খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িচাপায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত
  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
  চুয়েটে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন স্থগিত, সড়কে যান চলাচল শুরু
  বন্ধের বিষয়ে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনায় আজ জরুরী সিন্ডিকেট সভা আহ্বান

বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা আন্দোলনে খুলনার আইনজীবী সমাজ

কাজী মোতাহার রহমান

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্তির মধ্য দিয়ে সৃষ্ট পাকিস্তান রাষ্ট্রটি পূর্ব ও পশ্চিম অংশ হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। বৃটিশ শাসনাধীন ভারতীয় উপ-মহাদেশ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান রাষ্ট্রের সৃষ্টির পেছনে মুসলিম জাতীয়তাবাদ মূখ্য ভূমিকা পালন করে। কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ’র দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতেই ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তানের জন্ম হয়। পাকিস্তানের মোট জনসংখ্যার ৪৩ দশমিক ৭ শতাংশ পশ্চিম পাকিস্তানে এবং ৫৬ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষের বসবাস পূর্ব পাকিস্তানে। নতুন রাষ্ট্রের জন্ম থেকে শুরু হয় পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণমূলক আচরণ। কেবল অর্থনৈতিক শোষণ নয়, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। ১৯৪৭-৬৬ পর্যন্ত পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে পাকিস্তানের দু’অংশের অসমতা দিনদিন তীব্র আকার ধারণ করে। পাকিস্তানের দুই অংশের মধ্যকার অসমতার পেছনে ভৌগলিক বিচ্ছিন্নতা ও জনসংখ্যাগত কারণ ছাড়াও দায়ী ছিল মূলত: পাঞ্জাবী আমলা, জমিদার, সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সরকারের অন্যায় অবিচার ও পশ্চিম পাকিস্তানের প্রতি পক্ষপাতি মনোভাব। পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে সম্পদ পাচার করার মাধ্যমে মূলত: উপনিবেশবাদের সৃষ্টি হয়।

বৈষম্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, পশ্চিম পাকিস্তানের উর্দু ভাষী জেনারেল ১ জন, পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না, পশ্চিম পাকিস্তানে লে: জেনারেল ৩ জন, পূর্ব পাকিস্তানে ছিল না, পশ্চিম পাকিস্তানে মেজর জেনারেল ২০ জন, পূর্ব পাকিস্তানে ১ জন, পশ্চিম পাকিস্তানে মেজর ৫৯০ জন, পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালি ১০ জন, পশ্চিম পাকিস্তানে বিশ্ববিদ্যালয় ৪টি, পূর্ব পাকিস্তানে ২টি, পশ্চিম পাকিস্তানে কলেজ ৭৬টি, পূর্ব পাকিস্তানে ৭৬টি (বিএ ও বিএসএস এর পাঠ্য পুস্তক স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাস)।

পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর বিমাতাসুলভ আচরণের কারণে অব্যাহত শোষণ, জাতিগত নিপীড়ণ ও প্রশাসনিক বঞ্চনা পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করে।

১৯৬৫ সালে ১৭ দিনের পাক-ভারত যুদ্ধের সময় পূর্ব পাকিস্তান ছিল সম্পূর্ণ অরক্ষিত। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের ভৌগলিক দিক ছিল পরস্পর বিচ্ছিন্ন। ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তীব্রভাবে অনুভুত হয়। শোষণ, বঞ্চনা ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের আশায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ উদ্বিগ্ন হয়ে ওঠে। অর্থনৈতিক শোষণ, জাতিগত নিপীড়ণ ও প্রশাসনিক বঞ্চনার অবসানের লক্ষ্যে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি উত্থাপন করেন। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বাধীন ন্যাপসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ৬ দফা প্রত্যাখান করেন। ৬ দফা মূলত: বাঙালি জাতির প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসনের দাবি। ৬ দফা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। ৬ দফা বাঙালিদের মধ্যে এক অনুপম জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হতে থাকে, শোষণ বঞ্চনা ও নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের আশায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ৬ দফাকে কেন্দ্র করে শেখ মুজিবুর রহমান অবিসংবাদিত নেতায় পরিণত হন।

