খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৪ মে, ২০২৪

Breaking News

  খুলনাসহ ২৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ আজ বন্ধ
  ব্রাজিলে প্রবল বর্ষণে ৩৯ জনের মৃত্যু, নিখোঁজ ৬৮

মেম্বারসহ চার ভাই কার্ডধারী ‘জেলে’, প্রকৃতরা বঞ্চিত

তরিকুল ইসলাম

খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওহিদ মোড়ল। ২০১৬ সালে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তিনি ওয়ার্ড সদস্য নির্বাচিত হন। বিগত ৫ বছরে কখনও নদী বা সমুদ্রে মাছ ধরতে না গেলেও মৎস্যজীবীদের জন্য বরাদ্দকৃত ভিজিএফ চাল তুলতে তিনি ভুল করেননি। তিনিসহ তার আপন তিন ভাই জেলে পরিচয়পত্রধারী হলেও এলাকার প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অনেকেই রয়েছেন তালিকার বাইরে। ফলে তারা মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করলেও মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময়ে বরাদ্দকৃত সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

অভিযোগ রয়েছে মৎস্যজীবী হিসেবে সংযুক্ত ৯৩৩ জনের অধিকাংশই ‘জেলে’ পেশার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাছাড়া নতুন সংযুক্ত তালিকায় এলাকার বিত্তবান অমৎস্যজীবীদেরও নাম রয়েছে।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা যায়, কয়রা উপজেলায় সর্বশেষ ২০২০ সালে জেলে তালিকা হালনাগাদের সময় ইউপি চেয়ারম্যানদের কাছে ‘উপজেলা পর্যায়ে জেলে নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র কমিটি’ থেকে চিঠি দেয়া হয়। তখনকার উপজেলা নির্বাহী অফিসার শিমুল কুমার সাহা স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ইউনিয়নের তালিকাভুক্ত মৎস্যজীবীদের মধ্যে পেশা পরিবর্তন, মৃত ও স্থানান্তর হওয়া ব্যক্তিদের নাম বাদ দিয়ে এবং তালিকা বহির্ভূত প্রকৃত মৎস্যজীবীদের নাম সংযুক্ত করে নতুন তালিকা পাঠানোর নির্দেশ দেয়া হয়। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, তালিকায় কোন অসংগতি পরিলক্ষিত হলে তার সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের উপর বর্তাবে। পরে ওই বছরের ১১ জুন ‘উপজেলা পর্যায়ে জেলে নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র কমিটি’র সর্বসম্মতিক্রমে পূর্বের কার্ডধারী ১০৯২ জনের মধ্যে ২৫ জনকে বাদ ও ৯৩৩ জনকে নতুন সংযুক্ত করে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাঠানো তালিকার অনুমোদন দেয়া হয়।

ওই তালিকায় ৫৬৫ নম্বরে মহারাজপুরের ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ওহিদ মোড়ল (জেলে আইডি-৭৬৮০২৮), ৫৬২ নম্বরে তার ভাই নূর ইসলাম মোড়ল (জেলে আইডি-৭৬৮০৩৯), ৫৬৩ নম্বরে শরিফুল মোড়ল (জেলে আইডি- ৭৬৮০২৬) ও ৫৭৪ নম্বরে জামাল মোড়ল (জেলে আইডি-৬৯৬৮০০) এর নাম রয়েছে। তালিকায় মৎস্যজীবী হিসেবে সংযুক্ত নতুন (যারা এখন জেলে পরিচয়পত্রধারী নয়) ও পুরাতন মিলে মোট ১ হাজার ৭৭০ জনকে উপজেলা কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ বার ভিজিএফ’র চাল দেয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে মৎস্যজীবী হিসেবে সংযুক্ত ৯৩৩ জনের অধিকাংশই ‘জেলে’ পেশার সাথে সম্পৃক্ত নয়। তাছাড়া নতুন সংযুক্ত তালিকায় এলাকার বিত্তবান অমৎস্যজীবীদেরও নাম রয়েছে।

মহারাজপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডে ২০ থেকে ২৫ জন মৎস্যজীবী (যারা নিয়মিত সমুদ্রে মাছ আহরণে যায় এবং বিএলসি রয়েছে) এ প্রতিবেদককে বলেন, তারা দীর্ঘদিন থেকে সমুদ্রে মাছ ধরে জীবীকা নির্বাহ করছেন। মাছ ধরায় সরকারি নিষেধাজ্ঞার সময়ে সংসার চালাতে কষ্ট হলেও সরকারি কোন সুযোগ সুবিধা তারা পাননা। অথচ যারা জেলে পেশার সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন লোকজনও সরকারি চাল পাচ্ছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, ইউপি মেম্বার বা সংশ্লিষ্টদের কাছে গেলে টাকা চায়। টাকা না দিলে অথবা তাদের ঘণিষ্ঠজন না হলে জেলে কার্ড দেয় না।

ইউপি সদস্য অহিদ মোড়ল বলেন, ৮/১০ বছর আগে মাছ ধরতাম। তখন তালিকাভুক্ত হই। এখন ঘের করি। জেলেদের জন্য প্রযোজ্য সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান কিনা প্রশ্নে তিনি বলেন, গত বছর দু’বার ভিজিএফ’র চাল পেয়েছিলাম। তিনি আরও বলেন, গেলবার জেলে পরিচয়পত্রধারীদের বাইরেও বেশ কিছু লোকের নামে উপজেলা থেকে চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। তবে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নতুন করে নাম পাঠানোর বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।

মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন (লাভলু) এর কাছে বিষয়টি জানতে তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়েও কথা বলা সম্ভব হয়নি।

বিষয়টি সম্পর্কে ‘উপজেলা পর্যায়ে জেলে নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র কমিটি’র সদস্য সচিব ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) এসএম আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের অফিসে জনবলের ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। শতভাগ যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়ে উঠেনি। বেশ কিছু ব্যক্তির নামে অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে অমৎস্যজীবীদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

‘উপজেলা পর্যায়ে জেলে নিবন্ধন ও পরিচয় পত্র কমিটি’র সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অনিমেষ বিশ্বাস বলেন, আমি যোগদানের আগে গেল বছরের ১১ জুন উপজেলা কমিটির সর্বসম্মতিক্রমে সর্বশেষ তালিকা হালনাগাদ করা হয়েছিল। সেখানে মহারাজপুর ইউনিয়ন থেকে পূর্বের কার্ডধারী ১০৯২ জনের মধ্যে ২৫ জনকে বাদ দিয়ে ও ৯৩৩ জনকে নতুন সংযুক্ত করে পাঠানো তালিকা চূড়ান্ত হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয় বলে জেনেছি। তিনি আরও বলেন, অভিযোগের বিষয়টি অবগত হয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

খুলনা গেজেট/ টি আই

 

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!