সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫০ জন আসামীর মধ্যে পাঁচজনের আপিল আবেদন নামঞ্জুর করে সাতক্ষীরার মুখ্য বিচারিক হাকিম মোঃ হুমায়ুন কবীরের আদেশ বহালের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
রোববার (২৬ সেপ্টেম্বর) সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ শেখ মোঃ মফিজুর রহমান এক জনাকীর্ণ আদালতে এ রায় ঘোষণা করেন।
আপিল বহাল থাকা আসামীরা হলেন, শাহীন রহমান, দিদার মোড়ল, আব্দুল গফফার গাজী, সোহাগ হোসেন ও মাহাফুজ মোল্লা। এ নিয়ে ১৭টি আপিল মামলার ৫টিতে ১৩ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় ধর্ষণের শিকার মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে মাগুরা ফিরে যাবার পথে কলারোয়া বিএনপি অফিসের সামনে বিএনপি নেতা কর্মীদের হামলা শিকার হন। এতে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তার সফরসঙ্গী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, প্রকৌশলী শেখ মুজিবর রহমান, শহিদুল হক জীবন, আবদুল মতিনসহ অনেকেই আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন। এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশি আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন।
পরবর্তীতে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা কলারোয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক শফিকুর রহমান সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০ জন সাক্ষী, চারজন সাফাই সাক্ষী ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলামসহ ৫০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৭ জন কারাগারে ১২ জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে থাকা আসামীরা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মোট ১৭টি আপিল মামলা করেন। জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে আপিলে জামিন না পাওয়ায় ওই আসামীরা মহামান্য হাইকোর্টে গেলে চারটি আপিলে ৮ জন জামিনাদেশ পান।
ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপিল করলে মহামান্য হাইকোর্টের জামিন আদেশ বাতিল করে গত ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই চারটি আপিল মামলা নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা ও দায়রা জজকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় চারটি আপিল মামলায় ইতিমধ্যে আটজনের বিরুদ্ধে আপিল নামঞ্জুর করা হয়। ১৩ সেপ্টেম্বর ৩০নং আপিল মামলার পাঁচজন আসামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ শুনানি হয়। রবিবার ওই পাঁচ আসামীর সাজা বহাল রাখা হয়।
প্রসঙ্গত, কলারায়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে আরো দু’টি মামলার (এসটিসি ২০৭/১৫ ও এসটিসি ২০৮/১৫) নথি উচ্চ আদালত থেকে ফেরৎ না আসায় বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মধ্যে মাহাফুজুর রহমান সাবু কারান্তরীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইতিমধ্যেই মামলার বাদি মোসলেম কমাণ্ডারের মৃত্যু হয়েছে।
খুলনা গেজেট/এনএম