খুলনা, বাংলাদেশ | ১৯ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২ মে, ২০২৪

Breaking News

  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা দেখালো যশোর-চুয়াডাঙ্গায় ৪২.৮ ও খুলনায় ৪২
  সাবেক ভূমিমন্ত্রীর দুর্নীতি অনুসন্ধান চেয়ে দুদকে আবেদন

নড়াইলে বাঁশের সাঁকোই পারাপারের শেষ ভরসা

 লোহাগড়া প্রতিনিধি 

নড়াইল সদরের সরশপুর এলাকায় মানুষের পারাপারের শেষ ভরসা চিত্রা খালের ওপর নির্মিত বাঁশের সাঁকো।

৫২ বছর ধরে একটি পাকা সেতুর অভাবে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন এখানকার চার ইউনিয়নের প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ। বর্ষা এলে দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায় । ঝড়বৃষ্টিতে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে সাঁকো পারাপার।

স্থানীয়রা এখানে একটি সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন দীর্ঘদিন ধরে। দাবি পূরণ না হওয়ায় স্কুলশিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে। এ ছাড়া কৃষিপণ্য আনা-নেওয়ায়ও পোহাতে হয় দুর্ভোগ। বছরের পর বছর ধরে একটি ব্রিজের অপেক্ষায় এলাকবাসীর।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মরা চিত্রা নামের এ খালের উৎপত্তি মাগুরার শালিখা উপজেলার গড়েরহাট মোড়ে কাজলা নদী থেকে। পরে সেটি নড়াইল সদর উপজেলার মাইজপাড়া ও শাহাবাদ ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সেখান থেকে চণ্ডীবরপুর ইউনিয়নের রতডাঙ্গা ত্রিমোহনীতে গিয়ে চিত্রা নদীতে মিশেছে এ মরা চিত্রা। এই খালের ওপর প্রায় ১০ ফুট পরপর দুটি করে বাঁশের খুঁটি। এমন ১৮ খুঁটির ওপর দাঁড়িয়ে আছে বাঁশের সাঁকোটি। ধরার জন্য আড়াআড়িভাবে দুই পাশে দুটি বাঁশ বেঁধে রাখা হয়েছে।

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নের সরশপুর এলাকায় এই খালের দুই পাড়ে রয়েছে মাইজপাড়া ইউনিয়নের ছয়টি এবং শাহাবাদ ইউনিয়নের আটটি গ্রাম। রয়েছে মাইজপাড়া, সরশপুর, শাহাবাদ ও ধোন্দার মোড়ে চারটি হাটবাজার, একটি কলেজ, তিনটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও পাঁচটি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ফলে ব্যবসায়ী, কৃষক, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় এসব গ্রামের হাজার হাজার মানুষকে।

যাতায়াতের জন্য এলাকাবাসী নিজেরাই সাঁকোটি তৈরি করেছেন বলে জানালেন খালের পশ্চিম পাড়ের চরবিলা গ্রামের বাসিন্দা আবু তালেব মোল্যা। এসময় আক্ষেপ নিয়ে তিনি বলেন, কত নেতারে বল্লাম। কতবার চেয়ারম্যানদের বলছি। এখানে একটা পাকা সেতু বানিয়ে দিলে আমাদের কষ্ট কমে যায়। তারা শুধু বলে দেখতিছি। বুঝার পর থেকে ৫২ বছর শুধু শুনেই গেলাম কিন্তু ব্রিজ আর হলো না।

দুই পাড়ের কয়েকজন বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশ স্বাধীনের পর এলাকার মানুষ ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই চলাচল করছেন। এ সময়ে খালের দুই পাড়ের বিভিন্ন এলাকায় উন্নয়নের অনেক ছোঁয়া লেগেছে। বদলে গেছে এলাকার চিত্র। বদলায়নি কেবল বাঁশের সাঁকোটি।
স্থানীয়রা জানায়, নড়বড়ে এই সাঁকো পার হতে অনেক সময়ই শিশুরা পা পিছলে পানিতে পড়ে যায়। স্কুলগামী শিশুদের কথা বিবেচনা করে হলেও খালের ওপর একটি সেতু নির্মাণ করার দাবি তাদের।

খালের পূর্ব পাড়ে সরশপুর এলাকায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাওসিফ নুর আয়ান জানায়, তার বাড়ি খালের পশ্চিম পাড়ের আড়ংগাছা গ্রামে। স্কুলে আসার সময় সাঁকো পার হতে ভয় লাগে।

নড়াইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহির মেহেদী হাসান বলেন, ওই জায়গায় একটি সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। ঠিকাদারও নিয়োগ করা হয়েছে। খুব দ্রুত সময়ে কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

মাইজপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জসিম মোল্যা এবং শাহাবাদ ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিয়া বলেন, এখানে সেতু নির্মাণে তাদের চেষ্টার কোনো কমতি নেই। এতে গ্রামের মানুষের দুর্ভোগের বিষয়টি তারা গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু সেতু নির্মাণের মতো বরাদ্দ তাদের নেই। এখানে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মাধ্যমে সেতু বাস্তবায়ন করতে হবে। এখানে একটি পাকা সেতু নির্মাণের দাবী স্থানীয়দের।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!