খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ আশ্বিন, ১৪৩১ | ১১ অক্টোবর, ২০২৪

Breaking News

  বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে তিন ধাপ পিছিয়ে ৮৪তম বাংলাদেশ
  দীপ্ত টিভির তামিম হত্যা: ৫ আসামি ৪ দিনের রিমান্ডে

শর্ত ভেঙ্গে খুলনায় রেল লাইনের দু’পাশে পাকা ইমারত তৈরি

একরামুল হোসেন লিপু

লীজের শর্ত ভঙ্গ করে নগরীর খুলনা রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকা থেকে খানজাহান আলী থানার ইষ্টার্নগেট পর্যন্ত রেল লাইনের দু’পাশে পাঁকা ইমারত তৈরি হয়েছে। চোখের সামনে শর্ত ভঙ্গ করে ইমারত গড়ে উঠেলেও অজানা কারণে নেই কোন উল্লেখযোগ্য অভিযান।

সূত্রে জানা যায়, খুলনা রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকা থেকে খানজাহান আলী থানার ইষ্টার্ন গেট পর্যন্ত বাংলাদেশ রেলওয়ের বাণিজ্যিক লাইসেন্স এর সংখ্যা ১ হাজার ৯৬০ টি। এর মধ্যে খুলনা ষ্টেশন এলাকা থেকে জোড়াগেট পর্যন্ত বাণিজ্যিক লাইসেন্সধারীর সংখ্যা ১ হাজার ২১০ জন। জোড়াগেট থেকে ফুলবাড়িগেট পর্যন্ত ৭৫০ জন এবং ফুলবাড়িগেট থেকে ইষ্টার্ন পর্যন্ত লাইসেন্সধারীর সংখ্যা ২০০ জন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ে ভূ-সম্পত্তি ব্যবস্থাপনা নীতিমালা ২০২০ এর ২০ নং ধারায় ব্যবহার অনুযায়ী রেলভূমির শ্রেনী বিন্যাসঃ

(ক) রেলওয়ের অপারেশনাল কাজে ব্যবহৃত ভূমি,
(খ) অদূর ভবিষ্যতে প্রয়োজন লাগবে এরুপ প্রকৃতির ভূমি এবং
(গ) সুদূর ভবিষ্যতে রেলওয়ের প্রয়োজন লাগবে এ রুপ প্রকৃতির ভূমি।

২১ নং ধারায় লাইসেন্সযোগ্য ভূমির একটি নীতিমালা দেওয়া আছে। তা হলো,
(ক) অনুচ্ছেদ ২০ (ক) এ বর্ণিত শ্রেনীর ভূমি কোন অবস্থাতেই লাইসেন্সযোগ্য/হস্তান্তরযোগ্য হবে না।
(খ) অনুচ্ছেদ ২০ (খ) এ বর্ণিত ভূমি একসনা/স্বল্প মেয়াদী লীজ/লাইসেন্স দেয়া যাবে এবং অনুচ্ছেদ ১৯ (গ) এ বর্ণিত শ্রেনীর ভূমি একসনা/স্বল্প মেয়াদী/দীর্ঘ মেয়াদী লাইসেন্স/লীজ দেয়া যাবে তবে এ ক্ষেত্রে লীজ প্রদানের বিষয়ে নিন্মলিখিত বিষয়সমূহ বিবেচনা রাখতে হবে।

১.আগামী ১০০ বছর পর্যন্ত রেলওয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ Trans Asian Railway অন্যান্য আন্তঃদেশীয় আঞ্চলিক/উপ-আঞ্চলিক সলযোগ কাজে প্রয়োজনীয় রেলভূমি সংরক্ষণ করতে হবে।
২. ক্রমবর্ধমান Container Traffic ব্যবস্থাপনার জন্য চাহিদা মোতাবেক প্রয়োজনীয় রেলভূমি সংরক্ষণ করতে হবে।
৩. নতুন রেল লাইন ও উক্ত লাইনের প্রয়োজনে অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ ও সম্প্রসারণের জন্য প্রয়োজনীয় রেলভূমি সংরক্ষণ করতে হবে।

