খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

সড়ক দুর্ঘটনা : গাড়ির লাইসেন্স ব্যবস্থা ও খুলনা সওজ এর নিরাপদ সাইন

একরামুল হোসেন লিপু

একটি গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষার জন্য ৪১টি আইটেম পরীক্ষা করতে হয়। ক্ষেত্রবিশেষ মালিক আর গাড়ি দেখে বিআরটিএর পরিদর্শক ফিটনেস সার্টিফিকেট দিয়ে থাকেন। এ ধরনের কাজ করা হলে কখনই নিরাপদ সড়ক পাওয়া যাবে না। ফিটনেস দেওয়ার বর্তমান প্রক্রিয়া বিজ্ঞানভিত্তিক নয় মন্তব্য করে তা সংস্কারের দাবি জানিয়েছেন অনেকেই।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের উদাহরণ টেনে বলা যায়, গাড়ির ফিটনেস দেবে সরকার, কিন্তু টেস্টগুলো করবে বেসরকারি কোম্পানি। সরকার ও বিআরটিএ নজরদারির ভূমিকায় থাকবে। সড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে সেফটি অডিট চালু হয়নি। দুই স্তরের সড়ক নির্মাণ করা হলে কম গতি ও বেশি গতির গাড়ি আলাদাভাবে চলতে পারবে। এতে দুর্ঘটনা কমে আসবে। এছাড়া মহাসড়কের পাশের ভূমির নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে সরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করাও খুবই জরুরি।

সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিল ক্রমান্বয়ে বেড়েই চলেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিবছর আর্থিক ক্ষতি প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা বাড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে ক্যান্সারের সেলের মতো এই যানের সংখ্যা বাড়ছে। মোটরসাইকেল চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। দেশে বর্তমানে আনুমানিক ৩৫ লাখের উপরে মোটরসাইকেল রয়েছে।

মোটরযান আইনে গতিসীমা নির্ধারণ করে দেওয়া থাকলেও অধিকাংশ চালকই এ নিয়ম মানেন না। মহাসড়ক, শহর ও লোকালয়ের জন্য আলাদা গতিসীমা রয়েছে। মহাসড়কে বাস, কোচ ও পিকআপের সর্বোচ্চ গতিসীমা ঘণ্টায় ৫৫ কিলোমিটার। ভারী ট্রাক, লরির গতিবেগ ৫০ কিলোমিটার। ট্রাক্টর ও অন্যান্য ভারী যানবাহনের সর্বোচ্চ গতিসীমা ৩০ কিলোমিটার। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণ দেখানো হয়েছে ৩৭.৩৮ শতাংশ। পথচারীদের ভুলের কারণে মৃত্যু হয় ৩.৫৬ শতাংশ এবং অন্যান্য কারণে ৫.৭৮ শতাংশ।

বিশ্বব্যাংকের জরিপে নিহতের সংখ্যা বছরে প্রায় ১২ হাজার। কিন্তু বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে এ সংখ্যা ১৮ হাজার। বিশ্বব্যাংকের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় অর্থনৈতিক ক্ষতি জিডিপির ১ থেকে ২ শতাংশ। দেড় শতাংশ ধরলেও প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা। বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক মোঃ হাদিউজ্জামান গতবছর ঢাকার একটি অনুষ্ঠানে বলেছিলেন “২০২০-২০২১ সালে সড়ক দুর্ঘটনায় ৭০ হাজার কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। যা দিয়ে দুইটি পদ্মা সেতু নির্মাণ করা যায়।”

আইনের যথাযথ প্রয়োগ বা বাস্তবায়ন না করার কারণেই প্রতিনিয়ত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব বিষয় নিয়ে পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, মানববন্ধন, আন্দোলন, মিছিল-মিটিং কম হয়নি বা হচ্ছে না। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। গাড়ির লাইসেন্স এবং চালকের লাইসেন্স দেওয়ার প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ যথাযথ হয় না বা হচ্ছে না। মোটর ভেহিকেল অর্ডিন্যান্স ১৯৮৩ অনুযায়ী একজন চালককে লাইসেন্স দেওয়ার আগে মহাসড়কে তার ৩৫ মিনিটের গাড়ি চালানোর পরীক্ষা ও তাত্ত্বিক পরীক্ষা নেওয়ার বিধান থাকলেও এখন তা কতটুকু পালিত হচ্ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

দেশে সারা বছর যত সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে এর ৩৫ শতাংশ ঘটে জাতীয় মহাসড়কের ৪ ভাগ এলাকায়। মহাসড়কের ২০৯টি স্থানকে অতি দুর্ঘটনাপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করে এগুলোকে ‘ব্লাকস্পট’ নাম দিয়েছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউট (এআরআই)। এসব ব্লাকস্পটের তালিকা ২০০৯ সালেই যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে দেওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সময় করা গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনেও বলা হয়ে থাকে, দেশে সড়ক দুর্ঘটনার বড় কারণ প্রশিক্ষিত গাড়িচালকের অভাব। গাড়িচালকদের বেশিরভাগের কাছে নেই বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স। অবৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স জব্দ করাসহ বিভিন্ন সুপারিশ করেছে সংস্থাটি। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের উদ্ধার ও দ্রুত চিকিৎসা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। মহাসড়কের পাশে কয়েকটি ট্রমা সেন্টার নির্মিত হলেও এগুলো আহতদের যথাযথ সেবা দিতে পারছে না। ফলে মফস্বল এলাকা থেকে বড় শহর বা রাজধানীতে যাওয়ার পথেই আহত অনেকের প্রাণহানি ঘটছে। অভিযুক্ত আসামিদের ৮৩ ভাগ সড়ক দুর্ঘটনার মামলায় জড়িত চালকদের শনাক্ত করা এখন সহজ হয়ে এলেও আসামি গ্রেফতারের হার বাড়েনি।

নিরাপদ সড়কের অগ্রদূত ও (নিসচা’র) চেয়ারম্যান মোঃ ইলিয়াস কাঞ্চন এর মতে সড়ক দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে : চালকদের লাইসেন্স তৈরীর প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি, গণপরিবহনের দায়িত্ব নিয়ে যেতে থাকা ব্যক্তিদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাব, ট্রাফিক আইনের প্রয়োগ বাস্তবায়নে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের উদাসীনতা, বিপদজ্জনক ড্রাইভিংয়ের উপযুক্ত শাস্তির বিধান না থাকা।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর জাতীয় মহাসড়কে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ বাড়বে বিষয়টি মাথায় রেখে খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) গাড়িচালকদের নিরাপদে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানোর লক্ষ্যে খুলনার ২টি জাতীয় মহাসড়ক খুলনা- যশোর মহাসড়ক এবং খুলনা বাইপাস মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে স্থাপন করেছে তথ্য, নির্দেশনা ও নিরাপত্তামূলক সাইন। এসকল তথ্য, নিরাপত্তা ও নির্দেশনা মূলক সাইনের মাধ্যমে একজন চালক খুব সহজেই নিরাপদে তার গন্তব্যে পৌঁছাতে সক্ষম হবেন।

নিরাপদ সড়ক তহবিলের আওতায় খুলনা এবং বাগেরহাট জেলার জাতীয় মহাসড়ক গুলিতে এ জাতীয় তথ্য, নিরাপত্তা ও নির্দেশনা মূলক সাইন স্থাপন করা হয়েছে বলে খুলনা গেজেট কে বলেন, খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান পাটোয়ারী।

খুলনা গেজেট/এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!