সাতক্ষীরার কলারোয়ায় তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৫০ জন আসামীর মধ্যে ছয়জনের দায়েরকৃত তিনটি আপীলের রায় আগামিকাল বুধবার। গত ২৬ আগষ্ট উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানী শেষে সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান ৮ সেপ্টেম্বর রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।
আপিলকারী আসামীরা হলেন, অ্যাড. আব্দুস সামাদ, মোঃ গোলাম রসুল, জহুরুল ইসলাম, সাহাবুদ্দিন, কলারোয়ার কয়লা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব ও মনিরুল ইসলাম।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালিন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাতক্ষীরায় মুক্তিযোদ্ধার ধর্ষিতা স্ত্রীকে হাসপাতালে দেখে মাগুরা ফিরে যাবার পথে কলারোয়ায় সন্ত্রাসীদের হামলা শিকার হন। এতে শেখ হাসিনা অক্ষত থাকলেও তার সফরসঙ্গী ফাতেমা জাহান সাথী, জোবায়দুল হক রাসেল, ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবর রহমান, শহিদুল হক জীবন, আবদুল মতিনসহ অনেকেই আহত হন। এ সময় বেশ কয়েকজন সাংবাদিকও হামলার শিকার হন।
এ ঘটনায় কলারোয়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোঃ মোসলেমউদ্দিন ২৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেন। এ মামলা থানায় রেকর্ড না হওয়ায় তিনি নালিশী আদালত সাতক্ষীরায় মামলাটি করেন। পরবর্তীতে এ মামলা খারিজ হয়ে গেলে ২০১৪ সালের ১৫ অক্টোবর ফের মামলাটি পুনরুজ্জীবিত হয়। এসময় তদন্তকারী কর্মকর্তা সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবসহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন। পরবর্তীতে মামলাটি ২০১৭ সালে আবারো উচ্চ আদালতে স্থগিত হয়।
পরবর্তীতে মামলাটির বিচার কার্যক্রম শুরু হলে গত ২৭ জানুয়ারি যুক্তি তর্ক অনুষ্ঠিত হয়। ২০ জন সাক্ষী, চারজন সাফাই সাক্ষী ও মামলার নথি পর্যালোচনা শেষে চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি বৃহষ্পতিবার জেলা বিএনপি’র সাবেক সভাপতি ও সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলামসহ ৫০জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। এর মধ্যে বর্তমানে ৩৬ জন কারাগারে ১৩জন পলাতক রয়েছেন। কারাগারে থাকা আসামীরা মুখ্য বিচারিক হাকিমের আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে মোট ১৬টি আপিল মামলা করেন। এরমধ্যে চার বছর করে সাজাপ্রাপ্ত আসামী অ্যাড. আব্দুস সাত্তারের পক্ষে গত ১৫ ফেবুয়ারি আপিল ২৭/২১, অ্যাড. আব্দুস সামাদের পক্ষে ১৬ ফেব্রুয়ারি আপিল ৩৩/২১, আসামী গোলাম রসুলের পক্ষে ১৪ ফেব্রুয়ারি ২৫/২১ , আসামী জহুরুল ইসলাম, সাহাবুদ্দিন, কয়লা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রকিব ও মনিরুল ইসলামের পক্ষে ৪৩/২১ আপিল মামলা দায়ের করা হয়।
জেলা ও দায়রা জজ আদালত থেকে আপিলে জামিন না পাওয়ায় ওই আসামীরা মহামান্য হাইকোর্টে গেলে জামিনাদেশ পান। ওই আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ লিভ টু আপীল করলে মহামান্য হাইকোর্টের জামিন আদেশ বাতিল করে আগামি ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই চারটি আপিল মামলা নিষ্পত্তির জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা ও দায়রা জজকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আপিল ২৭/২১ মামলার চুড়ান্ত শুনানীর জন্য আগামি ৯ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করা হয়। গত ২৬ আগষ্ট অপর তিনটি মামলার শুনানী শেষে হয় রায় এর জন্য ৮ সেপ্টেম্বব দিন ধার্য করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে আপিল মামলার শুনানী করেন জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ।
আলীলকারিদের পক্ষে শুনানীতে অংশ নেন অ্যাড. আব্দুল মজিদ (২), অ্যাড. মিজানুর রহমান পিণ্টু, অ্যাড. সেলিনা আক্তার শেলি, অ্যাড. মিজানুর রহমান বাপ্পি প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, কলারায়ায় শেখ হাসিনার গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় অস্ত্র ও বিষ্ফোরক দ্রব্য আইনে আরো দু’টি মামলার (এসটিসি ২০৭/১৫ ও এসটিসি ২০৮/১৫) নথি উচ্চ আদালত থেকে ফেরৎ না আসায় বিচার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত আসামীর মধ্যে মাহাফুজুর রহমান সাবু কারান্তরীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। ইতিমধ্যেই মামলার বাদি মোসলেম কমান্ডারের মৃত্যু হয়েছে।
সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ বুধবার তিনটি আপিল মামলার রায় সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন।