খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  তেঁতুলিয়ার খয়খাটপাড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত
  প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু, চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত
চালনা পৌরসভা

শহররক্ষা বাঁধ ঘিরেই আক্ষেপ নিয়ে বসবাস

আজিজুর রহমান

‘ভোটের সময় আসলে সবাই ভোট চায়, আর কত যে প্রতিশ্রুতি দেন তা বলে বোঝানো যাবে না। ভোট শেষ হলে পরে আর কেউ ফিরে তাকায় না।’ এই আক্ষেপ খুলনার চালনা পৌরসভার বাসিন্দা মো. সফর সানা। বয়স তাঁর ৫৪ বছর। ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে চালনা পৌরসভাটি গঠিত হয়। গঠনের ১৬ বছর পার হলেও এখনো পৌরসভার নাগরিকদের জীবনমান রক্ষার্থে শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ হয়নি।

সফর সানা বলেন, এখানকার মানুষ সব সময় আওয়ামী লীগকেই ভোট দেয়, কিন্তু এলাকার সমস্যা সমাধানের দিকে জনপ্রতিনিধিদের নজর নেই।

দেশের মধ্যে যে কয়টি পৌরসভা রয়েছে, তারমধ্যে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত বলে বিবেচিত হয়, এটি সেগুলোর অন্যতম। দীর্ঘদিন ধরে পৌরমেয়র আওয়ামী লীগের। তারপরও উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। গড়ে ওঠেনি তেমন কোনো শিল্পকারখানা। লবণাক্ততার কারণে জমি একফসলি হওয়ায় কর্মসংস্থানের সুযোগও কম।

পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালের নভেম্বর মাসে চালনা পৌরসভাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ৯ দশমিক ৪৯ বর্গকিলোমিটারের পৌরসভাটি ২০১৩ সালের আগস্টে ‘গ’ থেকে ‘খ’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। পৌরশহরের পূর্ব পাশে পশুর নদ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিক দিয়ে চুনকুড়ি নদী বয়ে গেছে।

পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড়ের নলোপাড়াতে দেখা গেল সেখানে নদীভাঙন অব্যাহত আছে। এলাকাবাসী বলছে, আগামী এক বছরের মধ্যে শহররক্ষা বাঁধ না হলে পুরো এলাকার কোনো চিহ্ন থাকবে না। তাদের দাবি, বাঁধ টিকিয়ে রাখতে নদীভাঙন রোধে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে। এই নির্বাচনে এটাই তাদের অন্যতম চাওয়া।

শহররক্ষা বাঁধ না থাকায় পশুর নদের ভাঙনে তিনবার বিলিন হয়ে গেছে নলোপাড়ার বাসিন্দা মো. নুরুল হকের (৭৩) ঘরবাড়ি। তিনি বলেন, যেভাবে ঘরবাড়ি গিলে খাচ্ছে পশুর নদ। তাতে এখানে আর বসবাস করা সম্ভব নয়। খর স্রোতে ভেঙ্গে গেছে আমাদের বেশ কয়েকটি বসতবাড়ি। তিন দফায় পশুর নদের ভাঙ্গনে নিজস্ব ভিটাবাড়ি বিলিন হওয়ার পর এখন অন্যের বাড়িতে ভাড়াটিয়া হিসেবে জীবনযাপন করছি।

গত সোমবার দুপুরে ইসমাইল শেখ (৫৫) নামে সেখানকার একজন বাসিন্দা নদীর দিকে আঙুল তুলে দেখাচ্ছিলেন বর্তমানে পশুর নদের পাশে দাঁড়িয়ে জোরেহাঁক (আওয়াজ দিয়ে ডাক) দিয়ে ডাকলে যতদুর হাঁকের আওয়াজ শোনা যেত, ততদূর পর্যন্ত তাদের বাপদাদার সম্পত্তি ছিলো। তা সব এখন পশুর নদীর পেটে চলে গেছে।

পৌরসভার বিভিন্ন জায়গায় নদীর পাশজুড়ে এ রকম ছোট্ট-বড় অসংখ্য ভাঙন রয়েছে। শহররক্ষা বাঁধ নিয়ে মানুষের মধ্যে আশঙ্কা দেখা গেছে। তাঁদের অভিযোগ পৌরশহর রক্ষা করার জন্য শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বর্তমান পৌরমেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস। কিন্তু আজ অবদি শহররক্ষা বাঁধ নির্মাণ হয়নি। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, শহরবাসির জীবনমান রক্ষার্থে খুব শীঘ্রই শহররক্ষা বাঁধের জন্য প্রকল্প পাস হবে। পরিকল্পনা বিভাগের কমিশনারের আওতায় প্রকল্পটি অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

চালনা বাজারের বাসিন্দা রণি দে বলেন, ঘূর্ণিঝড় আইলার সময় পৌরশহর ডুবে গিয়েছিল। আইলার ক্ষতচিহ্ন এখনো রয়ে গেছে। তাছাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় নদীতে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেলেই চালনা বাজার তলিয়ে যায়। পরিস্থিতি দুর্বিষহ হয় বর্ষাকালে।

চালনা পৌরসভার মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস খুলনা গেজেটকে বলেন, শহররক্ষা বাঁধের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছিল। একটু সমস্যার কারণে প্রকল্পটির কাজ দেরি হচ্ছে। তবে খুব তাড়াতাড়ি সমস্যার সমাধান করে কাজ শুরু করা হবে।

পৌর নির্বাচন ঘিরে মানুষের মধ্যে ভোট নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখা যায়নি। মানুষের সঙ্গে আলাপে শহররক্ষা বাঁধব্যবস্থার কথাই বেশি উঠে এসেছে। মানুষ নদীভাঙনের কথা বলেছে, কর্মসংস্থান না থাকায় এলাকা ছেড়ে যাওয়ার কথা, চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতার কথা, পৌরসভাকে ঘিরে চিত্তবিনোদনের এলাকা গড়ার কথা বলেছে।

আছাঁভূয়া আর্দশ পল্লি গ্রামের মো. সফর সানা গভীর হতাশা নিয়ে বলেছিলেন, ‘এবারও ভোট দেব, কিন্তু আমাদের অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়তো হবে না।’

 

খুলনা গেজেট / কেএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!