খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
  মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িচাপায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত
  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

সরোজ মুখার্জি স্মরণে

ড. বিশ্বম্ভর মণ্ডল

পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার বাহাদুরপুর গ্রামে সরোজ মুখার্জি জন্মগ্রহণ করেন। স্কুলের ছাত্রাবস্থাতেই তিনি বিপ্লবী যুগান্তর দলের সংস্পর্শে আসেন । ১৯২১ সালের অসহযোগ আন্দোলনে অংশ নেওয়া, বালগঙ্গাধর তিলক এর মৃত্যুতে বর্ধমান শহরে আয়োজিত মিছিলে হাঁটা, ১৯২৪ সালে বর্ধমানের টাউন হল ময়দানে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের জনসভায় যাওয়া– এই ভাবেই গুটি গুটি পায়ে স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসাবে জীবন শুরু করেন । এরই সাথে চলছিল দলবেঁধে বিপদে-আপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর সাধ্যমত চেষ্টা। গরীব অংশের মানুষের সাথে থাকতে থাকতে তাঁদের সমস্যা সম্পর্কে তাঁর মনে সম্যক ধারণা তৈরি হয়ে যায়।

১৯২৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসুর সভাপতিত্বে হুগলী জেলাতে যে ছাত্র সম্মেলন হয়, সেখানে তিনি প্রতিনিধি হিসেবে পূর্ণ স্বাধীনতার পক্ষে জোরালো বক্তব্য রাখেন । শ্রীরামপুর কলেজে পড়ার সময় কংগ্রেসের আন্দোলনের সাথে আরো বেশী বেশী করে যুক্ত হতে শুরু করেন । গান্ধীজীর ডাকে লবণ সত্যাগ্রহ আন্দোলনে অংশ নেন। ব্রিটিশ পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে । সামনে বিএসসির ফাইনাল পরীক্ষা । হতোদ্যম হন নি। জেলে বসে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে পারবেন না বুঝে বি.এ পরীক্ষা দেন । ডিস্টিংশন নিয়ে পাশ করেছিলেন। ইতিমধ্যেই ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত, বঙ্কিম মুখার্জি, মুজাফফর আহমেদ, আব্দুল হালিম, সোমনাথ লাহিড়ীর সঙ্গে পরিচয় হয়ে যায়। যোগদান করেন কমিউনিস্ট পার্টিতে ১৯৩১ সালে। দেশের জন্যে লড়তে গিয়ে ব্রিটিশ আমলে ৬ বছর, স্বাধীন ভারতে ৫ বছর জেলে কাটিয়েছেন। এছাড়াও আরো ৫ বছর আত্মগোপনে থেকে কাজ করেছেন।

প্রবাদপ্রতিম স্বাধীনতা সংগ্রামী সুধাংশু দাশগুপ্তের মৃত্যুর পর জ্যোতি বসু লিখেছিলেন, “মার্কসবাদের তত্ত্ব গভীরভাবে আত্মস্থ করেছিলেন বলেই তিনি পার্টির সংকটের মুহূর্তে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন নি।” সরোজ মুখার্জির ক্ষেত্রেও জ্যোতি বসুর এই কথাগুলো সমান ভাবে প্রযোজ্য । ১৯৩৪ সালে ‘মাসিক গণশক্তি’র সম্পাদক হিসেবে, ১৯৫৬-৬২ ‘দৈনিক স্বাধীনতা’র সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব সামলেছেন । ১৯৬৪ সালে ‘সাপ্তাহিক গণশক্তি’র সম্পাদক হন। ১৯৬৭-৮৩ পর্যন্ত প্রথমে সান্ধ্য ও পরে প্রভাতী দৈনিক ‘গনশক্তি’র সম্পাদক, ১৯৮৩ থেকে মৃত্যুর দিন পর্যন্ত গণশক্তির প্রধান সম্পাদক ছিলেন। তাঁর মতে, “পার্টি পত্রিকা ব্যতিরেকে পার্টি শক্ত ভিতের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে পারে না, জনগণের মধ্যে পার্টির প্রভাব বিস্তার দুর্বল হয়ে পড়ে, পার্টি সংগঠন শক্তিশালী হয় না । পার্টি সংগঠন শক্তিশালী করতে, পার্টির রাজনৈতিক বক্তব্য জনগণের মধ্যে বেশি বেশি করে নিয়ে যাওয়ার জন্য পার্টি পত্রিকা জনগণের মধ্যে বেশি বেশি করে প্রচারের মূল শক্তি হলো পার্টি সংগঠন “। তাঁর লেখা বইগুলি হল(১)ট্রেড ইউনিয়নের গোড়ার কথা (২) ১৯০৫ সালের রুশ বিপ্লব (৩) স্বাধীনতার যুদ্ধে রংপুর (৪) ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের নতুন ধারা (৫) তিনটি দশক (৬) দুই পথিকৃৎ, (৭) দুইটি স্মরণীয় দিন (৮)রাজনীতি ও সাংবাদিকতা (৯) দুই খণ্ডে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি ও আমরা । এছাড়াও অজস্র প্রবন্ধ লিখেছেন পার্টির নানা পত্রপত্রিকায় ।

“কমিউনিস্ট মতাদর্শের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা এবং সব রকম বিচ্যুতির বিরুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম, পার্টি গড়ার জন্য প্রয়োজনীয় সাংগঠনিক দক্ষতা, সব রকম মানুষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে মেশার ক্ষমতা এবং মানুষের প্রতি অপরিসীম মমত্ববোধ – আদর্শের জন্য সবরকম দুঃখ-কষ্ট, নির্যাতন হাসিমুখে বরণ করে নেওয়া প্রভৃতি একজন প্রকৃত কমিউনিস্ট হওয়ার জন্য যেসব গুণাবলী দরকার তা সবই সরোজ মুখার্জির মধ্যে যথেষ্ট পরিমানে ছিল”- এই ছিল তাঁর সম্পর্কে আর এক স্বাধীনতা সংগ্রামী ও পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মন্ত্রী বিনয় চৌধুরীর মূল্যায়ন ।

১৯৩১ সালে দমদম জেলে এক বছরের কারাবন্দী জীবনে নিয়মিত যোগ দিতেন বঙ্কিম মুখার্জির নেওয়া পার্টি ক্লাসে। ১৯৩৫-৩৬ সাল নাগাদ বিভিন্ন জেল ও বন্দিশিবিরে কমিউনিস্ট কনসলিডেশন গড়ে ওঠে । এই কাজে আব্দুল হালিম ও সরোজ মুখার্জীর অবদান সবথেকে বেশী । জেলের ভেতরে পার্টির নানা দলিল ও কাগজপত্র এরাই প্রধানত সরবরাহের ব্যবস্থা করেছিলেন। শেষ করব বিনয় চৌধুরীর কথা দিয়ে যা আজো সমানভাবে প্রাসঙ্গিক – ” বর্তমান জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জটিল ও কঠিন পরিস্থিতিতে আমরা যদি তার জীবন থেকে কমিউনিস্ট সুলভ গুণগুলো আয়ত্ত করতে পারি এবং পার্টি গঠনের কাজে, গণ সংগ্রাম গড়ে তোলার কাজে তা সফলতার সাথে প্রয়োগ করতে পারি – তবেই আমরা সরোজ মুখার্জির অসমাপ্ত কাজকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।”

লেখকঃ সহকারী অধ্যাপক, কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়, পশ্চিমবঙ্গ

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!