খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  প্রথম ধাপের উপজেলা ভোট শেষ, চলছে গণনা
  উপজেলা নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করেছে জনগণ : রিজভী
  তেঁতুলিয়ার খয়খাটপাড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত

সাতক্ষীরায় প্রধান শিক্ষককে লাঞ্ছিতের প্রতিবাদে শিক্ষার্থীদের ক্লাস বর্জন অব্যাহত, সভাপতির শাস্তির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিহর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, মারধর ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিষ্কার করার প্রতিবাদে এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতির শাস্তি ও বিচারের দাবিতে দু’দিন ধরে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা। তারা ক্লাসে না গিয়ে সভাপতির বিচারের দাবিতে সোমবার (২২ আগষ্ট) সকাল থেকে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন ও সভাপতির কুশপুত্তলিকা দাহ করে।

নিয়ম বহির্ভূতভাবে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে মারধর ও বহিষ্কার প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার সকাল থেকে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ধুলিয়র আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সোমবারও কোনো শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের ক্লাসে উপস্থিত হয়নি। নতুন করে আন্দোলনে যুক্ত হয়েছে সাবেক শিক্ষার্থীরাও। তারা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতির শাস্তি ও বিচারের দাবিতে বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বিক্ষোভ মিছিল শেষে মানববন্ধন করে। এসময় বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এসএম মাহাবুবুর রহমানের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। একই সাথে তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ট পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে প্রধান শিক্ষকের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহারের দাবী জানায়।

বিদ্যালয়ের একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এসএমসি কমিটির নির্বাচনে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম কোনো পক্ষ অবলম্বন না করায় প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পরিষদের সভাপতি এস,এম মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে মনোমালিন্য সৃষ্টি হয় তার। এক পর্যায়ে সভাপতি তার নিজের লোকজন দিয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ আনেন। কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই শনিবার (২০ আগস্ট) সকালে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে দু’মাসের জন্য বহিষ্কার করেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি মাহাবুবর রহমান। এ সময় জোরপূর্বক গলাধাক্কা দিয়ে প্রধান শিক্ষককে মারধর করে তার রুম থেকে টেনে হেঁচড়ে বের করে দেন তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির একাধিক সহকারী শিক্ষকসহ ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীরা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে যেসকল অভিযোগ এনে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে সেগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে। পূর্ব শত্রুতার কারণে প্রধান শিক্ষককে সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে দীর্ঘদিন ধরে ষড়যন্ত্র করতে থাকেন সদ্য নির্বাচিত বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মাহাবুবর রহমান। এরই অংশ হিসেবে প্রধান শিক্ষককে নিয়ম বহির্ভূতভাবে বহিষ্কারের পাশাপাশি তাকে মারধর করেন প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি।

প্রধান শিক্ষককে মারধর প্রসঙ্গে তারা বলেন, বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক যদি দুর্নীতিগ্রস্ত হয় তাহলে তার জন্য দেশে প্রচলিত আইন রয়েছে। কিন্তু আইনের ঊর্ধ্বে গিয়ে একজন শিক্ষককে মারধর করার পাশাপাশি গলা ধাক্কা দিয়ে অফিস রুম থেকে বের করাটা সভাপতির ঠিক হয়নি। তাছাড়া বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভায় সবার সর্বসম্মতিক্রমে প্রধান শিক্ষককে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়। কিন্তু ওই মাসিক সভায় এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। সভাপতি তার একক ক্ষমতাবলে এসব করেছেন বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ ব্যাপারে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ সাজিয়ে কোনো প্রকার তদন্ত ছাড়াই প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালামকে মারধরসহ তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে তারা ক্লাস বর্জন করে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। এসময় প্রধান শিক্ষককে স্বপদে বহাল রেখে স্কুল কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমানকে বহিষ্কার করলে তারা আবার শ্রেণিকক্ষে ফিরবে বলে জানায়।

এ ব্যাপারে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুস সালাম জানান, আমাকে শনিবার স্কুল কমিটির সভাপতি মাহবুবুর রহমান গায়ে হাত তুলে লাঞ্ছিত করেন। আমার বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষার্থীদের কাছে বই বিক্রি ও স্কুল ফান্ডের টাকা উত্তোলনের মিথ্যে অভিযোগ সাজিয়ে কোনো তদন্ত ছাড়াই আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। পরে স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানতে পেরে রোববার সকাল থেকে ক্লাস বর্জন করে আন্দোলন করছে। আমি তাদেরকে ক্লাসে যাওয়ার কথা বলেছি কিন্তু তারা সেটা না করে আন্দোলন করছে। আজ সোমবারও দ্বিতীয় দিনের মত তারা অন্দোলন অব্যহত রেখেছে।

এসব বিষয়ে অভিযুক্ত সভাপতি মাহাবুবর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ব্যবহৃত নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ্ আল মামুন বলেন, এ বিষয়ে খোজঁ খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, এটি দুঃখজনক। খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খুলনা গেজেট/এইচআরডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!