খুলনা, বাংলাদেশ | ১০ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২৫ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  কক্সবাজারের টেকনাফ সমুদ্র সৈকতে গোসলে নেমে নিখোঁজ দুই শিক্ষার্থীর মরদেহ উদ্ধার
  সাবেক আইজিপি মামুনের ফের ৩ দিনের রিমান্ড
টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জনজীবন

সাতক্ষীরায় তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের, রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা

রুহুল কুদ্দুস, সাতক্ষীরা

সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে মুষলধারে বৃষ্টির সঙ্গে হালকা ঝড়ো বাতাস বয়ে যাওয়ায় সাতক্ষীরার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মঙ্গলাবার (২৭ জুলাই) থেকে বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) সন্ধ্যা পর্যন্ত টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তলিয়ে গেছে চিংড়ি ঘের, রোপা আমন ক্ষেত ও বীজতলা। বিশেষ করে শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলার অধিকাংশ চিংড়ি ঘের বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। বৃষ্টিতে দুর্ভোগ বেড়েছে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের বানভাসী মানুষের।

এদিকে সাতক্ষীরা পৌরসভার সমস্ত নিচু এলাকাও এখন পানির নিচে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এবং একইসাথে বৃষ্টি না কমায় জলাবদ্ধতার কবলে থাকা এলাকাগুলোতে নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ।

সাতক্ষীরার আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত এই ৬ ঘন্টায় ১২০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। ফলে পথঘাট, ডোবা, নালা পানিতে তলিয়ে গেছে। শহরের কামালনগর, ইটাগাছা, খড়িবিলা, বদ্দিপুর কলোনী, শহরতলীর বকচরা, কাশেমপুর, সরকারপাড়া, আমতলার মোড় পানিতে তলিয়ে রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের কোন পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি শহরের নিম্নাঞ্চলে বাসবাসকারিদের বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি টানতে পারছে না। সদ্য খননকৃত খালের দু’পাড়ের মাটি ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে।

এদিকে গত ২৭ জুলাই বিকেল থেকে বৃহষ্পতিবার বিকেল পর্যন্ত অতিবৃষ্টির ফলে গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যাল্যের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিল সহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানি থই থই করছে। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলির পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া কাঁচা ঘরবাড়ি রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। সবজি ক্ষেত গুলি পানিতে টইটুম্বুর করছে। মানুষের যাতায়াতেও ভোগান্তি বেড়েছে। ঝাউডাঙ্গা, ঘোনা, বৈকারী ও হাড়দ্দহ এলাকায় পানিতে থই থই করছে। আমন ধানের বীজতলা ও নতুন লাগানো ধান পানিতে ডুবে গেছে।

অপরদিকে বৃষ্টির পানিতে সয়লাব হয়ে গেছে দক্ষিণ উপকূলের শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম। সেখানে প্রধান রাস্তার ওপর দিয়েও পানি প্রবাহিত হচ্ছে। আশাশুনি উপজেলা সদর, প্রতাপনগর, শ্রীউলা, আনুলিয়া, খাজরা সহ কয়েকটি ইউনিয়নে বৃষ্টির পানিতে সব মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে কোটি কোটি টাকার চিংড়ি। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে আমন ক্ষেত ও বীজতলা।

আনুলিয়া ইউনিয়নের বিছট গ্রামের চিংড়ি ঘের মালিক নুরুল আলম জানান, টানা বৃষ্টিতে তার ২৫০ বিঘার চিংড়ি ঘেরসহ এই এলাকার প্রায় সব ঘের পানিতে তলিয়ে গেছে। চিংড়ি চাষের পিক মৌসুমে ঘের প্লাবিত হওয়ায় চাষীরা দারুন ভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। ফলে আমার মত সব চিংড়ি চাষিদের এখন মাথায় হাত উঠেছে।

