টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগের আসরে ইংল্যান্ডের কাছে কোনও পাত্তাই পায়নি ভারত। অ্যাডিলেডে আগে ব্যাট করে ১৬৯ রানের টার্গেট দিয়ে তারা হেরে গিয়েছিল ১০ উইকেটে। বৃহস্পতিবার গায়ানায় আরেক সেমিফাইনালে ওইবারের চেয়ে তিনটি বেশি রান করলো ভারত, কিন্তু এবার বল হাতে দুর্দান্ত তারা। দুই স্পিনার অক্ষর প্যাটেল ও কুলদীপ যাদবের ঘূর্ণিতে নাকানিচুবানি খেলো ইংলিশরা। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ৬৮ রানে হারিয়ে ১০ বছর পর কুড়ি ওভারের বিশ্বকাপের আরেকটি ফাইনালে জায়গা করে নিলো ভারত। ২০১৪ সালে সবশেষ ফাইনালে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে রানার্সআপ হয়েছিল তারা।
১৭২ রানের লক্ষ্যে নেমে জস বাটলার ঝড়ে তিন ওভারে ২৬ রান তোলে ইংল্যান্ড। আর্শদীপ সিং ও যশপ্রীত বুমরা সুবিধা করতে না পারায় রোহিত শর্মা বল তুলে দেন অক্ষর প্যাটেলের হাতে। ভারতীয় স্পিনার বল হাতে নিয়ে বাজিমাত করেন।
চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে পেছনে রিশাভ পান্তের সহজ ক্যাচ হন বাটলার। ১৫ বলে চারটি চারে ২৩ রান করেন তিনি। এই ইনিংস খেলার পথে চতুর্থ ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এক হাজারি ক্লাবে জায়গা করেন নে ইংলিশ অধিনায়ক।
পরের ওভারে আরেক ওপেনার ফিলিপ সল্ট ৫ রান করে বুমরার বলে বোল্ড হন।
এরপর স্পিন দিয়েই ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইন আপে ধস নামায় ভারত। অক্ষর তার পরের দুই ওভারেও প্রথম বলে জনি বেয়ারস্টো (০) ও মঈন আলীকে (৮) ফেরান।
কুলদীপ যাদব তার দ্বিতীয় ওভারে স্যাম কারানকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন। ইংলিশ ব্যাটার রিভিউ নষ্ট করে বিদায় হন ২ রানে। ৪৯ রানে পাঁচ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
রবীন্দ্র জাদেজার ওভার থেকে ৯ রান তুলে হ্যারি ব্রুক ধাক্কা সামলানোর ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। ১১তম ওভারে কুলদীপকে রিভার্স সুইপ করে চার মেরে পরের বলে একই শটে বোল্ড হন তিনি। ১৯ বলে ২৫ রান করেন ব্রুক তিন চারে। কুলদীপ তার পরের ওভারে ক্রিস জর্ডানকে (১) প্যাভিলিয়নে পাঠান এলবিডব্লিউ করে। ৭২ রানে ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
অক্ষর তার শেষ ওভারে কুলদীপের থ্রো থেকে নন স্ট্রাইক প্রান্তে লিয়াম লিভিংস্টোনকে (১১) রান আউট করেন।
আদিল রশিদকে (২) সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করেন সূর্যকুমার যাদব। দল হারার আগে জ্বলে ওঠেন জোফরা আর্চার। তাতে ৮৮ রানে ৯ উইকেট হারানো ইংল্যান্ডের দলীয় স্কোর একশ ছাড়ায়। ১৭তম ওভারের চতুর্থ বলে আর্চারকে ২১ রানে এলবিডব্লিউ করেন বুমরা। ১০৩ রানে অলআউট হয় ইংল্যান্ড।
