খুলনা, বাংলাদেশ | ১৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  চাওয়াই নদীতে গোসলে নেমে প্রাণ গেল দুই শিশুর
  গরুবাহী নছিমনের ধাক্কায় মোটরসাইকেলের দুই আরোহী নিহত
  জামালপুরে ধান মাড়াই করতে গিয়ে তাঁতী লীগ নেতার মৃত্যু
  দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে দুই ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২

খরচ-টোল-চাঁদায় বাড়ছে ব্যয়, পুষিয়ে নিতে যাত্রীর উপর চাপ!

তরিকুল ইসলাম

সারাদেশের ন্যায় খুলনায়ও ভাড়া বৃদ্ধি, ডিজেল ও আনুষঙ্গিক জিনিসপত্রের মূল্য হ্রাস এবং রেভিনিউ-ট্যাক্স মাওকুফসহ কয়েক দফা দাবিতে পরিবহন ধর্মঘট ডাকা হয়। পরিবহন মালিকদের চাপের মুখে রবিবার বৈঠকে ভাড়া বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হলেও এতে জনমনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। ডিজেলের পূর্বমূল্য বহালসহ চাঁদা ও পুলিশের হয়রানি নিয়ন্ত্রণে এনে যাত্রীদের কথা বিবেচনা করে ভাড়া স্বাভাবিক রাখার দাবি স্বয়ং মালিক সমিতি ও নাগরিক নেতাদের।

খুলনা থেকে ঢাকা, চট্রগ্রাম, সিলেটসহ প্রায় অর্ধশতাধিক রুটে বাস চলাচল করে। বাস চলাচলে বিভিন্নস্থানে নামে-বেনামে চাঁদা দিতে বড় অঙ্কের টাকা চলে যায়। ফলে পরিবহন সেক্টরের রুট খরচ বেড়ে যাচ্ছে। খুলনা থেকে ঢাকা রুটে বাস প্রতি প্রায় ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এমনকি খুলনাতেই এক থেকে দেড় হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয় বলে মালিক সমিতির এক নেতা জানান।

এদিকে করোনার প্রভাবে দেড় বছর বাস চলাচল বন্ধ থাকায় চরম ক্ষতির মুখে পড়ে এ সেক্টর। তাছাড়া সর্বশেষ ২০১৫ সালে নির্ধারিত গণপরিবহনের ভাড়া অনুযায়ী রুটের বিভিন্ন খরচ তুলে লাভের মুখ দেখা কষ্টকর বলে দাবি বাস মালিক সংগঠনের নেতাদের। তবে নামে-বেনামে নেয়া চাঁদা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে ভাড়া বাড়িয়ে জনগণের ওপর চাপ সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সূত্রে জানা যায়।

ফাল্গুনী পরিবহনের পরিচালক কালাম ভুঁইয়া জানান, বিভিন্ন রুটে এক এক ধরণের চাঁদা রয়েছে। যা পরিবহন মালিকদের জন্য বাড়তি চাপ।

রূপসা-বাগেরহাট বাস মিনিবাস মাইক্রোবাস সমিতির সভাপতি নূরুল হক লিপন জানান, ট্যাক্স-টোল বৃদ্ধিসহ তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে আমাদের এ কর্মসূচি। চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমাদের এখানে সমিতির পরিচালনা খরচ বাবদ ৪০ থেকে ৫০ টাকা নিই। যেখানে খুলনায় গাড়ি প্রতি এক থেকে দেড় হাজার টাকা পর্যন্তও নেয়া হয়।

খুলনা মটর বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান জানান, করোনায় দেড় বছর বসে থাকায় এই সেক্টর অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। এরপরেও গাড়ির ট্যাক্স বাড়িয়ে দেয়া হয়। এছাড়া দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার ফলে অনেকের কাগজপত্র আপডেট না থাকায় রাস্তায় ট্রাফিকের ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে। বিভিন্নস্থানে চাঁদার সমস্যাতো রয়েছেই। গণতান্ত্রিক সরকার হিসেবে উচিত ছিল বিভিন্নস্থানে জরিপ করে সমঝোতার মাধ্যমে ভাড়ার তালিকা তৈরি করা। এসব বিষয় সমাধানে আমরা দাবি করে আসছি। এজন্য আমরা ধর্মঘট করতে বাধ্য হয়েছি। তবে শুধু ভাড়া বৃদ্ধিই সমস্যার সমাধান নয় বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, ভাড়া বৃদ্ধিতে জনগণের ওপর চাপ পড়বে, তাদের সাথে ভাড়া নিয়ে তর্কবিতর্ক হবে যেটা আমরা চাইনা। ট্যাক্স-রেভিনিউতে ছাড়, পুলিশের হয়রানি বন্ধ ও নামে-বেনামে চাঁদার টাকা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেও জনগণের ওপর চাপ কম পড়বে বলে মতদেন তিনি।

