খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  সরকারি সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে : ইসি রাশেদা
  ময়মনসিংহে বাসের চাপায় অটোরিকশার ২ যাত্রী নিহত
  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

খুলনা থেকে যশোর নিয়ে হত্যা করা হয় ইঞ্জিনিয়ার বায়োজীদকে

নিজস্ব প্রতিবেদক, যশোর 

যশোরে পাওনা সাড়ে ৫ লাখ টাকার জন্য এসএম বায়োজীদ হাসান নামে একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। তার মরদেহ যশোর শহরের চুড়িপট্টি এলাকায় বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদের চালের আড়ৎ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। রোববার দিবাগত রাত ৩টার দিকে এ হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে কয়েকজনকে।

নিহত বায়েজিদ খুলনার সোনাডাঙ্গার হাজী ইসমাইল লিংক রোডের আল আমিন মহল্লার ৬২/৩ নম্বর বাড়ির মৃত শিকদার নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি মুল্লুক চাঁদ ও সঞ্জয় চৌধুরীর ঢাকার অফিসের কর্মী ছিলেন।

এ ঘটনায় নিহতের মা দিলরুবা কোতয়ালি থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এতে আসামি করা হয়েছে বিএনপির নগর শাখার আহবায়ক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদসহ সাতজনকে। মামলার অপর আসামিরা হলো, মুল্লুক চাঁদের ভাই রকিবুল ইসলাম সঞ্জয় চৌধুরী (৫২), শহরের গাড়িখানা রোডের শহিদুল ইসলাম, রাজু, রাজন, শাহ আলম এবং লোন অফিসপাড়ার সাদেক মোল্লার ছেলে জসিম মোল্লা। শেষের ৫ জন মুল্লুক চাঁদের যশোর শহরের কাঁসারি পট্টির চালের আড়তের লেবার।

যশোর কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক জানিয়েছেন, নৈশ প্রহরীদের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে রাত ৩টার দিকে বিএনপি নেতা রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মল্লুক চাঁদের বাড়ি সংলগ্ন চালের আড়তে যান। সেখানে গিয়ে তিনিসহ একদল পুলিশ এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেন। পরে খোঁজ নিয়ে পুলিশ জানতে পারে ওই যুবকের নাম এসএম বায়েজীদ হাসান। তিনি পেশায় একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়র এবং মল্লুক চাঁদের ঢাকা অফিসে কর্মরত ছিলেন।

নিহতের মা দিলরুবা বলেন, বায়েজীদকে ৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা চুরির অপবাদ দিয়ে ঢাকা অফিস থেকে বের করে দেয়া হয়। পরে বায়োজিত খুলনায় চলে আসে। ওই টাকার জন্য প্রায়ই তার বাড়িতে হানা দিত শহিদুলসহ অন্যরা। এর মধ্যে রোববার মুল্লুক চাঁদ তাকে ডেকেছে বলে খুলনা থেকে যশোরে আনা হয়। এরপর কাঁসারিপট্টির চালের আড়তে তাকে আটকে টাকা আদায়ের জন্য বেধড়ক মারপিট করা হয়। এসময় বায়োজিত মোবাইল ফোনে তাকে মারপিট ও নির্যাতনের বিষয়টি জানায় পরিবারকে। এ টাকা না দিলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। একপর্যায় মারপিট করে বায়োজিতকে হত্যা করা হয়।

চালের আড়তের নৈশ প্রহরি মোজহার হোসেন বলেন, তিনি রাত ১০টার দিকে আড়তে আসেন। এসময় ওই ছেলেটিকে আড়তের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। লেবারদের কাছে জানতে চাইলে তারা জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে গেছেন সুস্থ হলেই চলে যাবে। এরপর লেবাররা যে যার মত বাড়ি চলে যান। পরে তিনি বিষয়টি ম্যানেজারকে জানালে তিনিও একই কথা বলেন। এরপর তিনি আড়তে তালা দিয়ে বাইরে এসে অবস্থান নেন। পরে পুলিশ আসলে তিনি দরজা খুলে দেন। এসময় তারা ওই যুবককে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে এবং হাসপাতালে নিয়ে যায়।

নিহতের শাশুড়ি কেয়া, স্ত্রী তাকিয়া এবং ভাই আব্দুল আহাদ বলেছেন, রোবাবার বিকেলে সঞ্জয় চৌধরী একটি প্রাইভেটকারে করে খুলনা থেকে বায়োজীদকে যশোরে নিয়ে আসেন। তারা কেশবপুরে ইফাতারিও করেন। পরে সন্ধ্যার দিকে চালের আড়তে নিয়ে তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। দুই ভাই মুল্লুক চাঁদ ও সঞ্জয় চৌধুরী ঢাকার বসুন্ধরায় বিল্ডিং করছেন। সেটি দেখাশুনা করতেন বায়েজীদ। দুই ভাইয়ের অন্যায় আব্দার মেনে না নেয়ায় প্রকৌশলী বায়েজীদ হাসানকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা দাবি করেছেন। তবে আব্দার কী তা তারা জানাননি।

এদিকে, যশোর নগর বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম চৌধুরী মুল্লুক চাঁদ পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, সাব কন্ট্রাক্টরের মালামাল কেনার ৫ লাখ ৫৪ হাজার টাকা আত্মসাত করে পালিয়ে যায় বায়োজীদ। ওই টাকার জন্য খুলনা সিটি কর্পোরশেনের একজন কাউন্সিলরের মাধ্যমে দেন দরবার চলছিলো। তাকে কে ডেকে এনেছে বা কে মারপিট করেছে তিনি কিছু বলতে পারছেন না। তার কর্মীদের সকলের ফোন বন্ধ। তিনি বিষয়টি জানার চেষ্টা করছেন।

এ বিষয়ে রকিবুল ইসলাম চৌধুরী সঞ্জয় বলেছেন, এ ঘটনায় তার চৌধুরী গোল্ড নামক দোকান থেকে ম্যানেজারসহ দু’জনকে পুলিশ নিয়ে গেছে। তাদের নিয়ে যাওয়ার কারন কি, তা তিনি বলতে পারছেন না।

কোতয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, বায়োজীদ হত্যার ঘটনায় নিহতের মা দিলরুবা একটি মামলা করেছেন। এখনো পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি। পুলিশ তদন্ত করে অভিযান চালাচ্ছে।

এদিকে, রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জুয়েল ইমরান। তিনি বলেন, পাওনা টাকা নিয়ে একটি বিরোধের তথ্য পেয়েছি। তবে কি কারণে এবং কারা এ হত্যাকান্ডে জড়িত তা শনাক্তে তদন্ত চলছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হত্যার সাথে জড়িতদের শনাক্ত ও আটক করা সম্ভব হবে।

খুলনা গেজেট/কেডি




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!