ভারতের পক্ষে তিনটি করে উইকেট নেন কুলদীপ ও অক্ষর। সমান চার ওভার করে কুলদীপ ১৯ রান দেন, ২৩ রান খরচা করেন অক্ষর।
গায়ানায় ভারত ও ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। হতাশ হতে হয়নি ভক্ত-সমর্থকদের। বৃষ্টি বিঘ্ন ঘটালেও এক ইনিংসের খেলা শেষ হয়েছে। রোহিত শর্মার হাফ সেঞ্চুরি ও সূর্যকুমার যাদবের ব্যাটে ইংল্যান্ডকে ১৭২ রানের টার্গেট দেয় তারা। ৭ উইকেটে ১৭১ রান ভারতের।
এর আগে টসে জিতে ইংল্যান্ড বোলিং নিয়ে শুরুটা মন্দ করেনি। রিস টপলিকে ছক্কা মারার দুই বল পর বিরাট কোহলি তার শিকার হন। ৯ বলে ৯ রান কের বোল্ড হন ভারতীয় ওপেনার। একপ্রান্ত আগলে রেখে রোহিত রানের গতি বাড়ান। তাকে বেশিক্ষণ সঙ্গ দিতে পারেননি রিশাভ পান্ত। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে স্যাম কারানের বলে জনি বেয়ারস্টোকে তিনি ক্যাচ দেন ৪ রান করে।
শুরুতে ধাক্কা খেলেও রোহিতের ব্যাটে পাওয়ার প্লেতে ২ উইকেটে ৪৬ রান করে ভারত।
বৃষ্টিতে ৮ ওভার পর খেলায় ব্যাঘাত ঘটার আগে রোহিত ও সূর্যকুমার যাদব বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারিতে গ্যালারি মাতান। ২ উইকেটে ৬৫ রানে বৃষ্টি বিরতিতে যায় ভারত।
এক ঘণ্টারও বেশি সময় পর মাঠে খেলা ফেরে। তারপর ফিরে রান পেতে হাপিত্যেশ করতে হয়েছে রোহিত-সূর্যকে। ১৩তম ওভারে কারানকে দুটি ছয় ও চার মেরে দুজনে ১৯ রান তুলে নিয়ে ছন্দ ফেরান। ওই ওভারে ছক্কা মেরে ৩৬ বলে টানা হাফ সেঞ্চুরি করেন রোহিত। সেটি ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে তার ৫০তম হাফ সেঞ্চুরি, তার ওপরে কেবল ক্রিস গেইল (৬৩)।
পরের ওভারে আদিল রশিদ রোহিতকে ফেরান। ৩৯ বলে ৬ চার ও ২ ছয়ে ৫৭ রান করে বোল্ড হন ভারতের অধিনায়ক। ভাঙে ৭৩ রানের জুটি।
ডেথ ওভারে রানের গতি বাড়াতে গিয়ে উইকেট দ্রুত হারিয়েছে ভারত। জোফরা আর্চার তিন রানের আক্ষেপে ভাসান সূর্যকে। ৩৬ বলে চারটি চার ও দুটি ছয়ে ৪৭ রান করে ক্রিস জর্ডানের ক্যাচ হন ভারতীয় ব্যাটার।
১৮তম ওভারে হার্দিক পান্ডিয়া টানা দুই ছক্কা মেরে জর্ডানের শিকার হন। ১৩ বলে ২৩ রান করেন তিনি। মাঠে নেমে প্রথম বলেই জস বাটলারকে ক্যাচ দিয়ে ডাক মারেন শিবম দুবে।
শেষের আগের ওভারে রবীন্দ্র জাদেজা টানা দুটি চার মেরে দলীয় স্কোর দেড়শ পার করেন। ৯ বলে ১৭ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। শেষ ওভারে জর্ডানের তৃতীয় শিকার হওয়ার আগের বলে অক্ষর প্যাটেল ছক্কা মেরে উচ্ছ্বাসে ভাসান দর্শকদের।
জর্ডান ৩ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার।
খুলনা গেজেট /কেডি