খুলনা মটর বাস মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল গফ্ফার বিশ্বাস বলেন, ট্রাক এবং বাস দেশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শিল্প। যখন যে সরকার আসে তখন সে সরকারের নেগলেন্সি ও মনগড়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ফলে এ সেক্টর আজ ধ্বংসের দাড়প্রান্তে। তিনি আরও বলেন, যেখানে ভারত সরকার তেলের দাম কমিয়েছে সেখানে আমাদের লিটার প্রতি ১৫ টাকা বাড়ানো হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে করোনাকালীন সুবিধা দিলেও মালিকদের কোন সহযোগিতা করা হয়নি। দেড় বছর বন্ধ থাকায় গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে, আয় হয়নি তবুও রেভিনিউ-ট্যাক্স মাফ করেননি সরকার বরং খরচ আরও বেড়েছে। করোনায় সরকারই গাড়ি চলাচল বন্ধ করেছে, তাহলে কেন রেভিনিউ দিতে হবে এ প্রশ্ন রাখেন তিনি।

তিনি বলেন, রাস্তায় গাড়ি চলাচলে বিভিন্নস্থানে পুলিশ গাড়ি আটকাচ্ছে, ফেরি ভাড়া, টোল বৃদ্ধিসহ আনুষঙ্গিক খরচ বেড়েছে। তাছাড়া চাঁদাও দিতে হয় মোটা অংকের। খুলনা-ঢাকা রুটে বিভিন্নস্থানে প্রায় ৩ হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। তবে কোন কোন সময় চাঁদার টাকা কমবেশি হয়।

ভাড়া বাড়ানোতে প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, ভাড়া বাড়ানোর এই সিদ্ধান্তের সাথে আমরা একমত নই। পরিবহন ভাড়া বাড়লে সকল ক্ষেত্রে প্রভাব পড়বে।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির খুলনা জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম বলেন, গণশুনানী করে অথবা যাত্রীদের প্রতিনিধির সাথে সমন্বয় করে ভাড়া পুননির্ধারণ করা হলে যাত্রীদের জন্য কল্যাণকর হতো। সরকার ও বিআরটিএ সড়ক পথে নিরবিচ্ছিন্নভাবে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে পরিবহন সেক্টরের সমস্যা অনেকটা লাঘব হবে।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর খুলনা বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই খোদা জানান, পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধির ফলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ সকল ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়বে। এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতির সাথে তেলের দাম বৃদ্ধিসহ পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি করায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস। চরম বিপাকে পড়বে তারা। তিনি আরও বলেন, অতি মুনাফার আশায় পরিবহন মালিকরা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট করেছে। এটা অযৌক্তিক।

রুটের চাঁদা প্রসঙ্গে বলেন, এটা এক ধরণের দুর্নীতি। চাঁদার টাকা পরোক্ষভাবে জনগণের পকেট থেকেই যাচ্ছে। আমাদের দুর্ভাগ্য হলো জনগণের কল্যাণে কোন রাষ্ট্র ব্যবস্থা নেই।

উল্লেখ্য, তিন দিন ধরে ধর্মঘটের মুখে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বাস মালিকদের সাথে বৈঠক শেষে প্রতি কিলোমিটারে বাস ভাড়া ২৭ শতাংশ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদিও ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সারাদেশে দূরপাল্লার বাসের ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১ টাকা ৮০ পয়সা হচ্ছে। আর মহানগরীতে বিভিন্ন রুটের বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সার থেকে বেড়ে হচ্ছে ২ টাকা ১৫ পয়সা। মিনিবাসের ক্ষেত্রে ১ টাকা ৬০ পয়সা থেকে বেড়ে হচ্ছে ২ টাকা ৫ পয়সা। এর আগে ২০১৫ সালে ভাড়া পুননির্ধারণ করা হয়।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!