খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ৩, আহত আরও ২ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

নির্বাহী কর্মকর্তার হাতে লাঞ্চিত সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান

নিজস্ব প্রতিবেদক,বাগেরহাট

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো: মিজানুর রহমানকে থাপ্পর দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে। শুধু থাপ্পর নয়, জোরপূর্বক গাড়ির পিছনে উঠিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরিয়ে দেড় ঘন্টা পরে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেওয়া হয় তাকে। বুধবার (১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের কাঠালতলা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। পরে আহত অবস্থায় ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয় তাকে।

চোখ ও কানে গুরুত্বর আঘাত থাকায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মো: মিজানুর রহমানের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

আহত মো: মিজানুর রহমান ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের দুই বারের ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন সাবেক এই ছাত্রলীগ নেতা।

কাঠালতলা এলাকায় থাকা একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, খুলনা-মাওয়া মহাসড়ক দিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ফলতিতার দিকে যাচ্ছিল। মাত্র তিন সেকেন্ডের ব্যবধানে গাড়িটি ব্যাকে আসেন। তখন পার্শ্ব রাস্তা থেকে উঠে আসা মিজানুর রহমানের মোটরসাইকেলের সাথে ইউএন‘র গাড়িটির সামান্য ঘষা লাগে। প্রথমে গাড়ি চালক নিচে আসেন। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নামেন এবং মো: মিজানুর রহমানকে থাপ্পর দেন। পরে গাড়ির পিছনে উঠিয়ে নিয়ে চলে যান ইউএনও।

প্রত্যক্ষদর্শী জাহিদুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ী বলেন, প্রথমে গাড়ি চালক নেমে এসে মিজানুর রহমানকে ধমক দেয়। পরে ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে মিজানুর রহমানকে থাপ্পর দেন।

আহত মো: মিজানুর রহমান বলেন, বেলা ১১টার দিকে বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে গরুর ফার্মে যাচ্ছিলাম। কাঠালতলা মোড় এলাকায় পৌছালে দ্রুত গতিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িটি ব্যাকে (পিছনে) আসে। তখন ইউএনও‘র গাড়ির সাথে আমার মোটরসাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। সাথে সাথে ইউএনও‘র গাড়ি চালক এসে আমাকে গাড়িতে উঠতে বলে। গাড়িতে না উঠলে, ইউএনও গাড়ি থেকে নেমে এসে আমাকে থাপ্পর দেয়। ধাক্কা দিয়ে গাড়ির পেছনে ওঠায় এবং গালিগালাজ করে। গাড়িতে করে কয়েক কিলোমিটার নিয়ে যায়। এক পর্যায়ে তিনি আমাকে ছেড়ে দেয়।

তিনি আরও বলেন, পরে আমি ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হই। চিকিৎসক আমাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নাক, গান গলা বিশেষজ্ঞ দেখানোর পরামর্শ দিয়েছেন। এই ঘটনায় বিচার চাওয়ার মত ভাষা নেই বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

এদিকে উপজেলার প্রবীন রাজনীতিবিদ ও সাবেক জনপ্রতিনিধিকে মারধরের খবরে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ইউএনও‘র কঠোর শাস্তির দাবি জানিয়েছেন তারা।

ফকিরহাট উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি খান মোহাম্মাদ আরিফুল হক বলেন, একজন সাবেক জনপ্রতিনিধিকে মারধর করা কোন ভাবে মেনে নেওয়া যায় না। একজন ইউএনও‘র কাছ থেকে এমন আচরণ প্রত্যাশা করা যায় না। ইউএনও মো: মনোয়ার হোসেন শুধু তাকে মারধর করেনি, এর আগেও একাধিক নাগরিক তার হাতে লাঞ্চিত হয়েছে। তিনি যা করেছেন তা চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘনের মত অপরাধ। ইউএনও-কে বহিস্কার পূর্বক আইনের আওতায় আনার দাবি জানান ছাত্রলীগের সাবেক এই নেতা।

ফকিরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরী বিভাগের চিকিৎসক প্রত্যয় দাস বলেন, মো: মিজানুর রহমান বেশ অসুস্থ্য এবং মুখ-কান ফোলা থাকায় তাকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

থাপ্পর দেওয়ার বিষয়টি অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো: মনোয়ার হোসেন বলেন, তাকে কথা বলার জন্য গাড়িতে ওঠানো হয়েছে। পরিচয় জানার পরে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এটা একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।

বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মধ্যে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। বিষয়টি মীমাংসার জন্য উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

খুলনা গেজেট/ এসজেড




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!