খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৪ মে, ২০২৪

Breaking News

  দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
  মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

সড়কে ঝরছে প্রাণ, থামছে না কান্না

সাগর জাহিদুল

পরিবহন চলাচলে নিয়ম কানুন না মানার কারণে বেড়েই চলেছে সড়ক দুর্ঘটনা। প্রতিদিনই মিডিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার খবর। গত এক মাসে খুলনাসহ বিভাগের ১৭ টি স্পটে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৭ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ শুক্রবার চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে আরও একজনের মৃত্যুর খবর জানা গেছে। এর আগের দুই দিন পৃথক ৪টি দুর্ঘটনায় ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর জন্যই এসব দুর্ঘটনার প্রধান কারণ।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ খুলনার উপ-পরিচালক মো: তানভীর আহমেদ এ প্রতিবেদককে জানান, সড়ক দুর্ঘটনা মূলত: সচেতনতার অভাবে হচ্ছে। অনেক গাড়ির চালক আছেন যাদের গাড়ি চালানোর কোন অভিজ্ঞতা নেই। ফিটনেস নেই অনেক গাড়ির। যা নিয়ে তারা রাস্তায় যাত্রী বহন করছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছেন। প্রতিমাসে দু’বার পরিবহন মালিক ও চালকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নগরীর বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের রাস্তায় চলাচলের জন্য বিভিন্ন সংকেত বোঝার জন্য ক্যাম্পিং করানো হচ্ছে। পথচারীদের রাস্তায় চলাচলের বিভিন্ন সংকেত মেনে চলার জন্য তিনি জনসাধারণকে আহবান করেছেন। এ সকল নিয়ম মানলে সড়কে দুর্ঘটনার সংখ্যা কমতে পারে বলে তিনি আরও জানিয়েছেন।

মহানগর ট্রাফিক বিভাগের ডিসি তাজুল ইসলাম জানান, চালক ও পথচারী কেউ ট্রাফিক আইন মানে না। অতিরিক্ত গতিতে যানবহন চালানো হচ্ছে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ। রাস্তায় চলাচল করেন এমন অনেকেই আছেন যারা সচেতন নয়। এ কারণেই মূলত: তারা দুর্ঘটনার মুখোমুখি হন। নগরীর মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশী শিকার হন মোটরসাইকেল চালকরা। তারা বেপরোয়া গতিতে শহরে দাপিয়ে বেড়ায়। স্পীড গান আছে। বাহনের অতিরিক্ত গতি দেখলেই কার্যকর করা হয়। অনেক মামলাও হয়েছে।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে কেএমপি। মোড়ে মোড়ে পুলিশের তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ও হেলমেট না থাকলে মামলার বিধান রাখা হয়েছে। রাস্তা পারাপারের ক্ষেত্রে সংকেত মানার জন্য মাইকিং -এর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

খুলনার চুকনগর হাইওয়ে থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মেহেদী হাসান সড়ক দুর্ঘটনার জন্য সরাসরি থ্রি-হুইলার ও ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনকে দায়ী করেছেন। চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের বাঁকে কোন স্পীড ব্রেকার নেই। এ কারণে অতিরিক্ত গতিতে বড় যানবাহনগুলো এ রাস্তায় চলাচলে কারণে সড়ক দুর্ঘটনাগুলো হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন। তাছাড়া অনেক সময় চালক ক্লান্ত হয়ে পড়লে সেক্ষেত্রে হেলপার দিয়ে গাড়ি চালান। গাড়ি চালানোর দক্ষতা না থাকায় অনেক সময় দুর্ঘটনা শিকার হন তারা।

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে হাইওয়ে থানা পুলিশ থ্রি-হুইলার ও ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনগুলো আটক করছেন তারা। সচেতনতা বাড়ানোর জন্য মাসে মোটরশ্রমিকদের নিয়ে থানায় আলোচনা করেন। তবে তিনি সার্ভিস লেনের কথা বলেছেন। সার্ভিস লেন থাকলে ধীরগতি সম্পন্ন যানবাহনগুলো নিয়ে কোন সমস্যা হতো না বলে তিনি মনে করেন।

অপরদিকে বাস মলিক সমিতির সাধারণ সম্পাদাক মোল্লা মজিবর রহমান জানান, দেশের সড়ক ব্যবস্থার উন্নয়ন হয়নি। একই রাস্তা দিয়ে সকল পরিবহন চলাচলকে তিনি দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনায় চালক ও পথচারী উভয় দায়ী বলে তিনি স্বীকার করেছেন। সড়ক দুর্ঘটনা রোধে তিনি রাস্তার উন্নয়ন ও দেশের ট্রাফিক বিভাগকে ঢেলে সাজানোর কথা বলেছেন।

নিরাপদ সড়ক চাই খুলনা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক মো: মাহাবুবুর রহমান মুন্না জানান, দেশের সড়ক ব্যবস্থা খুবই নাজুক। দুর্ঘটনা রোধে তিনি সড়ক ব্যবস্থার আধুনিকায়নের কথা বলেন।

গড়াই পরিবহনের নিয়মিত যাত্রী মো: আইয়ুব জানান, আন্ত: জেলা পরিবহনের চালকদের নির্দিষ্ট স্থান পর্যন্ত পৌছানোর জন্য সময় বেঁধে দেওয়া থাকে। ওই সময়ের মধ্যে পৌছাতে না পারলে চালকদের জরিমানার বিধান রয়েছে পরিবহন মালিকদের। এ বিষয়টি মাথায় রেখে অনেক পরিবহন আছে, যাদের চালকরা বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন। তিনি এ ব্যবস্থার পরিবর্তন করার জন্য মালিক পক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

 

খুলনা গেজেট/এএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!