এক সনা লীজ/লাইসেন্স বলতে সম্পূর্ন অস্থায়ী ভিত্তিতে রেলভূমি ব্যবহারের জন্য এক বছর মেয়াদী লীজ/ লাইসেন্সকে বুঝায়।

৪৭ (খ) ধারায় উল্লেখ রয়েছে, একসনা লাইসেন্সভূক্ত প্লটে কাঁচা কিংবা সেমিপাঁকা অবকাঠামো বিভাগীয় ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা/ প্রধান ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তার অনুমোদন ব্যাতিত কোন ক্রমেই নির্মাণ করা যাবে না।

রেলওয়ের নীতিমালার ২৩ নং ধারায় উল্লেখ রয়েছে, বাণিজ্যিক লাইসেন্সযোগ্য বিভাগীয় শহর (প্রশাসনিক বিভাগ) ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার ভূমির মাষ্টার প্লান অনুমোদনঃ

প্রশাসনিক বিভাগীয় শহর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকার রেলভূমি লাইসেন্স প্রদানের নিমিত্তে মাষ্টার প্লান প্রণয়নের ক্ষেত্রে আঞ্চলিক রেলভূমি বরাদ্দ কমিটি কর্তৃক সুপারিশকৃত মাষ্টার প্লান মহাপরিচালক, বাংলাদেশ রেলওয়ের অনুমোদক্রমে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে। অন্যান্য ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মাষ্টারপ্লান অনুমোদন করবেন। মাষ্টার প্লানভূক্ত না করে কোন ভূমি বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য লীজ/ লাইসেন্স দেয়া যাবে।

কিন্ত রেলওয়ের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা/কর্মচারীদের যোগসাজসে উপরোক্ত এসব নীতিমালার প্রতি বৃদ্ধাঙ্গালী দেখিয়ে একসনা লীজ নেওয়া বাণিজ্যিক লাইসেন্সধারীরা স্থায়ী পাঁকা ইমারত নির্মাণ করে ব্যবস্যা বাণিজ্য করছেন। এসব লাইসেন্সধারীদের অধিকাংশ লীজের শর্তানুযায়ী কাঁচা কিংবা সেমিপাঁকা অবকাঠামো নির্মাণের পরিবর্তে একতলা, দুইতলা এবং কোথাও কোথাও তিন তলা পাঁকা ইমারত নির্মাণ করেছেন। যুগ যুগ ধরে এ সব লীজধারীরা স্থায়ী পাঁকা ইমারত নির্মাণ করলেও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ তাঁদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। অবৈধভাবে রেলের জায়গা দখলকারীদের বিরুদ্ধে কদাচিৎ অভিযান পরিচালিত হলেও লীজকৃত বাণিজ্যিক লাইসেন্সধারীদের পাঁকা ইমারত নির্মাণের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানগুলো হয় নামমাত্র।

বাংলাদেশ রেলওয়ে খুলনা ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা কার্যালয়ের কাচারী ১৮ এর ফিল্ড কানুনগো মোঃ মনোয়ারুল ইসলাম খুলনা গেজেটকে বলেন, লীজকৃত বাণিজ্যিক লাইসেন্সধারীদের পাঁকা ইমারত নির্মাণের বিরুদ্ধে একাধিকবার নোটিশ দিয়েছি। কিন্ত বিষয়টিকে তাঁরা গুরুত্ব দেয় না।

অভিযোগ রয়েছে রেলের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীরা প্রতিমাসে এ সব লীজধারীরাদের কাছ থেকে মাসোয়ারা আদায়, অবৈধভাবে রেলের জায়গা ব্যবহারের অনুমতি, বাণিজ্যিক লাইসেন্স করিয়ে দেওয়াসহ নানাভাবে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে লাখ লাখ টাকা আয় করছেন।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!