খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২
  মানিকগঞ্জের গোলড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গাড়িচাপায় দুই সবজি বিক্রেতা নিহত
  গাজীপুরের শ্রীপুরের একটি বহুতল ভবনের ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

খুলনার নির্বাচনী জনসভায় মওলানা ভাসানী

কাজী মোতাহার রহমান

১৯৬৫ সাল। পাকিস্তানের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বছর। ২ জানুয়ারি দেশে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন আর ৬ সেপ্টেম্বর পাক- ভারত যুদ্ধ। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার কূটনীতিকদের জন্য অন্যতম আলোচ্য বিষয়। নির্বাচন পরবর্তী যুদ্ধে পাকিস্তান জয়ী হয়। ভারত পিছু হটে।

প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছিল গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন কনভেনশন মুসলিম লীগের প্রার্থী পাকিস্তানের লৌহ মানব জে. মো: আইয়ুব খান। তিনি পাকিস্তানের সোয়াতের বাসিন্দা। ক্ষামতায় এসে ১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারি করেন। রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ। গণতান্ত্রিক অধিকার বলতে আর কিছু ছিল না। রাজনীতিকদের ওপর জুলুম নির্যাতন অব্যাহত থাকে। সে কারণে রিরোধী দল তার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

মৌলিক গণতন্ত্র পদ্ধতিতে প্রেসিডেন্ট ভোট। ইউনিয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান, মেম্বর, পৌরসভার চেয়ারম্যান, জেলা বোর্ড ও থানা কাউন্সিলের সদস্যদের ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের রেওয়াজ ছিল।

মুসলিম লীগের প্রার্থীর বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের সকল বিরোধী দল জোট বাঁধে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ, জামায়াতে ইসলামী, নেজামে ইসলামী ও কাউন্সিল মুসলিম লীগের সমন্বয়ে গঠিত জোটের নামকরণ করা হয় সম্মিলিত বিরোধী দল- কপ।

মুসলিম লীগের গুন্ডাবাহিনীর অত্যাচারে খুলনার মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এর ফলশ্রুতিতে ১৯৫৮ সালের পৌর নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে খান এ সবুর পরাজিত হন।

কপের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন পাকিস্তানের বড় লাট কায়েদে আযম মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ’র বোন মিস ফাতেমা জিন্নাহ। তার সমর্থনে কপ ১৯৬৪ সালের ১৮ অক্টোবর স্থানীয় সার্কিট হাউস ময়দানে নির্বাচনী জনসভার আয়োজন করে। চট্টগ্রামে নির্বাচনী জনসভা শেষে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ফতেমা জিন্নাহ খুলনায় আসেন। সফরসঙ্গী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান, ন্যাপ প্রধান মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, লে. জে. আযম খান, মৌলভী ফরিদ আহমেদ, জামায়াত ইসলামীর অধ্যাপক গোলাম আযম ও জাতীয় পরিষদ সদস্য দোভাষী বেগম রোকাইয়া আনোয়ার (ইত্তেফাক ১৯ অক্টোবর ১৯৬৪)।

দৈনিক ইত্তেফাকের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, সার্কিট হাউস ছিল লোকে লোকরণ্য। মুসলিম লীগের গুন্ডাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত ও এ অঞ্চলের কৌতুহলী মানুষ হাজির হয় ফাতেমা জিন্নাহকে এক নজর দেখতে। পূর্ব পাকিস্তানের মোট ৪০ হাজার ভোটারের মধ্যে কনভেনশন মুসলিম লীগের জে. আইয়ুব খানের প্রাপ্ত ভোট ২০ হাজার ১৩ ও কপের প্রার্থী ফাতেমা জিন্নাহ’র প্রাপ্ত ভোট ১৮ হাজার ৪৩৪।

জনসভায় ন্যাপ প্রধান খুলনাবাসির মানসিকতা দেখে আবেগময় বক্তৃতা করেন। তিনি বলেন, জনতার এ প্রাণের আবেগ বঙ্গোপসাগর হতে উত্থিত ঝড়ো হাওয়ায় গোটা প্রদেশে বিপুল জাগরণ সৃষ্টি করেছে। মুসলিম লীগের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের কন্যা ফাতেমা জিন্নাহকে এ প্রদেশের মানুষ আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, স্বাদের পাকিস্তানের জন্য আন্দোলন করে মানুষ পেট ভরে ভাত খেতে পারেনি। ভাতের অধিকার পাওয়ার লক্ষে ভোটের আন্দোলনে নেমেছি, সফল হবই। ফাতেমা জিন্নাহ নির্বাচিত হলে একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরশাসনের অবসান হবে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মূলত: স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে। এ ভোটে দেশবাসি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে (পিআইবি’র প্রকাশনা সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু)। স্বৈরচারী সরকারের পতন ঘটানোর জন্য ফাতেমা জিন্নাহ’র নেতৃত্বে গণতান্ত্রিক আন্দোলন বেগবান করতে হবে।

মওলানা ভাসানী জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সবসময় জোটগত আন্দোলনের পক্ষে ছিলেন। তার প্রমাণ ৬৯ ‘র রাষ্ট্র বনাম শেখ মুজিবুর রহামান মামলায় বিরোধী দলের গণঅভ্যুথানের ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের লৌহ মানব জে. আইয়ুব খানের জামানার অবসান হয়। ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে তার জোটগত প্রচেষ্টা ছিল। গণতন্ত্রের লড়াকু সৈনিক মওলানা ভাসানীর সংগ্রামী জীবনের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা।

খুলনা গেজেট/ এস আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!