বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে ১ এপ্রিল সুন্দরবনে মধু সংগ্রহে কয়রা উপজেলার গোবরা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম সরদারসহ আটজন যান। বনের গহীনে ঢুকে পড়েন তারা। তবে রোববার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাঘের আক্রমণে সিরাজুল ইসলামের নিহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার কয়েকটি পত্রিকায় বাঘের হামলায় মৌয়াল সিরাজুল নিহত হয়েছেন এমন খবর প্রকাশিত হয়। তবে বুধবার স্বশরীরে বাড়িতে এসেছেন তিনি। এসবের কিছুই জানতেন না সিরাজুল। মধু সংগ্রহ করে বাড়িতে ফোন দিলে বাঘের আক্রমণে তিনি নিহত হয়েছেন এ বিষয়টি জানতে পারেন তিনি। দ্রুত সেখান থেকে ফিরে আসেন তারা। বৃহস্পতিবার (১৫ এপ্রিল) এ প্রতিবেদককে এমনটাই বললেন সিরাজুল ইসলাম।
কয়রার গোবরা গ্রামের সিরাজুল ইসলাম সরদার বলেন, মধু সংগ্রহের জন্য আমরা আটজন সুন্দরবনে যাই। মধু সংগ্রহে যাওয়ার আগে সেখান থেকে একজনকে নৌকায় রেখে যাওয়া হয়। সে কিছুক্ষণ থাকার পর নৌকায় বসে তার এলাকায় ফোন করে। ফোনে সে বলেছেন আমাকে রেখে ছোট ভাইকে নিয়ে গেছে। এটা আবার অপরপ্রান্তে যিনি ছিলেন সে ভুল শুনেছে। সে আবার কালা (কানে কম শোনে) মানুষ। সে বুঝেছে ছোটভাইকে (সিরাজুল) বাঘে নিয়ে গেছে। এরপর থেকে একে একে ছড়িয়ে পড়ে। এলাকার অনেকেই এটি ছড়িয়ে দেই। বাড়ির লোকজন শুনেছে আমাকে বাঘে নিয়ে গেছে। একখান পা ও একখান হাত পাওয়া গেছে। তাই শুনে বাড়িতে সবাই কান্না-কাটি শুরু হয়। কাফনের কাপড় আর বরফও কিনে আনে তারা। শুধু কবরটা খুঁচতে বাকি ছিল।
তিনি বলেন, আত্মীয়-স্বজনেরা চিন্তায় পরে যায়। তবে তখনও আমরা কিছুই জানতাম না। কারণ আমরা সুন্দরবনের অনেক ভিতরে চলে গিয়েছিলাম। মধু খুঁজতে ব্যস্ত ছিলাম। পরে বাড়িতে ফোন করি। ফোন করার সাথে সাথে তারা ঘটনা বলে। দ্রুত বাড়িতে ফিরে আসতে বলে। সেখান থেকে দ্রুত ফরেস্ট অফিস হয়ে বাড়িতে আসি। শুনেছি ফরেস্ট অফিসের তিনটি টিম আমাদের খুঁজতে গিয়েছিলো। কিন্তু তারা আমাদের পাবে কোথায়। বনের ভিতরে অনেক দূরে ছিলাম আমরা।
সিরাজ সরদারের বড় মেয়ে সেলিনা খাতুন বলেন, রোববার তারা খবর পান তাদের বাবার নৌকায় বাঘের হামলা হয়েছে। খালেক নামে গ্রামের এক ব্যক্তি এ খবর ছড়ায়। সে বলেছে আব্বার একটা পা ও হাত পাওয়া গেছে। তাকে আনা হচ্ছে। এই শুনে মানুষ জড়ো হয়। বরফ, কাপড়চোপড় সব কিছু কিনে আনা হয় রাতারাতি মাটি দেওয়া হবে বলে। বুধবার এখান থেকে বাবার সাথে থাকা একজনকে ফোন দেওয়া হয়। পরে বাবার সাথে কথা হলে তিনি জানায় আমার কোন সমস্যা হয়নি, কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। আমি বাড়ি আসতেছি। আমার মামা ফরেস্ট অফিসে তাকে আনতে যান।
এদিকে গ্রামের অনেকেই যারা ফেসবুকে সিরাজ সরদারের মৃতদেহ উদ্ধারের বিষয়ে পোস্ট দিয়েছিলেন তারাও তা মুছে ফেলেছেন।
এ বিষয়ে সিরাজুল বলেন, অনেকেই আমার মৃত্যুর বিষয়টি ছড়িয়েছে। বিষয়টি বোঝার ভুল থাকায় স্থানীয়রা দ্রুত খবরটি ছড়িয়ে দেয়। তারা সাংবাদিকদেরও ভুল তথ্য দিয়েছে। অনেক পেপারেও ফ্লাস করেছে। এতে সাংবাদিকদের ভুল নেই। যা ভুল করেছে এলাকার কিছু মানুষ। আমার পরিবারও শুনেছিল আমাকে বাঘে নিয়ে গেছে। তাই তারা কান্না-কাটি ও লাশ দাফনের ব্যবস্থা করে। আমি সুস্থ ও ভালো আছি।