খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
  মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িচাপায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত
  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

খুলনার মোড়ে মোড়ে শীতের পিঠার স্বাদ

আজিজুর রহমান

শীত এলে বোঝা যায় পিঠা বাঙালির কতটা পছন্দের। নবান্ন, পৌষ পার্বণ-সব উৎসবই হয় নতুন ধানের চালের পিঠাকে কেন্দ্র করে। হিমেল হাওয়া বয়ে যাওয়ার এ সময়টাই পিঠার। গ্রামের মানুষ প্রায় প্রতিদিনই পিঠার স্বাদ নেয়। তবে শীত শীত বাতাসে পিঠা বঞ্চিত থাকেনা নগরবাসীও। অলিগলি থেকে শুরু করে ব্যস্ত রাস্তার ফুটপাত ও ভ্রাম্যমাণ দোকানে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা। এসব দোকানে গিয়ে নগরবাসী নিচ্ছে পিঠার স্বাদ।

হেমন্তের শুরুতেই শহরের রাস্তার ধারে মাটি ও গ্যাসের চুলা নিয়ে বসে যান মৌসুমি পিঠা বিক্রেতারা। এসব দোকানে মেলে চিতই, ভাপা ও তেলাভাজা পিঠা। গরম-গরম ধোঁয়া ওঠা চিতই পিঠার মূল আকর্ষণ শর্স্যের বা ঝাল শুঁটকির ভর্তা। খেজুরের গুড় ও নারকেল দিয়ে তৈরি ভাপা ও তেলেভাজা পিঠাও পাওয়া যাবে এসব অস্থায়ী পিঠার দোকানে।

গত কয়েকদিনে খুলনা নগরীর রূপসা ঘাট, মডার্ন মোড়, পিটিআই মোড়, দোলখোলা মোড়, গফ্ফারের মোড়, শিশু হাসপাতাল রোড, তারের পুকুর পাড়, পিকচার প্যালেস মোড়, ক্লে-রোড, স্টেশন রোড, খানজাহান আলী রোড, সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, নিউমার্কেট, খালিশপুর, দৌলতপুর, রেল স্টেশনসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড় আর ফুটপাতে গড়ে উঠেছে অগণিত অস্থায়ী পিঠার দোকান। এসব দোকানের বেচাবিক্রিও বেশ ভালো। এ ছাড়া নগরের সাতরাস্তা মোড়ে আছে অভিজাত পিঠাবিপণি ‘পিঠা শপ’। এই দোকানে পাটিসাপটা, নকশাপিঠা, পাক্কন পিঠাসহ হরেক রকম পিঠা বিক্রি হয়। পাশাপাশি নগরের বিভিন্ন সুপার স্টোরে প্যাকেটজাত পিঠা বিক্রি হয়।

শীতের সন্ধ্যায় খুলনা নগরের ব্যস্ততম এলাকা দোলখোলা মোড়ে পঞ্চাশোর্ধ খালেদা বিবি নামের এক নারী অস্থায়ী পিঠার দোকান মেলিয়ে বসেন। তবে খালেদার মতো এমন শতাধিক পিঠার দোকান রয়েছে শহরের আনাচ-কানাচে। সন্ধ্যা হলে প্রতিটি দোকানেই পড়ে পিঠা বিক্রির ধুম।

ফাষ্টফুড সংস্কৃতির এই যুগেও শীতের গরম পিঠার জনপ্রিয়তা দিনদিন বাড়ছে। নগরের বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতে গড়ে ওঠা মৌসুমি পিঠাপুলির দোকানে ক্রেতাদের ভিড়ই তার বড় প্রমাণ। সূর্য ডোবার পরপরই দোকানিরা তাঁদের পিঠার পসরা বসান রাজপথে কিংবা অলি-গলিতে। চুলায় আগুন জ্বেলে একের পর এক পিঠা বানতে থাকেন তাঁরা আর অন্যদিকে ক্রেতারা গরম গরম পিঠা সাবাড় করতে থাকেন। শহরে বসেও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এই খাবার উপভোগ করার সুযোগ হাতছাড়া করতে চান না অনেকে। এসব দোকানে পাঁচ টাকায় চিতই, পাঁচ থেকে ১০ টাকায় ভাপা ও তেলেভাজা পিঠা পাওয়া যায়। চিতই পিঠার সঙ্গে শর্স্য বা ঝাল শুঁটকির ভর্তা ‘ফ্রি’ মেলে।

শনিবার (২৮ নভেম্বর) সন্ধ্যায় কথা হয় দোলখোলা মোড় এলাকার অস্থায়ী পিঠার দোকানি খালেদা বিবির সঙ্গে। তিনি খুলনা গেজেটকে জানান, বছরতিনেক ধরে দোলাখোলা এলাকায় পিঠা তৈরি করছেন। স্বামী মারা যাওয়ার পর থেকে জীবনযাপনের জন্য পিঠা বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন তিনি। খালেদা বলেন, সীমিত খরচে ভালো লাভের আশায় প্রতিদিন সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করছি। তিনি জানান, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ কেজি চালের গুড়ার পিঠা বিক্রি হয়। ২ হাজার টাকা খরচ করে তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত বেচাকেনা করেন।

পিঠা বিক্রেতা খালেদা আরও বলেন, ‘অভাবের সংসারে শীতের মৌসুমে ফুটপাতে পিঠা বিক্রি করে সংসার চালাতে হয়। প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে চারশ পিঠা বিক্রি হয়। খরচা বাদ দিয়ে দিনে প্রায় ৯০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় হয়। পিঠা তৈরিতে খরচ ও সময় দুটোই কম লাগে। তাই অল্প সময়ে বেশি আয় হয় বলে পিঠা তৈরিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছি।’

ভোজনরসিকদের মধ্যেও শীতের পিঠা নিয়ে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। নগরের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন মো. হাসিবুর রহমান। তিনি বললেন, ‘কাজের চাপে সব সময় গ্রামের বাড়িতে যাওয়া হয় না। তাই শীতের পিঠা খাওয়ার সাধ মেটাতে ফুটপাত থেকে পিঠা কিনে খেতে হয়। স্বাদ-গন্ধে গ্রামের বাড়ির মতো না হলেও ভালো লাগে।’

নগরীর দোলখোলা মোড়ে পিঠা কিনতে আসা শিক্ষার্থী সাদিয়া চাঁদনী খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘গ্রামের বাড়িতে শীতের সময় পিঠা খাওয়ার আনন্দঘন মুহূর্তগুলো শহুরে জীবনে এখন স্মৃতি। এখন শহরেই মিলছে নানা রকম পিঠা। শীতের পিঠার এ রসনাবিলাসের সুযোগ হাতছাড়া করি না। প্রায় কিনে নিয়ে যাই বাসায়। তবে বিরক্তির বিষয় একটি দোলখোলা মোড়ে কখনও লাইনে না দাঁড়িয়ে পিঠা কেনা যায় না।’

কলেজ শিক্ষিকা দেবলা রাণী মণ্ডল খুলনা গেজেটকে বলেন, ‘ব্যস্ততার কারণে ঘরে পিঠা তৈরি করার সময় পাওয়া যায় না। শর্টকাটে এখানকার পিঠার দোকানগুলোই ভরসা। এতে সময়ও বাঁচে শীতের আমেজও পাওয়া যায়।’

 

খুলনা গেজেট / এআর




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!