খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৬ মে, ২০২৪

Breaking News

  চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রাকের সঙ্গে ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত
  রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২
চলতি মাসে টেন্ডার, বরাদ্দ ২০ কোটি টাকা

শয্যাবৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার সুযোগ রেখে দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে কপিলমুনি হাসপাতাল

পারভেজ মোহাম্মদ

শয্যাবৃদ্ধি ও আধুনিক চিকিৎসা সেবার সুযোগ রেখে দৃষ্টিনন্দন হচ্ছে কপিলমুনি হাসপাতাল। কপিলমুনির বর্ধিষ্ণু জনপদের দানবীর রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠাকালীন নামে ফেরার জোর সুপারিশটিও বাস্তবায়িত হচ্ছে। এমনকি কার্যাদেশ প্রাপ্তির ১৮ মাসের মধ্যে নতুন ভবনের কাজ সমাপ্তির নির্দেশনা দিয়ে চলতি মাসে টেন্ডার আহবান করছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

জানা গেছে, ঐতিহাসিক ও বর্ধিষ্ণু জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা সেবা প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে মুজিবশত বর্ষ উদ্যাপনের বছরেই নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এমনটি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র। প্রায় ৩ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি হাসপাতালটি একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রূপদানের অংশ হিসেবে প্রথম পর্যায়ে হাসপাতালের মূল পাঁচতলা ভবনের ২য় তলা পর্যন্ত নির্মাণে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০ কোটি টাকা। স্বাস্থ্য ও প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীনে চলতি মাসেই যার টেন্ডার আহবান করা হয়েছে।

মন্ত্রণালয় হতে প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, কপিলমুনি হাসপাতাল ভবন আধুনিক ও দৃষ্টিনন্দন হবে। থাকছে অপারেশন থিয়েটার। প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা যাবে বলে অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে আপাতত নতুন ভবনটিতে থাকছে ২০ শয্যার সুবিধা।

স্থানীয়রা জানান, ১৯১৫ সালের ৭ এপ্রিল রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। তৎকালীন জেলা পরিষদ, হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতার প্রদেয় অর্থের লভ্যাংশ দ্বারা পরিচালিত হত। ভৌগলিক অবস্থান বিন্যাসে খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোর সীমানা প্রায় ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে কপিলমুনি হাসপাতাল প্রায় অর্ধ কোটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানে একমাত্র সরকারী হাসপাতাল। জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানী আচার্য স্যার পি সি রায় এর অনুপ্রেরণায় বিনোদ বিহারী সাধু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি শিক্ষা, অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতার জন্য বাণিজ্যিক কেন্দ্র, টেকনিক্যাল স্কুল, উপসানালয় সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।

স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে হাসপাতাল নির্মাণে তৎকালীন সময়ে নিজস্ব বিদ্যুৎ ব্যবস্থাসহ এক্স-রে মেশিন স্থাপন করেন। অথচ তৎকালীন খুলনা জেনারেল হাসপাতালেও উন্নত চিকিৎসার জন্য ছিল না কোন এক্স-রে মেশিন। উর্দ্ধতন কর্মকর্তার বিশেষ অনুরোধে কপিলমুনি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনটি খুলনা জেনারেল হাসপাতালে নিজ খরচে ভবন নির্মাণসহ প্রতিস্থাপন করা হয়, যা আজও দৃশ্যমান। অথচ প্রাচীনতম এ হাসপাতালের চিকিৎসার মানের কোন পরিবর্তন আসেনি।

কপিলমুনি হাসপাতালের প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামো উন্নয়ন আন্দোলনের প্রবীণ ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব এরফান আলী মোড়ল ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শেখ নেছার আলী জানান, কপিলমুনি একটি জনপদ। ঐতিহাসিক এই জনপদের বিশাল জনগোষ্ঠির চিকিৎসা প্রদানে প্রয়োজনীয় জনবল এবং অবকাঠামোগত অবস্থা কপিলমুনি হাসপাতালের নেই। সে কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে সংসদ সদস্যের সুপারিশ সম্বলিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রতিষ্ঠান প্রধান ও বিভিন্ন শ্রেণীপেশায় নিয়োজিত এলাকার কৃতি সন্তানদের স্বাক্ষরিত এসংক্রান্ত আবেদন জমা দেয়া হয়। পরবর্তীতে দক্ষিণ খুলনার দু’জন কৃতি সন্তান সাবেক স্বাস্থ্য ও বর্তমান জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হাসপাতালের শয্যা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো উন্নয়নের সংবাদ পেয়ে আমরা আনন্দিত এবং সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

সাবেক উপাধ্যক্ষ আফসার আলী জানান, বৃহত্তর খুলনার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম দাবিদার প্রাচীন জনপদ কপিলমুনি। হাসপাতালের অবকাঠামোর উন্নয়ন ও শয্যা সংখ্যা কমপক্ষে ৩১ শে উন্নিতকরণ এলাকার মানুষের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছিল। আজ সেটি বাস্তবায়িত হচ্ছে, আমরা আনন্দিত।

উল্লেখ্য, কপিলমুনি হাসপাতালটি প্রায় তিন একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত। এখানে একতলা বিশিষ্ট বহি:বিভাগ, দ্বিতল বিশিষ্ট আন্তঃ বিভাগ, পুকুর ২ টি, বেড সংখ্যা ১০টি, অক্সিজেন সিলিন্ডার -৬টি, অক্সিজেন ফ্লোমিটার ২টি, আবাসিক ভবন (সবগুলি পরিত্যাক্ত) এবং জনবল কাঠামো, ডাক্তার ২ জন, নার্স (পদ ৪টি) শূন্য ১টি, ফার্মসিষ্ট, অফিস সহকারী ২জন এবং রয়েছে ২জন পরিদর্শন কর্মী। আয়া, বাবুর্চি, নাইটগার্ড, ওয়ার্ডবয় ও ফ্লোর ক্লিনার নাই। হাসপাতালে এ্যাম্বুলেন্স, অপারেশন থিয়েটার, লেবার রুম ও লেবার ওয়ার্ড নাই।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়ার্দ্দার জানান, রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু ২০ শয্যা বিশিষ্ট যাদব চন্দ্র চ্যারিটেবল ডিসপেনসারী ও ভরত চন্দ্র হাসপাতাল হিসেবে এটি প্রতিষ্ঠা করেন। হাসপাতালের অর্থ বরাদ্দে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে দ্রুত নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের দাবি জানান।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!