খুলনা, বাংলাদেশ | ২৬ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৯ মে, ২০২৪

Breaking News

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস হবে দালালমুক্ত-ডিডি

সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে এক বছরে রাজস্ব আদায় ৮কোটি ২১ লাখ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস থেকে গত এক বছরে ৮কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। এসময় প্রায় ৭০ হাজার গ্রহাককে সেবা দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। কোন প্রকার ভোগান্তি ছাড়াই সেবাপ্রত্যাশী গ্রাহকরা যাতে দ্রুত তাদের কাঙ্খিত সেবা পেতে পারে তার জন্য নানামুখী কার্যক্রম চালু রয়েছে এই পাসপোর্ট অফিসে।

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস সুত্রে জানা যায়, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস থেকে সরকার গত এক বছরে (২০২৩) রাজস্ব আয় করেছে ৮ কোটি ২১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এখানে প্রতিদিন প্রায় ২০০/২৫০ আবেদন জমা পড়ে। প্রতিদিন একই পরিমান পাসপোর্ট ডেলিভারি দেওয়া হয়। করোনা মহামারি শেষ হওয়ার পরপরই এই অফিসে পাসপোর্ট সেবা গ্রহীতাদের ব্যাপক ভীড় ছিল। তখন প্রতিদিন গড়ে ৫শ’র উপরে পাসপোর্ট ফরমের আবেদন জমা হতো। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা অনেক কম। আগের তুলনায় এখন সেবাপ্রত্যাশীরা দ্রুত সেবা পাচ্ছে।

আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধ কমন্ডার বিছট গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোক্তার হোসেন মোড়ল জানান, স্ত্রীকে নিয়ে ওমরা হজ্বে যাওয়ার জন্য সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম পাসপোর্ট করতে। ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে আমাদের পার্সপোর্ট জমা দেয়ার শেষ তারিখ ছিল। অফিসে দায়িত্বে থাকা পাসপোর্ট অফিসারের সহযোগিতায় এক্সপ্রেস সার্ভিসের মাধ্যমে ২৮ জানুয়ারি ফরম জমা দিয়ে ফেব্রুয়ারির ২ পার্সপোর্ট হাতে পাই। সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আন্তরিক সহযোগাতায় এটা সম্ভব হয়েছে। ইতিমধ্যে আমরা স্বামী-স্ত্রী সেীদি আরব থেকে ওমরা হজ্ব পালন করে এসেছি।

সদর উপজেলার ১৩ নং লাবসা ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর ফেরদৌসি ইসলাম মিষ্টি জানান, ১৯৯৭ সাল থেকে এক টানা তিনি উক্ত ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বর। তার দুটি ছেলের কিডনি নষ্ট। ছেলেদের চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাবেন। সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে এসেছিলেন পাসপোর্ট করতে। কিন্তু পুরাতন পাসপোর্টের সাথে বর্তমান ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কিছুটা ভুল থাকার কারণে গত দুই মাস বিভিন্ন জায়গায় ঘুরাঘুরি করে যখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তখন সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের বর্তমান উপপরিচালকের কাছে যাই। তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে আমার পাসপোর্টের ব্যাবস্থা করে দেন। তিনি উপ-পরিচালক মহোদয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন আমি তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। তার আন্তুরিক সহযোগিতার কারণে আমার ছেলে দুটিকে নিয়ে এবার ভারতে নিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবো।

সাতক্ষীরা শহরের মুনজিতপুর এলাকার আমিনুর রহমান আলম জানান, আমার নানা নানি অসুস্থ্য। তাদেরকে নিয়ে আমি পাসপোর্ট অফিসে গিয়েছিলাম। প্রচন্ড ভিড় থাকায় আমি সাহস করে ডিডি সাহেবের রুমে গিয়েছিলাম। তিনি যাওয়ার সাথে সাথে আমার কথা শুনে দ্রুত আমার আমার ফাইলে সই করে দিয়ে বললেন নিচে যেয়ে ছবি তুলে চলে যান দ্রুত পাসপোর্ট পাবেন।

সাতক্ষীরা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, আমি সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে গত ৮ ফেব্রুয়ারি যোগদান করি। সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের প্রধান সমস্যা লোকবল সংকট। এখানে ২২ জন কর্মকর্তা কমচারির স্থলে মাত্র ১০ জন দিয়ে কাজ করাতে হয়। একজন কর্মকর্তাকে দুই তিনজনের কাজ করতে হয়। তারপর ও আমরা সাধ্যমত সেবা দিয়ে যাচ্ছি। যাতে কেউ পাসপোর্ট করতে এসে ভোগাান্তির স্বীকার না হয়। আমরা অর্ধেকের কম লোকবল নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।

তিনি আর বলেন, আমি একটি বিশেষ স্বপ্ন নিয়ে সাতক্ষীরায় এসেছি। সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের একটু আমুল পরিবর্তন আনতে চাই। গত এক মাসে আমি সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসের সেবার মান বৃদ্ধির জন্য পাসপোর্ট অফিসে গুনগত কিছু পরিবর্তন এনেছি। দালালমুক্ত ও কোন কর্মকর্তা কর্মচারি যাতে অনৈতিক সুবিধা না নিতে পারে তার জন্য পুরো পাসপোর্ট অফিস সিসি ক্যামেরা দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে। সপ্তাহে সোমবার থেকে বুধবার সকাল ১০ টা থেকে দুপুর ১ টা গণশুনানির ব্যবস্থা আছে। এছাড়া আবেদন কারিদের ভোগান্তি কমাতে –কিউ (ইলেকট্রনিক কিউ) ইকিউ টোকেন সিলিপ দেওয়া হয়। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা, বয়স্ক ও অসুস্থ্যদের জন্য আলাদা কাউন্টারের মাধ্যমে বিশেষ সেবা দেওয়া হয়। প্রতিবন্ধিদের জন্য হুইল চেয়ারের মাধ্যমে সেবা প্রদান করা হয়। হেল্প ডেস্ক, জবাবদিহি বক্স ও যে কর্মকর্তা কর্মকারি আবেদনকারিদের সর্বোচ্চ সেবা দিতে পারবে মাসে তাদেও পুরস্কারের ব্যবস্থা করা। এছাড়া রয়েছে অসুস্থ্য ও প্রতিবন্ধিদের জন্য কলিংবেলের মাধ্যমে সেবা দেওয়া। নিচ থেকে কলিংবেল চাপতেই সরাসরি নিজে গিয়ে দ্রুত তাকে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।

উপ-পরিচালক মোঃ মেহেদী হাসান বলেন, সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিসে আমি এক মাস যোগদান করেছি। আমি পাসপোর্ট অফিস জিরো টলারেন্স দেখাতে চাই। কোন সেবা প্রত্যাশী যাতে হয়রানির স্বীকার না হয় বা দালালের খপ্পরে না পড়ে তার সর্বোচ্চ খেয়াল রাখা। পাসপোর্ট অফিসকে আমি সর্বোচ্চ সেবার মানদন্ডে নিয়ে যেতে যাই। যে কোন সেবা প্রত্যাশি যখন তখন আমার রুমে এসে সেবা নিতে পারবে। তিনি দালালদের হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, আমি যতদিন থাকবো দলালমুক্ত সাতক্ষীরা পাসপোর্ট অফিস উপহার দিবো। সেজন্য তিনি সাতক্ষীরাবাসির সহযোগিতা কামনা করেছেন।

খুলনা গেজেট/ টিএ




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!