খুলনা, বাংলাদেশ | ২২ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৫ মে, ২০২৪

Breaking News

  কাল থেকে দেশের সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে : শিক্ষা মন্ত্রণালয়
  সুন্দরবনের গহিনে জ্বলছে আগুন
  দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
  মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

দাম্পত্য কলহ থেকেই নিজ সন্তানকে হত্যার পরিকল্পনা করে তনুশ্রী

সাগর জাহিদুল

তনুশ্রী মহালদার। দাম্পত্য জীবনে পুলিশে চাকরিরত স্বামীর সাথে সম্পর্ক ভাল ছিল না। অবিশ্বাস থেকে স্বামীর সাথে দূরত্ব বাড়তে থাকে। নিজের মেয়েকে বিশ্বাস করতেন না মা-বাবাও । শ্বশুর-শ্বাশুড়ীর সাথে ভাল সম্পর্ক ছিল না তনুশ্রী মহালদারের। এরই মধ্যে ভাসুর জোর পূর্বক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের বিষয়টি নিয়েও বেশ চিন্তিত ছিলেন। ইচ্ছা ছিল দূরে কোথাও চলে যাবেন, কিন্তু সন্তানের কথা চিন্তা করে যেতে পারেননি। পরে পারিবারিক কলহ আরও বেড়ে গেলে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজ সন্তানকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে তনুশ্রী।

২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ঢাকা থেকে খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার ফুলতলা গ্রামে ফিরে আসেন তনুশ্রী মহালদার। এর আগে একপাতা ঘুমের ঔষধ ও পাটের দড়ি ক্রয় করেন তিনি। বাড়ি ফিরে স্বাভাবিকভাবে রাতের খাওয়া শেষ করে নিজ ঘরের উদ্দেশ্যে চলে যান। নিজের সন্তান অনুভব মন্ডল যশকে পরম স্নেহে ঘুম পড়ান। এসময় ছয়টা ঘুমের ঔষধ সেবনের পরও ঘুম আসেনি তার। স্বামীকে অবিশ্বাস ও দাম্পত্য জীবনের পূর্বের কথা মনে করে নিজের মধ্যে অশান্তি বাড়তে থাকে।

একপর্যায়ে রাত সাড়ে তিনটার দিকে তিনি বাথরুমে যান। সেখান থেকে ফিরে ব্যাগ থেকে পাটের দড়ি বের করেন। অনেকক্ষণ চিন্তা করার পর নিজ সন্তানকে হত্যার জন্য সামনের দিকে ধাবিত হয়। প্রথমে তিনি পাটের দড়ি দিয়ে অনুভবের গলার পেচিয়ে ধরেন। শিশু সন্তান যশ কিছুক্ষণ পা দাপাদাপি করে একসময় নিস্তেজ হয়ে যায় তার শরীর। হত্যা নিশ্চিত করে তনুশ্রী সারারাত সন্তানকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়েন।

সকালে তনুশ্রীর শ্বাশুড়ী নাতীকে ডাকতে গেলে জানানো হয় সে ঘুমিয়ে আছে। এর আগে তনুশ্রীর সাথে তার মায়ের চারবার মোবাইলে কথা হয়। সকাল সাড়ে ১০ টায় তনুশ্রীর মা জোনাকী মহালদার ঘরে প্রবেশ করে যশকে অচেতন হয়ে পড়ে থাকতে দেখে চিৎকার করলে যশের চাচা তাকে কোলে তুলে নিয়ে বটিয়াঘাটা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। কর্তব্যরত চিকিৎসক যশকে সেখানে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

শিশু হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্দেহের তীর ছিল চাচা অনুপ কুমার মন্ডলের দিকে। ঘটনার দিন ভিকটিমের পিতা পুলিশ কর্মকর্তা অমিত কুমার মন্ডল বড় ভাই অনুপ কুমার মন্ডলকে আসামি করে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। বটিয়াঘাটা থানা পুলিশ তাকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়। কিন্তু এ বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে পুলিশকে বলেন। পরে ভিকটিমের মায়ের ওপর সন্দেহ বাড়তে থাকে পুলিশের। তার কথায় কিছু অসংগতি পান তদন্ত কর্মকর্তা। এরপর পুলিশ তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেও কোন কিছু বের করতে পারেনি। পরে তাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে তিনি হত্যাকান্ডের সকল বর্ণনা দেন।

আদালতে ১৬৪ ধারায় নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন। হত্যাকান্ডের দায় চাচা অনুপ কুমার মন্ডলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে অনত্র চলে যাবে বলে সেখানে উল্লেখ করেন তিনি।

গত ৩০ এপ্রিল এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইন চার্জ রবিউল ইসলাম তনুশ্রী মহালদারকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। অপর আসামি ভিকটিমের চাচা অনুপ কুমার মন্ডলকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আদালতে অনুরোধ করেন। মামলাটি বর্তমানে বিচারাধীন রয়েছে।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!