নগরীর রায়েরমহল মোল্লাপাড়ার আমীর শেখের বাড়িতে সুনশান নিরবতা। মাঝে মধ্যে ঘর থেকে কান্নার শব্দ বের হয়ে আসছে। যা সকল নিস্তবব্ধতাকে ভেঙ্গে দিচ্ছে।
গত ২৩ নভেম্বর সন্ধ্যার দিকে রায়েরমহল মোল্লাপাড়া এলাকার সত্তরোর্ধ্ব আমীর শেখ স্ত্রীর কাছ থেকে একশ’ টাকা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। সন্ধান করা হয় সম্ভাব্য সব আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে। মাইকিং করা হয় বিভিন্ন এলাকায়। পোষ্টার লাগানো হয় শহরের বিভিন্ন স্থানে তাকে জীবিত অবস্থায় ফিরে পাওয়ার জন্য। পরে তার খোঁজ মেলে বটিয়াঘাটা উপজেলার নারায়ণখালীর একটি সংযোগ খালে, মৃত অবস্থায়। তাকে খুন করা হয়েছে বলে পরিবার ও এলাকাবাসীর অভিযোগ। আর এ অভিযোগের তীর ওই এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিকে। এ ব্যাপারে নিহত আমীর শেখের স্ত্রী জামিলা বেগম ৯ জনের নাম উল্লেখ করে বটিয়াঘাটা থানায় মামলা দায়ের করেছেন।
রায়েরমহল মোল্লাপাড়া ঘুরে জানা গেছে, এলাকার ঐ প্রভাবশালী ব্যক্তিরা যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই দলের পরিচয় দেন। তাদের বিরুদ্ধে জমি দখলসহ অভিযোগের অন্ত নেই। স্থানীয় বাসিন্দাদের নিকট থেকে জমি বিক্রির ক্ষমতা নিয়ে তাদের কম দামে জমির মূল্য দিয়ে বিদায় দেয়ার অভিযোগও রয়েছে। এ নিয়ে কেউ বাড়াবাড়ি করলে তাদের উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। জমির বিরোধ নিয়ে খুন করতেও তারা দ্বিধা করে না। তাদের নামে থানায় কয়েকটি মামলাও রয়েছে বলে জানা গেছে।
আমীর শেখ দাম্পত্য জীবনে তিন সন্তানের জনক। বড় ছেলে আফ্রিকা মহাদেশের সোয়াজিল্যান্ডের একটি কলেজে শিক্ষকতা করেন। ছোট ছেলে ঢাকা পুলিশ হেড কোয়ার্টারে সিভিল সার্ভিসে চাকুরী করেন। মেয়ে তার বসত বাড়িতে থেকে তাদের দেখাশুনা করেন।
আমীর শেখ নিজের জমিতে খামারী কাজ করতেন। চকআহসান কাটাখালী এলাকায় একদাগে দেড় বিঘা ও অন্য দাগে ১০ কাঠা জমি ছিল তার। এ জমির ওপর লোলুপ দৃষ্টি পড়ে ওই প্রভাবশালীদের। গত ১০ বছর ধরে তাকে বিভিন্ন ধরণের লোভ দিয়ে আসতে থাকে। জমি না দেয়ায় বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হতো।
ছয় বছর আগেও এই জমি নিয়ে ডুমুরিয়া থানায় সালিশ হয়। সে সময় আমীর শেখকে সমস্যা না করতে ডুমুরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ নির্দেশ দেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা। এরপরও বিভিন্ন উপায়ে তাকে হয়রানি করতে থাকে ওই প্রভাবশালীরা। হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমীর শেখ কম দামে নয় কাঠা জমি বিক্রিও করে দেন ।
নিহত আমীর শেখের স্ত্রী জামিলা বেগম সরাসরি এ ঘটনার জন্য এলাকার চিহ্নিত ঐ প্রভাবশালীদের দায়ী করে বলেছেন, তাকে হত্যা করা হয়েছে। ওই দিন প্রথমে ভ্যানে ও পরে তাকে ইজিবাইকে নিয়ে হত্যা করে তার লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছে। যা অনেকেই দেখেছে। প্রাণভয়ে কেউ মুখ খুলছে না। তিনি এ হত্যাকান্ডের ব্যাপারে বটিয়াঘাটা থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করেছেন, যার নং ১০। তিনি এ হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার চেয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে মোল্লাপাড়া এলাকার এক হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী জানান, প্রভাবশালী ঐ ব্যক্তির নামে থানায় কয়েকটি মামলাও রয়েছে। ক্ষমতার জোরে তিনি মামলা থেকে পার পেয়ে যান। আমীর শেখ একজন নিরীহ মানুষ। কারও সাথে কোন দিন দু’ঠোট এক করেনি। তার মতো একজন নিরীহ লোককে জমির জন্য হত্যা করতে তিনি কোন দ্বিধাবোধ করেনি।
বাটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ জালাল জানান, নিহতের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। বিষয়টি নৌ থানা পুলিশ তদন্ত করবেন বলে জানিয়েছে।
২৩ নভেম্বর সন্ধ্যায় বাসা থেকে বের হন তিনি। পরে তার লাশ বটিয়াঘাটা উপজেলার একটি নদীর সংযোগস্থল থেকে উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। ময়না তদন্ত শেষে লাশ দাফনের প্রাক্কালে পরিবারের উপস্থিতিতে তার শনাক্ত করা হয়।
খুলনা গেজেট/এএ