খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধ পানের গুরুত্ব

ডা. হিমেল ঘোষ

শিশুর জন্য মায়ের বুকের দুধ সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে এক অমূল্য উপহার স্বরূপ। যেকোনো কিছুর বিনিময়েই মাতৃদুগ্ধের কোনো বিকল্প আদতে পাওয়া সম্ভব নয়। যেমন কৌটাজাত কিংবা গরুর দুধ কখনোই মায়ের বুকের দুধের বিকল্প হতে পারে না। ছোট শিশু এবং নবজাতকের জন্য মায়ের দুধই আদর্শ খাদ্য।

শিশুর জন্য মাতৃদুগ্ধ পানের গুরুত্ব সম্পর্কে সকলকে সচেতন করার নিমিত্তে পৃথিবীর প্রায় ১২০ টি দেশে প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ১ আগস্ট থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত বিশ্ব মাতৃদুগ্ধ সপ্তাহ হিসাবে পালিত হতে যাচ্ছে। মাতৃদুগ্ধ কেবল শিশুর পুষ্টির উৎসই নয়। এটি শিশুর স্বাস্থ্যের পক্ষে যেমন প্রয়োজনীয়, তেমনই মায়ের শরীরের পক্ষেও সমান উপকারী। জন্মের পর থেকে প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধু মায়ের বুকের দুধই খাওয়ানো উচিত। এ সময়ে এমনকি এক ফোঁটা পানিও শিশুকে পান করানোর প্রয়োজন নেই। শিশুর বয়স ছয় মাস পার হলে মায়ের দুধের পরিপূরক হিসেবে মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার দিতে হবে।

শিশু জন্মের কিছুক্ষণ পর মায়ের বুকে যে হলদেটে রঙের দুধ আসে তাকে শাল দুধ বলা হয়। এর পরিমাণ কম হলেও এটি শিশুর জন্য যথেষ্ট পুষ্টিকর ও নানা রোগ প্রতিরোধের জন্য কার্যকর ওষুধ হিসাবে কাজ করে। তাই কোনো অবস্থায়ই এই শালদুধ শিশুকে পান করানো থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। শিশু জন্মের কয়েক দিনের মধ্যেই শাল দুধ শেষ হয়ে স্বাভাবিক দুধ আসতে শুরু করে।

মাতৃদুগ্ধ শিশুর সাথে মায়ের বন্ধন দৃঢ় করে। পাশাপাশি বাচ্চার পরিপূর্ণ বৃদ্ধি-বিকাশের জন্য মাতৃদুগ্ধ হল সম্পূর্ণ খাদ্য। মাতৃদুগ্ধ একাধারে ক্যালোরি, প্রায় সকল ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন ও পানির প্রয়োজনীয়তা পূরণ করে। এটি সহজপাচ্য। শিশুর হজমশক্তি বৃদ্ধি এবং মানসিক বিকাশেও মাতৃদুগ্ধ অতুলনীয়। এছাড়া মাতৃদুগ্ধের মাঝে বিদ্যমান অ্যান্টিবডি বাচ্চার রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতির সাথে তাকে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকেও রক্ষা করে। মাতৃদুগ্ধ পানে শিশুদের হাড় তথা কঙ্কালের গঠন দৃঢ় ও মজবুত হয়। তাছাড়া ভেজাল, রাসায়নিকের সংযুক্তি কিংবা প্রিজারভেটিভের ভয় না থাকার দরুন মায়ের দুধ শিশুর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ। মায়ের দুধ পান শিশু মৃত্যুর হার এবং ভবিষ্যত জীবনে শিশুর ক্যান্সার, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি জটিল রোগ হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশেই কমিয়ে দেয়।

মাতৃদুগ্ধ পান করালে মায়ের জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেকাংশেই হ্রাস পায় এবং গর্ভকালীন সময়ে মায়ের শরীরের বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ওজন গর্ভপরবর্তী কালে হ্রাসকরণেও সাহায্য করে। প্রাকৃতিক গর্ভনিরোধকের পাশাপাশি মায়ের শরীরের হাড়ক্ষয় রোধ করতেও স্তন্যদান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সঠিক নিয়মে শিশুকে পর্যাপ্ত সময় পর্যন্ত স্তন্যদান একটি বুদ্ধিদীপ্ত ও সুস্থ জাতি গঠনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব রাখে। যদি মনে হয় শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাচ্ছে না বা মাতৃদুগ্ধ কম উৎপাদন হচ্ছে কিংবা স্তনে কোনো প্রদাহ বা ব্যথা অনুভূত হচ্ছে, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত। মায়ের দেহে কিছু কিছু সংক্রমণ যেমন এইচঅাইভি, সাইটোমেগালোভাইরাস, স্ট্যাফাইলোকক্কাস ইত্যাদি জনিত কারণে কখনো কখনো মা কে বুকের দুধ খাওয়ানো থেকে বিরত থাকা কিংবা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণেরও প্রয়োজন পড়তে পারে।

এমবিবিএস (ঢাকা মেডিকেল কলেজ), বিসিএস(স্বাস্থ্য),
মেডিকেল অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র, ডুমুরিয়া, খুলনা।

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!