খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
  মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িচাপায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত
  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

দফায় দফায় বৈঠ‌কেও মিল‌ছে না সমাধান, চি‌কিৎসক ধর্মঘ‌টে ভোগা‌ন্তি চর‌মে

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি দলের সাথে চিকিৎসকদের বৈঠক শেষ হয়েছে। বৈঠক শেষে কর্মসূচি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিএমএর সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম। শুক্রবার ‍বিকাল ৩টায় বিএমএ ভবনে এই বৈঠক শুরু হয়, শেষ হয় সন্ধ্যা  ৬টায়।

এদিকে খুলনায় চিকিৎসকের উপর হামলার ঘটনায় তৃতীয় দিনের কর্মবিরতি চলছে। দফায় দফায় বৈঠক করেও কোন সমাধান হয়নি। ফলে অব্যাহত রয়েছে চিকিৎসকদের ধর্মঘট। আর এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রোগীরা। এমনকি হাসপাতালে ভর্তি রোগীরাও প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন তারা। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা না পেয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে রোগীরা। প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা চিকিৎসা নিতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন।

সাতক্ষীরা কলোরোয়া থেকে স্ট্রোক করা রোগি মা সাজেদা বেগমকে (৭০) নিয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এসেছেন আকলিমা বেগম। মা স্ট্রোক করেছিলেন। তার ডায়াবেটিকস, হাইপ্রেসার রয়েছে। গত চারদিন এখানে রয়েছি। এই সময়ে বড় ডাক্তার আসেনি। নার্সরা আসছেন। মা মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চারদিন বসে আছি, আর কয়দিন বসে থাকব জানি না। ঠিকমতো সেবা পেলে মা সুস্থ হয়ে যেতো।

হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন শেখ মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, কালিয়া থেকে ডেলিভারি রোগী নিয়ে খালিশপুর ক্লিনিকে গিয়েছিলাম। সেখানে ডাক্তার না থাকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। এখানে বড় ডাক্তার নেই। নার্সরা দেখাশোনা করছে। ডাক্তার কখন আসবে না আসবে, কি হবে? এ নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে আছি। সাধারণ মানুষের তো ভোগান্তি। আমরা দ্রুত এর অবসান চাই। এবং সাধারণ রোগীরা যাতে চিকিৎসাসেবা পেতে পারে তার আশু কামনা করছি।

খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারি রেজিস্ট্রার ডা. মেহেদী হাসান বলেন, কর্মসূচি চললেও রোগি আমরা দেখছি। গতকালও সিনিয়র চিকিৎসকরা এসে রোগী দেখেছেন। এখানে প্রতিনিয়ত রোগি ভর্তি হচ্ছে। তাদেরতো দেখতে হবে। আমরা সেবার দিকটি খেয়াল রাখছি।

রোগী ভোগান্তির বিষয়ে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. রবিউল হাসান বলেন, প্রত্যেকদিন হাসপাতালে সাধারণত ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ রোগী থাকছে। নরমাললি ১৫ থেকে ২০ জন রোগী প্রত্যেকদিনই মারা যায়। এটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। একসঙ্গে ধর্মঘটের কোন সম্পর্ক নেই। তিনি হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা ও রোগী মৃত্যুর পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ১৪০০ রোগী ছিল। এরমধ্যে মারা গেছে ২০ জন, ২৮ ফেব্রুয়ারি রোগী ছিল ১৩৪৫ জন, ১৭ জন মারা গেছে। আর ১ মার্চ রোগি ছিল ১৪১৮ জন, মারা গেছে ২০ জন। ২ মার্চ রোগী ছিল ১৩১০ জন, ১৬ জন মারা গেছে। এরমানে আমরা দেখছি যে ধারাবাহিকতা একভাবেই আছে। যেমন মারা যায় তেমনই আছে। ধর্মঘটের জন্য বেশি মারা গেছে এমন কোন কথা নয়৷ আর দায়িত্বে অবহেলার জন্য কোন রোগী মারা যায়নি।

তিনি বলেন, আমাদের জরুরি সেবা কিন্তু সবসময় চালু আছে। হাসপাতালের ভিতরের সেবা চালু আছে। ডাক্তাররা সবসময় রাউন্ড দিচ্ছে। বিএমএ খুলনার সাধারণ সম্পাদক ডা. মেহেদী নেওয়াজ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি প্রতিনিধি দল এসেছেন। আমাদের সাথে ও প্রশাসনের সাথে মিটিং করবেন। কিভাবে সমাধান করা যায় সে ব্যাপারে তারা ব্যবস্থা নিবেন বলে আমরা আশা করি। আমরাও চায় না রোগীরা ভোগান্তিতে থাকুক। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।

চিকিৎসকরা জানান, গত ১ মার্চ থেকে কর্মবিরতিডে রয়েছেন তারা। এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরী বিএমএ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এ সময় তিনি রোগীদের দুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে তাদেরকে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের নির্দেশনা দেন। এ ছাড়া বিএমএ’র কেন্দ্রীয় সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন খুলনা বিএমএ নেতাদেরকে ফোন করে একই নির্দেশনা দেন।

এর পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বেলা ১১টায় শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতাল চত্বরে যে বিক্ষোভ সমাবেশ করার কর্মসূচি ছিল তা বাতিল করা হয়। বেলা ১১টায় খুলনা বিএমএ কার্যালয়ে জরুরি সভা করেন চিকিৎসকরা। তবে ঊর্ধ্বতনদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারে নির্দেশ থাকলেও প্রায় ৪ ঘণ্টার সভায় কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

জরুরি সভা শেষে খুলনার বিএমএ সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম বলেন, খুলনার শহীদ শেখ আবু নাসের বিশেষায়িত হাসপাতালের ডা. নিশাত আব্দুল্লাহর ওপর হামলাকারী পুলিশের এএসআই নাঈমকে গ্রেপ্তার এবং দুই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত চিকিৎসকদের কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে।

শনিবার (৪ মার্চ) দুপুর ১২টায় আবু নাসের হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশেরও ডাক দেওয়া হয়। এ ছাড়া ওই দিন সন্ধ্যা ৭টায় বিএমএ কার্যালয়ে সংগঠনের জরুরি সাধারণ সভা করা হবে। ওই সভায় সবার মতামতের ভিত্তিতে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!