খুলনা, বাংলাদেশ | ২৫ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৮ মে, ২০২৪

Breaking News

  প্রথম ধাপে ১৩৯ উপজেলায় ভোটগ্রহণ শুরু, চলবে বিকাল ৪টা পর্যন্ত

দক্ষিণাঞ্চলের গর্ব ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ আখিঁ

নাফি ইসলাম

বাবা মাসুদ মোল্লার শ্বাস কষ্ট থাকায় কাজ করতে পারেন না। মা আনোয়ারা বেগম চিংড়ি মাছ গ্রেডিংয়ের কাজ করে কোম্পানীতে। সংসারে তাদের দুই মেয়ে এবং এক ছেলে। নিজেদের থাকার জায়গা নেই। ভাড়া দিয়ে থাকার মত সামর্থও নেই। তাই অন্যের জায়গায় ঘর বেঁধে থাকে মাসুদ ও আনোয়ারা দম্পতি। তাদের মেঝ মেয়ে আখিঁ। বয়স ১৮। যাকে নিয়ে আজ সারা বিশ্বে চলছে আলোচনা।

এমন একটা পরিবারের মেয়েকে নিয়ে আলোচনা, পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি, টিভিতে দেখানো, উপজেলা থেকে অভিনন্দন, সাংসদ সদস্যদের নিকট থেকে সেলাইমেশিন পাওয়া ইত্যাদি সব যেন স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেওয়ার মত ঘটনা ঘটেছে আখিঁর কাছে।

করোনার প্রাদুর্ভাবে গরীব অসহায়দের মাঝে নিজের তৈরী মাস্ক ফ্রি বিতরণ করেই সারা বিশ্বে আলোচিত খুলনার রূপসা উপজেলার বাগমারা এলাকার মেয়ে আখিঁ। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা কার্যক্রম সমন্বয় সংস্থা ইতিমধ্যে তাকে ‘রিয়েল লাইফ হিরো’ পদে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

সরেজমিনে খুলনা গেজেটের প্রতিবেদক যান আখিঁর সাথে দেখা করতে। রূপসা উপজেলার দক্ষিণ বাগমারা এলাকায় আখিঁর পরিবার তার আত্মীয়ের জমিতে ঘর বেঁধে থাকছে। আখিঁ এ প্রতিবেদককে জানান, দক্ষিণ বাগমারা প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। বাবা অসুস্থ হওয়ার পর সংসারের হাল ধরতে মা আনোয়ারা বেগমের সাথে কাজ শুরু করেন চিংড়ি মাছ গ্রেডিং কোম্পানীতে। সকাল ৮টা থেকে রাত অবধি কাজ চলত চিংড়ি মাছের কোম্পানীতে।

সেখান থেকে ওয়াল্ড ভিশনের আপারা আমাকে নিয়ে যায় স্কুলে ভর্তি করতে। কিন্তু বয়স বেশি হওয়ার কারণে ভর্তি হতে পারিনি। এরপর তারা ২০১৮ সালে দুই মাসের একটি ভোকেশনাল ট্রেনিং করায়। পাশাপাশি নিজে আত্মকর্মসংস্থান করতে উদ্বুব্ধ করে এবং শিশু শ্রম ও বাল্য বিবাহ সম্পর্কে সচেতন করেন। ট্রেনিং শেষে তারা আমাকে ১টি সেলাই মেশিন, ৬০টি থ্রি পিস, কিছু থান কাপড় ও মেক্সির কাপড় দেন।

বাবা অসুস্থ হওয়ার পর বাড়িটির সামনে একটি ছোট দোকান করি। সেখানে সেলাই মেশিনের তৈরী কাপড়, পুঁথির তৈরী ব্যাগ, ফুলের টপ, ঘুড়ি ইত্যাদি বিক্রি করতাম।

করোনার প্রকোপ যখন বেড়ে যায়, তখন মাস্কের দামও বাড়িয়ে দেয় সবাই। আমি কিছু কাপড় কিনে মাস্ক তৈরী করলাম। যাদের সামর্থ্য আছে তাদের কাছে ১০ টাকা এবং যাদের সামর্থ্য নেই তাদের ফ্রি মাস্ক বিতরণ করতে থাকি। বিষয়টি একে এক অনেকে জানারপর আলোচনার সৃষ্টি হয়। তবে আমি যে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পাব এটা কখনও ভাবিনি। রূপসা উপজেলা প্রশাসন থেকে তাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছে।

আখিঁর স্বপ্ন তার পরিবারের জন্য মাথা গোজার ঠাঁই করবে। পাশাপাশি সেলাই মেশিনের কাজ করে আরও মেয়েদের শিশু শ্রম থেকে রক্ষা করবে। এছাড়া নিজের একটি পোশাক কারখানা করার স্বপ্নও আছে তার।

এদিকে গত শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রূপসা উপজেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আঁখির স্বপ্ন পূরণের জন্য পোশাক কারখানার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ আঁখির হাতে তুলে দেন খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্যআব্দুস সালাম মুর্শেদী। যন্ত্রাংশগুলোর মধ্যে রয়েছে ৮টি বিদ্যুৎচালিত অত্যাধুনিক সেলাই মেশিন (জাকি), ৫টি পা চালিত বাটার ফ্লাই সেলাই মেশিনসহ প্রায় ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ।

সংসদ সদস্য জানান, এসব যন্ত্রাংশ দিয়ে আঁখি যাতে একটি পোশাক কারখানা শুরু করতে পারেন তার জন্য সরকারি জমি বরাদ্দের প্রক্রিয়া চলছে। জমি পেলেই তিনি সেখানে ঘর বানিয়ে আঁখির জন্য পোশাক কারখানা তৈরি করে দেবেন। আঁখি যাতে এ অত্যাধুনিক সেলাই মেশিনগুলো ব্যবহার করতে পারেন এজন্য তাকে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করবেন।

 

খুলনা গেজেট/নাফি

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!