খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

পাকিস্তানে এবারেও কী জনমত বিফলে যাবে!

গৌরাঙ্গ নন্দী

৭৬ বছর বয়সী পাকিস্তানে সদ্য-অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের ফলাফল আমরা সকলেই জানি। এই নির্বাচনে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধেই জনতা তাদের মতামত দিয়েছে। ১৯৭০এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংখ্যক আসনে জয়লাভ করেছিল, যা তখনকার পশ্চিম পাকিস্তানী নেতৃত্ব এবং তাদের সেনাবাহিনী চায়নি। যার ফল হিসেবে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আজকের বাংলাদেশ-এর জন্ম।

২০২৪ এও পাকিস্তানের নির্বাচনে সেখানকার সেনাবাহিনী এবং সেনা-আস্থাভাজন নেতৃত্ব চায়নি যে, একসময়ের ডাকসাইটে ক্রিকেট খেলোয়াড়-ক্যাপ্টেন ইমরান খানের রাজনৈতিক দল আবারও জয়লাভ করুক। যে কারণে ইমরান খানের পিটিআই এবং দলটির প্রতীক নিষিদ্ধ করা ছাড়াও, ইমরান খানসহ দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে নির্বাচনের অযোগ্য ঘোষণা করেছিল। পিটিআই সমর্থিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়। তাদের প্রচার-প্রচারণা চালাতেও বাধা-নিষেধ আরোপ করা হয়। যে কারণে প্রার্থীরা এআই (আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলেজিন্স) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ করে প্রচারণা চালায়। বিজয় দাবি এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানিয়ে ইমরান খানের প্রচারিত বক্তব্যটিও যে এআই দ্বারা সৃষ্ট তাও সামনে এসেছে। যা হোক, পাকিস্তানের ইতিহাসে সেনাবাহিনীর উপর কখনওই রাজনীতিকদের শ্রেষ্ঠত্ব-কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়নি।

উনিশশ’ একাত্তরেও রাজনীতিক-সেনাবাহিনী মিলে-মিশে পূর্ব-পাকিস্তানের উপর নিপীড়ন চালিয়েছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনও পাকিস্তানী সেনাবাহিনী ও তাদের আস্থাভাজন রাজনীতিকরা মিলে-মিশে পরিচালনা করেছে। সেনাবাহিনীর আস্থাভাজন হওয়ায় নেওয়াজ শরীফকে নির্বাসন থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। সেনাবাহিনীর আশীর্বাদ পেয়ে নেওয়াজ ধরে নিয়েছিলেন যে, তিনি-ই দেশটির প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন। আর সেনাবাহিনীর আস্থাভাজন হয়ে ক্ষমতায় এসে সেনাবাহিনীর ‍বিরুদ্ধাচরণ করায় ক্ষমতাচ্যুত এবং পরে শতাধিক মামলা ও সাজাপ্রাপ্ত ইমরান খানকে রাজনীতির দৃশ্যপট থেকে হঠিয়ে দেওয়ার সকল ধরণের পদক্ষেপ নেয়। কিন্তু ইমরানের সেনা বিরোধী মনোভাব এবং পাকিস্তানবাসীকে জেগে ওঠার আহ্বান পাকিস্তানীদের মধ্যে অভূতপূর্ব জাগরণ তৈরি করে। যার ফল হিসেবে নির্বাচনে পিটিআই সমর্থিত ৯৩ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছে। আর নওয়াজ এবং ভুট্টোর দল যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ ৭৫ ও ৫৪টি আসনে জয়লাভ করেছে। তবে দু’দল মিলে সরকার গঠনের মত প্রয়োজনীয় সংখ্যক – ১৩৪টি আসনে জয়লাভ করেনি। নওয়াজ ও ভু্ট্টোর দলের কোয়ালিশন সরকার গঠনের আলোচনায় পিপিপি বিলাওয়াল ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি জানিয়েছে।

হয়তো তারা ভাবছে, স্বতন্ত্র পাঁচজন প্রার্থীর সমর্থন তারা জোগাড় করতে পারবে। এতে পরিস্কার, নেওয়াজের আর প্রধানমন্ত্রী হওয়া হচ্ছে না। এদিকে, সেনাপ্রধান মঞ্চে হাজির হয়েছেন। তিনি সকল দলের ঐক্য সরকার গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন। এর উদ্দেশ্য পরিস্কার যে, পিটিআই সমর্থক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যদের সেনাবাহিনী সরকারের বাইরে রাখতে চায়। তাহলে পিটিআই সমর্থকরা কী বিরোধী দল হবে? কী হবে, তা হয়তো সময়ই বলে দেবে; তবে একটি বিষয় পরিস্কার, তা হচ্ছে, ইমরান ও তার সমর্থকদেরকে সেনাবাহিনী ও পাকিস্তানী ভূ-স্বামী – অতি-ধনীদের গোষ্ঠী ক্ষমতা-বলয়ের কাছাকাছি আসতে দিতে চায় না। এখন ইমরান সমর্থক সংসদ সদস্য এবং তাদের সমর্থক – জনতা কী করবে, তা দেখার বিষয়! তারা কী অতি সহজে সেনা ও সেনা-তুষ্টকারী রাজনীতিকদের মেনে নেবে; না-কি, তাদের বিরুদ্ধে গণ-আন্দোলন গড়ে তুলবে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। (ফেসবুক ওয়াল থেকে)

খুলনা গেজেট/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!