৬ দফা কর্মসূচিতে বলা হয় পাকিস্তান হবে একটি ফেডারেশন। ৬ দফা কার্যক্রমের ভিত্তিতে ফেডারেশনের প্রত্যেক ইউনিটের জন্য পূর্ণ স্বায়ত্ত্বশাসনের ব্যবস্থা থাকবে। সরকারের বৈশিষ্ট্য হবে ফেডারেল ও পার্লামেন্টারী ধরণের। ফেডারেল আইনসভা ও ফেডারেটিং ইউনিটগুলো আইনসভা নির্বাচনে প্রত্যক্ষ এবং প্রাপ্ত বয়স্কদের সার্বজনীন ভোটাধিকারের ভিত্তিতে অনুষ্ঠিত হবে। ফেডারেল সরকারের হাতে থাকবে কেবলমাত্র প্রতিরক্ষা ও বৈদেশিক বিষয়ক এবং শর্ত সাপেক্ষে মুদ্রা থাকবে। ৬ দফাই বিশিষ্টার্থে সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে স্বাধীনতার মন্ত্রে দীক্ষিত করে তোলে।

[পাকিস্তান জামানায় খুলনা মুসলিম লীগের শক্ত ঘাটি] জে: আইয়ুব খান সরকারের যোগাযোগ মন্ত্রী খান-এ-সবুরের বাসভূমি, খুলনা। মুসলিম লীগের অনুসারী বিশেষ করে ব্যারিস্টার আহাদ আলী, এ্যাডভোকেট এওয়াই আহম্মদ আলী, এ্যাডভোকেট গোলাম নবী, এ্যাডভোকেট শেখ আওছাফুর রহমান, এ্যাডভোকেট আবু আহমেদ, এ্যাডভোকেট এসএম আমজাদ হোসেন (প্রাদেশিক শিক্ষা মন্ত্রী), এ্যাডঃ সৈয়দ এমলাক আলী ৬ দফার বিপক্ষে অবস্থান নেন। তারা স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন জনসভায় তুলে ধরেন ৬ দফা বাস্তবায়িত হলে সোনার পাকিস্তান ভেঙ্গে যাবে। খুলনা জেলা ন্যাপের সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুল জব্বার ৬ দফার বিপক্ষে অবস্থান নেন। ৬ দফাকে সাম্রাজ্যবাদের দলিল বলে অবমূল্যায়ন করে। আওয়ামী লীগের দর্শনে বিশ্বাসী হলেও এ্যাডভোকেট ঐতিহাসিক এ এফ এম আব্দুল জলিল (৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য), শহর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি স্বর্গীয় এ্যাডভোকেট মনোরঞ্জন দাশ ৬ দফার বিরোধিতা করে আওয়ামী লীগ ত্যাগ করেন। ৬ দফাকে কেন্দ্র করে খুলনায় আওয়ামী লীগ স্পষ্টত: দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়ে। কাঁঠালতলা মোড়স্থ (আজকের নূর অপটিক্যাল এর পেছনে) আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুর হয়। শেষাবধি সদর থানায় মামলাও হয়।

৬ দফাকে জনপ্রিয় করার জন্য জেলা ও শহর আওয়ামী লীগ ১৯৬৬ সাল থেকে তৎপর হয়ে ওঠে। এমনকি জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলেও ৬ দফা দাবিকে প্রাধান্য দেয়া হয়। ১৯৬৬ সালের ১৩ মার্চ পৌরসভা মিলনায়তনে জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট শেখ আবদুল আজিজ কাউন্সিলে সভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতায় ৬ দফার ব্যাখ্যা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন ইউসুফ, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট এমডি মোমিন উদ্দিন আহমেদ, জেলা আওয়ামী লীগের নব-নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম মনসুর আলী। কাউন্সিলে এ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল আজিজকে সভাপতি ও এ্যাডভোকেট এম মনসুর আলীকে সাধারণ সম্পাদক করে ৪৫ সদস্য বিশিষ্ট জেলা কমিটি গঠন করা হয় (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৫ মার্চ, ১৯৬৬)।

অপরদিকে ১৯৬৬ সালের ১৬ মার্চ ইকবাল নগর কমিউনিটি সেন্টারে শহর আওয়ামী লীগের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট এমডি মোমিন উদ্দিন আহমেদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। বক্তৃতা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট শেখ আব্দুল আজিজ, সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট এম মনসুর আলী, জেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন ইউসুফ প্রমুখ।

