ্জান (লাঙ্গল) ১৫৭২ ভোট পেয়েছেন।
কুশখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ১১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে মাওঃ মুহাম্মদ আব্দুল গফফার (টেলিফোন) ৪৭২৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ তাজউল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ২৭৮৭ ভোট। বাকি ৯ প্রার্থীর মধ্যে মোঃ আবুল কালাম আজাদ (ঢোল) ১১ ভোট, মোঃ ইকবাল হোসেন (টেবিলফ্যান) ১৫৯ ভোট, মোঃ কবির উদ্দীন মন্ডল (ঘোড়া) ৭৯ ভোট, মোঃ গোলাম মোস্তফা (অটোরিক্সা) ২৭০৫ ভোট, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা মোঃ মনিরুল ইসলাম (আনারস) ২৫০৯ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোঃ মুনছুর আলী সরদার (লাঙ্গল) ১২৭ ভোট, মোঃ শফিকুল ইসলাম (রজনীগন্ধা) ১৪৬৫ ভোট, ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ সাইফুদ্দীন পলাশ (চশমা) ২৫৬ ভোট ও মোঃ হুমায়ুন কবির (মোটর সাইকেল) ২৮৫ ভোট পেয়েছেন।
লাবসা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এখানে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বর্তমান চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল আলিম (আনারস) ১৭৩৮৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৩৩৭৫ ভোট। এ ইউনিয়েন অপর প্রার্থী মোহাম্মাদ শাহীন হোসেন (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৯৫ ভোট।
বল্লী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে উপজেলা বিএনপির সদস্য এড. মোঃ মহিতুল ইসলাম (আনারস) ৪৫৫৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছে। তার নিকটতম প্রার্থী শেখ হাবিবুর রহমান (চশমা) পেয়েছেন ৪০১১ ভোট। বল্লী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ বজলুর রহমান (নৌকা) ১৭৮৭ ভোট এবং আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোঃ খায়রুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৫৬ ভোট।
আগরদাড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৭ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে মোঃ কবীর হোসেন (টেবিল ফ্যান) ৭৫৫০ ভোট, পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মোঃ মঈনুল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৩৮৮০ ভোট। এ ইউনিয়নে বাকি ৫ প্রার্থী যর্থাক্রমে সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহম্মদ লুৎফর রহমান (ঘোড়া) ৩৬৩৮ ভোট, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মজনুর রহমান (চশমা) পেয়েছেন ৩৫৮৯ ভোট, মো: নুররুল ইসলাম (আনারস) ২২৯ ভোট, শাহিদ (মোটর সাইকেল) ৩৩৬৩ ভোট ও হাবিবুর রহমান (অটোরিক্সা) পেয়েছেন ১০৮৬ ভোট।
ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সমর্থিত বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আজমল উদ্দীন (নৌকা) ১০৬১৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৮৪৫৯ ভোট। এ ইউনিয়নে অপর প্রার্থী আ’লীগের বিদ্রোহী জয়দেব কুমার ঘোষ (আনারস) পেয়েছেন ১৮০৭ ভোট।
ঘোনা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ আব্দুল কাদের (মোটর সাইকেল) ৪৫৯৯ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ ফজলুর রহমান (নৌকা) পেয়েছেন ২৬৫০ ভোট। এ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মোঃ কামরুজ্জামান (আনারস) ৬৯১ ভোট, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীক পেয়ে মোঃ বদরুজ্জামান (লাঙ্গল) ৫৪৩ ভোট ও মোঃ সদর উপজেলার পশ্চিম জামায়াতের সেক্রেটারি মোশাররাফ হোসেন (চশমা) ১৬৮০ ভোট পেয়েছেন।
বৈকারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৩জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী প্রার্থী আবু মোঃ মোস্তফা কামাল (মটর সাইকেল) ১০২৯২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আসাদুজ্জামান (নৌকা) পেয়েছেন ১১২৫ ভোট। এখানে অপর প্রার্থী মোঃ জালাল উদ্দীন (আনারস) পয়েছেন ৬৯১ ভোট।
ভোমরা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে বর্তমান চেয়ারম্যান ইসরাইল গাজী (মোটর সাইকেল) ৬৫৭১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম (নৌকা) পেয়েছেন ৪৭০৮ ভোট। এখানে অপর তিন প্রার্থী যথাক্রামে মোঃ মমিমুল ইসলাম (ঘোড়া) ৮৬ ভোট, মোঃ সামছুল আলম (চশমা) ২০২৮ ভোট ও মোঃ সাহেব আলী (আনারস) ৩৮৪৯ ভোট পেয়েছেন।
শিবপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এখানে আ’লীগের বিদ্রোহী হিসাবে সদর উপজেলা আ’লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাাদক এসএম আবুল কালাম আজাদ (আনারস) ৭৪৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নকিটতম প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত আলী (নৌকা) ৩৮১৭ ভোট। এ ইউনিয়নের অপর প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ ইমাদুল হোসেন (হাতপাখা) ৩৩৬ ভোট পেয়েছেন।
ফিংড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৫জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী মোঃ লুৎফর রহমান (আনারস) ১০১৩৭ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী জামায়াত নেতা মোঃ আজাদুল ইসলাম (চশমা) ৫৩১৯ ভোট পেয়েছেন। এ ইউনিয়নে অপর তিন প্রার্থী যথাক্রামে আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ সামছুর রহমান (নৌকা) ৪৯৫৮ ভোট, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের বেলাল হোসেন (হাতপাখা) ১৮৪ ভোট ও মোঃ সেলিম রেজা গাজী (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ২১৪ ভোট।
ধুলিহর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে মোঃ মিজানুর রহমান চৌধুরী (আনারস) ৮২৫৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী আওয়ামী লীগ মনোনীত বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ মিজানুর রহমান (নৌকা) পেয়েছেন ৭০৯৩ ভোট। এ ইউনিয়নের অপর দুই প্রার্থী মোঃ ফজলুর রহমান (চশমা) ২২২ ভোট ও স. ম. মসিউর রহমান (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৬২২ ভোট।
ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদে ৪জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোঃ আলাউদ্দীন (নৌকা) ৭২৩৫ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রার্থী সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ শহিদুল ইসলাম (আনারস) পেয়েছেন ৩৮৫৪ ভোট। এ ইউনিয়নে অপর দুই প্রার্থী ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মোঃ এবাদুল ইসলাম (হাতপাখা) পেয়েছেন ৪২৯ ভোট এবং থানা বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ নূরুল ইসলাম (মোটর সাইকেল) পেয়েছেন ৩৪২৪ ভোট।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, বৈধ ও বাতিল ভোট মিলে মোট কাস্টিং ভোটের ৮ ভাগের এক ভাগ না পেলে ও প্রার্থীর জামানাত বাজেয়াপ্ত হবে।
খুলনা গেজেট/এএ