খুলনা, বাংলাদেশ | ২১ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৪ মে, ২০২৪

Breaking News

  দ্বিতীয় ধাপে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৬১ জনকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি
  মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জন নিহত

খুলনার ৪৭ খাল গিলে খেয়েছে ৮১ প্রভাবশালী

কাজী মোতাহার রহমান

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯৬৫ সালে যুদ্ধের পর পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি মুসলমানরা এখানে আসার পর থেকে বাসস্থানের প্রয়োজনে নগরীর পরিধি বেড়ে যায়। বসতি বাড়ার সাথে-সাথে খাস জমি ও খাল দখলের প্রতিযোগিতা চলে, সব সরকারের আমলে। প্রভাবশালীরা যেভাবে পেরেছে খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা ও সুবিধাবাদীরা তঞ্চকতার মাধ্যমে নিজ নামে রেকর্ড করে অন্যের নামে বিক্রি করে দেয়। নগরী ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় ৫০ খালের মধ্যে ৩টির অস্তিত্ব নেই। আর যা আছে তার ৮০-৯০ শতাংশ অবৈধ দখলে গেছে। এ দখল প্রক্রিয়ার সাথে ৮১ প্রভাবশালী জড়িত।

নগর ও পার্শ্ববর্তী ৪৭ খালের মালিক জেলা প্রশাসন। সিটি কর্পোরেশন এগুলো তদারকি করেন মাত্র। জেলা প্রশাসন ও কেসিসি’র জরিপে অবৈধ দখলে থাকা খালগুলো হচ্ছে ময়ূর নদ, নিরালা খাল, তাবলীগ মসজিদ সংলগ্ন খাল, নিরালা আবাসিক এলাকার পূর্ব পাশের খাল, ছড়িছড়া, মতিয়াখালী, ক্ষুদিয়ার খাল, মিয়াপাড়া পাইপের মোড়, ক্ষেত্রখালী, লবণচরার গোড়ার খাল, লবণচরা ১নং স্লুইচগেট খাল, লবণচরা খান-এ-সবুরের বাগানবাড়ির খাল, বড় বাজার স্টেশন রোড এলাকার ড্রেন, লবণচরা ২নং স্লুইচগেট খাল, নর্থ ব্যাংক খাল, মন্দা, হাজী তমিজউদ্দিন খাল, বাস টার্মিনাল আবাসিক এলাকার খাল, বাস টার্মিনালের পশ্চিম পাশের খাল, তালতলা, তালতলা ইউসুফ স্কুলের দক্ষিণ পাশের খাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পশ্চিম পাশের খাল, ছোট বয়রা শ্মশান ঘাট, বাটকেমারী, হাতিয়া, ডুবি, রায়েরমহল মোল্লাপাড়া, রায়েরমহল বাজার খাল, বাস্তুহারা, দেয়ানা মধ্যস্ত চৌধুরীর খাল, দেয়ানা দক্ষিণপাড়ার খাল, তেঁতুলতলা দশ গেট সংলগ্ন খাল, মাথাভাঙ্গা, সুড়িমারী, খোলাবাড়িয়া, কয়লাতলা, আবাইবুনিয়া, হরিণটানা, মজুমদারের খাল, কাদেরের খাল, চকমুথরাবাদ, বিলপাবলা বাঁশতলা, বিলপাবলা লাইলের খাল, লতা পাহাড়পুর ও বিল পাবলার ক্ষুদে নদী সংলগ্ন খাল।

লবণচরা খালের এক অংশ ভরাট করে কেসিসি’র ৩১নং ওয়ার্ড অফিস, রূপসা সাহেবখালী খালের ওপর কেসিসি’র মার্কেট, পিটিআই মোড়ের খাল বন্ধ করে ২৮নং ওয়ার্ড অফিস, সাবেক মেয়র শেখ তৈয়েবুর রহমানের বাড়ির পেছনে একজন সাবেক ডেপুটি মেয়র প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ, বয়রা শ্মশান ঘাটের খালের মুখ বন্ধ করে ইসলামিয়া কলেজ, নগর ভবনের পেছনে খাল বন্ধ করে একজন আইনজীবীর গাড়ির গ্যারেজ নির্মাণ, সোনাডাঙ্গা খালের মুখ বন্ধ করে মহিলা কমপ্লেক্স নির্মাণ ও নবী নগর খাল ভরাট করে আন্ত:জেলা বাস টার্মিনাল ও বাইপাস সড়ক নির্মাণ হয়েছে। খালের মুখ বন্ধ হওয়ায় আষাঢ়-আশ্বিন মাস পর্যন্ত নগরীর একটি বড় অংশে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বর্ষার চার মাস নিম্নাঞ্চলের দুই লাখ মানুষ দুর্ভোগ পোহায়।

৮১ অবৈধ দখলদার

কেসিসি’র ২০০৯ সালের ১০ ফেব্রুয়ারির প্রতিবেদন এবং এ বছরে জেলা প্রশাসন ও কেসিসি’র জরিপের প্রতিবেদন অনুযায়ী অবৈধ দখলধারদের মধ্যে যেমন রয়েছেন সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক, তেমনি আছেন সাবেক সরকারি কর্মচারি, সাবেক কাউন্সিলর, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, যুব নেতা, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক। প্রতিষ্ঠানের মধ্যে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, মহিলা কমপ্লেক্স ও হার্ড টু রিচ প্রকল্প রয়েছে।

মেয়রের ভাষ্য

মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক গত ২৬ আগস্ট বাজেট অধিবেশনে উল্লেখ করেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বৃষ্টির পানি দ্রুত নিষ্কাশনে ২৬টি খাল অবৈধ দখলমুক্ত করা হয়েছে। প্রভাবশালীরা পাকিস্তান আমল থেকে এসব খাল দখল করে আসছে। খাল খননে পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এবারের বাজেটে জলাবদ্ধতা নিরসনে বড় অংকের টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

কর্মকর্তার ভাষ্য

কেসিসি’র এস্টেট অফিসার মো: মনিরুজ্জামান তরফদার এ প্রতিনিধিকে জানান, পাঁচটি কমিটি করে অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হয়। তিন মাস ধরে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ২৬ খালের পূর্ব পাশের অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন দখলদারদের দখলে থাকায় পলি পড়ে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়েছে। নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে পর্যায়ক্রমে উদ্ধারকৃত খাল খনন করা হবে। প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ময়ূর নদ।

এলাকাবাসীর ভাষ্য

বাস্তুহারা কলোনীর অধিবাসী মো: ইউনুস আহমেদ খাঁ এ প্রতিবেদককে বলেন, বর্ষার চার মাস নয় হাজার অধিবাসী হাটু পানির মধ্যদিয়ে চলাচল করে। নির্বাচনের সময় কাউন্সিলর প্রার্থীরা সবাই এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি দেন, কেউ কথা রাখে না।

পাবলার অধিবাসী সুরাত আলী উল্লেখ করেন, ক্ষুদের খালে কচুরিপনা জন্মানোর কারণে পানি নিষ্কাশনে বাঁধাপ্রাপ্ত হচ্ছে। নবী নগর খালের পশ্চিম পাশে ভরাট করে বিভিন্ন ব্যক্তি স্থাপনা করেছে। নবী নগর খালের পূর্ব পাশে কেসিসি ও কেডিএ ভবন নির্মাণ করেছে।

 

খুলনা গেজেট/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!