সভাপতির ভাষণে এ্যাডভোকেট মোমিন উদ্দিন আহমেদ পাকিস্তানের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে আওয়ামী লীগের বলিষ্ঠ ভূমিকার বিবরণ দেন। তিনি বলেন, বিগত ১৮ বছরে ধরে পূর্ব পাকিস্তানের ওপর বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রবঞ্চণা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৬ দফা বাস্তবায়নের মধ্যে বঞ্চিত মানুষের মুক্তি নিহিত রয়েছে। সম্মেলনে ১৫ দফা প্রস্তাব গৃহীত হয়। ৩নং প্রস্তাবে বলা হয়, ৬ দফা ও ১১ দফা কর্মসূচির ওপর প্রদত্ত সুস্পষ্ট গণরায়ের প্রতি আমরা একনিষ্ঠরূপে বিশ্বস্ত থাকব। শাষণতন্ত্রে ও বাস্তব প্রয়োগে ৬ দফা কর্মসূচি ভিত্তিক স্বায়ত্ত্বশাসন ও ১১ দফা কর্মসূচির প্রতিফলন ঘটাতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করব (দৈনিক ইত্তেফাক, ১৯ মার্চ, ১৯৬৬)।

৬ দফা প্রশ্নে প্রথমদিকে একমত পোষণ করলেও শেষদিকে শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট এমডি মোমিন উদ্দিন আহমেদ দ্বিমত পোষণ করেন। তিনি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট- পিডিএম-এ যোগদান করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান ডেমোক্রেটিক পার্টি-পিডিপিতে ঝুঁকে পড়েন। সেখানে সুবিধা করতে না পারায় আওয়ামী লীগে ফিরে আসার জন্য হাই কমান্ডের স্মরণাপন্ন হন। আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড তাকে দলে যোগদানে সম্মতি দেন। তার যোগদানকে কেন্দ্র করে খুলনা আওয়ামী লীগে মত বিরোধ দেখা দেয়। দ্বন্দ্ব ঠেকাতে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আওয়ামী লীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে জানুয়ারির শেষদিকে খুলনায় আসেন। মোমিন উদ্দিন আহমেদ এর যোগদানের খবরে শহর আওয়ামী লীগের অন্যান্য সদস্যরা পদত্যাগের হুমকি দেয়। এ অবস্থায় ১৯৭০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি শহর আওয়ামী লীগের জনসভা অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। বঙ্গবন্ধুর উপস্থিতিতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে (খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক জনবার্তা, ৩০ জানুয়ারি, ১৯৭০)।

৬ দফার পক্ষে আইনজীবীদের গণসংযোগ : অধুনালুপ্ত খুলনা পৌরসভার চেয়ারম্যান, সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট মোঃ এনায়েত আলি স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে বলেন, ১৯৬৮-৬৯ সালের দিনগুলোতে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিস ছিল নূর অপটিক্যালের পেছনে। তখনকার দিনগুলোতে অন্যান্যদের মধ্যে ৬ দফার পক্ষে সক্রিয় স্থানীয় রাজনীতিকরা হচ্ছেন, এ্যাডঃ শেখ আব্দুল আজিজ, এ্যাডঃ সালাউদ্দিন ইউসুফ, এ্যাডঃ মোঃ এনায়েত আলি, এ্যাডঃ হাবিবুর রহমান খান, এ্যাডঃ মঞ্জুরুল ইমাম, সাতক্ষীরার এ্যাডঃ আব্দুল গফফার প্রমুখ। ৬ দফার পক্ষে জনমত গঠন করতে অন্যান্য রাজনীতিকদের সাথে স্থানীয় আইনজীবীরা বাগেরহাট, মোড়েলগঞ্জ, রামপাল, পাইকগাছা, আশাশুনি ও কালীগঞ্জে গণ সংযোগ করেন। মানুষ ৬ দফার পক্ষে অকুণ্ঠ সমর্থন জানায়।