এদিকে তালা উপজেলার ইসলামকাটি, মাগুরা, কুমিরা, খেশরা, তেঁতুলিয়া, ধানদিয়াসহ বিভিন্ন অঞ্চলের সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। কালীগঞ্জের রতনপুর, কালিকাপুর, বিষ্ণুপুর, মথুরেশপুরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার মাছের ঘের, পুকুর ও সবজি ক্ষেত ডুবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দেবহাটার কোমরপুর, পারুলিয়া, সখীপুর ও নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বেশ কিছু এলাকায় পানিতে তলিয়ে গেছে পুকুর ও মাছের ঘের। অনেক এলাকায় বসত ঘরের মধ্যে পানি ঢুকেছে। কলারোয়ার জয়নগর, ধানদিয়া, যুগিখালি, সোনাবাড়িয়া, শ্রীপতিপুর, ব্রজবকসসহ বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে গেছে।

টানা বৃষ্টিতে ভেঙ্গে পড়েছে গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থা। হাঁস মুরগি ও গবাদি পশু নিয়ে মানুষ চরম বিপদে পড়েছে। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের বানভাসি মানুষ। এখনো ঘরে ফিরতে না পারা মানুষের কষ্ট বাড়িয়ে দিয়েছে বৃষ্টি।

প্রতাপনগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ জাকির হোসেন বলেন, দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে তার ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। বেড়িবাঁধ ভাঙ্গনের কারনে নদীর পানি এখনো নিষ্কাশিত না হওয়ায় বৃষ্টিতে পানি আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছে ইউনিয়নের বানভাসি মানুষ। এছাড়া ঝড়ো বাতাসে পল্লী বিদ্যুতের একটি খুটি উপড়ে পড়ায় পুরো ইউনিয়ন বিদ্যুৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে করে মানুষের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। বিষয়টি বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে।

সাতক্ষীরা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী সন্তেষ কুমার সাহা বলেন, আম্পান ও ইয়াসের বন্যায় ডুবে থাকার কারণে প্রতাপনগরের মাটিতে শক্তি কম। গত দুই দিনের ভারী বর্ষণে প্রতাপনগরে খুঁটি উপড়ে পড়েছে। এতে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের ৭ হাজার গ্রাহক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আমাদের লোকজন ওখানে আছে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে কাজ শুরু করতে পারছে না। আশাকরি খুব দ্রুত বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে।

সাতক্ষীরা পৌরসভার ইটাগাছা এলাকার বাসিন্দা আলীনুর খান বাবুল জানান, পৌরসভায় পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণে মানুষ বছরের পর বছর ধরে জলাবদ্ধতায় ভুগছে। গত দুই দিনের টানা বর্ষনে তলিয়ে গেছে পৌরসভার ইটাগাছা, কামাননগর, রসুলপুর, মেহেদিবাগ, মধুমোল্লারডাঙ্গী, বকচরা, সরদারপাড়া, পলাশপোল, পুরাতন সাতক্ষীরা, রাজারবাগান, বদ্দিপুর কলোনি, ঘুটিরডাঙি ও কাটিয়া মাঠপাড়াসহ বিস্তির্ন এলাকা। তিনি আরো জানান, গুটি কয়েক লোক পৌরসভার মধ্যে অপরিকল্পিত মৎস্য ঘের করার কারনে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

সাতক্ষীরা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলফিকার আলী রিপন জানান, আগামী কয়েকদিন এভাবে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরর তথ্য কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান জানান, ভারি বর্ষণে জেলার নিম্ন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে সদ্য রোপা আমন, আউশ বীজ তলার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের জরিপ করে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন করে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, যদি ভারি বর্ষণ থেমে যায়, তাহলে রোপা আমন ও বীজতলার তেমন ক্ষতি হবে না। তারপরও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুতের কাজ চলছে বলে জানান তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল বাছেদ জানান, হঠাৎ ভারি বর্ষণের ফলে জেলার বিভিন্ন উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ায় মারাত্মক কোন ক্ষয়-ক্ষতির খবর আসেনি। এছাড়া অতি বর্ষণজনিত ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপনে কোন নির্দেশনা পাননি তারা।

 

খুলনা গেজেট/এমএইচবি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!