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে অব্যাহত অর্থনৈতিক শোষণ, জাতিগত নিপীড়ণ ও প্রশাসনিক বঞ্চনাপূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করে। ফলশ্রুতিতে বাঙালি জাতির মধ্যে ৬ দফা অনুপম জাতীয়তাবোধ জাগ্রত করে। ৬ দফার পক্ষে ব্যাপক জনমত সৃষ্টি হয়। ৬ দফা কর্মসূচী নিরাশার আঁধারে নিক্ষিপ্ত বাঙালি জাতিকে স্বধিকার আন্দোলনের প্রেরণা জোগায়।

৬ দফা আন্দোলন নস্যাৎ ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে পাকিস্তানের নিরাপত্তা আইন ৩২ ধারায় ১৯৬৬ সালের ৮ মে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে আটক করা হয়। পাকিস্তান সরকার অভিযোগ আনে ভারতীয় হাই কমিশনারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানকে বিচ্ছিন্ন করার উদ্দেশ্যে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলায় বৈঠক করে সংঘবদ্ধ হচ্ছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমান ও ৩৪ সহযোগিরা ভারতের আগরতলায় গোপন বৈঠক করে সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করার ষড়যন্ত্র করেন, প্রেসিডেন্ট জে: আইয়ুব খান এমন অভিযোগ আনে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়। শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রদ্রোহী প্রমাণ করে তাকে ফাঁসি দেওয়াই ছিল এ মামলার উদ্দেশ্য। প্রেসিডেন্ট জে: আইয়ুব খান এ মামলার পক্ষে জনমত সৃষ্টি করতে যেয়ে ব্যর্থ হন। পূর্ব পাকিস্তানের ১৯ জেলার বাঙালির মনন ও চেতনায় শেখ মুজিব একাকার হয়ে গেছেন। বাঙালি জাতি মনে করেন, শেখ মুজিব বাঙালির সোচ্চার প্রতিবাদের কণ্ঠ। দাবি আদায়ের বলিষ্ঠ সংগঠক। অর্থনৈতিক মুক্তি আন্দোলনের অগ্রদূত। শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে পূর্ব পাকিস্তান জুড়ে গণ আন্দোলনের সৃষ্টি হয়।

খুলনায় আওয়ামী লীগের উদ্যোগে স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল পার্কে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির দাবিতে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী জনসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন। খুলনা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ছিলেন অধিকাংশই আইনজীবী। জনসভা শেষে শহরে মিছিল বের করার উদ্যোগ নিলে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডঃ শেখ আবদুল আজিজসহ একটি অংশ মিছিলে অংশ নিতে রাজি হননি। তারা যুক্তি দেখান এটি ম্যাটার অব সাব জুডিস, পাকিস্তান নিরাপত্তা আইনে পুলিশ স্থানীয় নেতা-কর্র্র্র্মীদের গ্রেফতার করবে। সেদিনের ছাত্রনেতা পরবর্তীতে জাতীয় সংসদ সদস্য এ্যাডঃ স ম বাবর আলী স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে বলেন, এ বিষয় নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে তর্ক-বিতর্ক হয়। গণ আন্দোলনের মুখে রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহমান (আগরতলা) মামলা প্রত্যাহার এবং তার নিঃশর্ত মুক্তি দেন। এই আন্দোলনের মধ্যদিয়ে প্রেসিডেন্ট জে: আইয়ুব খানের পতন হয়। শেখ মুজিবুর রহমান হয়ে ওঠেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি জাতি শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেন। ৬ দফা বাঙালির মনেপ্রাণে এমনভাবে বিঁধে যায় কোনোক্রমেই এ দাবি থেকে সরানো যায়নি। ফলোশ্রুতিতে ১৯৭০ সালের জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। আইনজীবীদেও একটা বড় অংশ এ নির্বাচনে সাফল্য বয়ে আনেন। খুলনায় জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডঃ শেখ আবদুল আজিজ, এ্যাডঃ সালাহউদ্দিন ইউসুফ, এ্যাডঃ আবদুল গফফার (সাতক্ষীরা), জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ হাবিবুর রহমান খান, এ্যাডঃ এম ডি মোমিন উদ্দিন আহমদ ও এ্যাডঃ মোঃ এনায়েত আলি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।

(লেখক : সাবেক সাধারণ সম্পাদক, খুলনা প্রেস ক্লাব)

 

খুলনা গেজেট / এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!