খুলনা, বাংলাদেশ | ২০ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৩ মে, ২০২৪

Breaking News

  গাজীপুরে দুই ট্রেনের সংঘর্ষ, স্টেশন মস্টারসহ সাময়িক বরখাস্ত ৩
  এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ ১২ মে : শিক্ষা মন্ত্রণালয়
খুলনায় কেজি ৬০০-৭০০ টাকা

কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে হিমশিম খাচ্ছে মানুষ

নিজস্ব প্রতিবেদক

খুলনায় কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে মানুষ। বাজার ও কাঁচা মরিচের প্রকারভেদে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। তবে কাঁচা মরিচের আমদানির খবরেও খুলনার বাজারে কোন প্রভাব পড়েনি। ফলে কাঁচা মরিচ কিনতে হিমসিম খাচ্ছে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ।

এদিকে সিন্ডিকেটের অভিযোগ তুলে ব্যবসায়ীদের দূষছেন ক্রেতারা। এ জন্য সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণেরও দাবি জানিয়েছেন তারা। তবে বাজারে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কাঁচা মরিচের দাম বেড়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা বিক্রেতারা।

রোববার (২ জুলাই) দুপুরে খুলনার বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য মিলেছে।

বিক্রেতারা জানান, ঈদের পর বাজারে চাহিদার তুলনায় কাঁচা মরিচের সরবরাহ কম। পাইকারি সাড়ে ৫০০ টাকায় কাঁচা মরিচ কিনছেন তারা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ, আড়তদারী ও কিছু মরিচ নষ্ট থাকায় খরচ বেশি পড়ে যায়। যে কারণে ৬০০ টাকা থেকে ৭০০ টাকায় কাঁচা মরিচ বিক্রি করছেন তারা।

অন্যদিকে ক্রেতাদের অভিযোগ হঠাৎ করেই কাঁচা মরিচের দাম বাড়ানো হয়েছে। ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে খেটে তাদের। ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৭০ থেকে ৮০ টাকায় কিনছেন। মরিচের কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকাও পড়ছে। অনেকেই বিকল্প হিসেবে শুকনা মরিচ কিনছেন। কাঁচা মরিচের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তারা। কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির কারণ ক্ষতিয়ে দেখতে সরকারের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।

নগরীর ময়লাপোতা বাজারের ক্রেতা কুলসুম বলেন, ১০০ গ্রাম কাঁচা মরিচ ৬৪ টাকা। সংসার জীবনে কাঁচা মরিচের দাম এতো বাড়তে দেখিনি। দাম বেশী হওয়ার কারণে ১০০ গ্রাম মরিচ কিনেছি।

বেসরকারি ব্যাংক কর্মকর্তা মোল্লা নাসির উদ্দিন খুলনা গেজেটকে বলেন, বাজারে নিত্যপণ্যর দাম কম আছে বলে তার ধারণা নেই। একবার বেড়ে গেলে তা পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে।

তিনি আরও বলেন, এভাবে দাম বাড়তে থাকলে স্বল্প আয়ের মানুষের অস্তিত্ব নিয়ে টান পড়ে যাবে।

খুলনা নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারে আসা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, কাঁচা মরিচ ৭০০ টাকা কেজিতে কিনে খাওয়ার মতো আমরা কিনতে পারছি না। ক্রয় ক্ষমতার বাহিরে চলে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, খেটে খাওয়া মানুষের করুণ অবস্থা। এমনিতেই আয় কম। তারপর বাজারে এসে যদি দেখে অনেক জিনিসের দাম বাড়তি, কিনতেই পারবে না। এই অবস্থা যে কতোদিন চলবে তার কোন ঠিক নেই।

অপর এক ক্রেতা মো. জুয়েল বলেন, কাঁচা মরিচ ৭০০ টাকা কেজি। কিনতেই পারছি না। কিনবো এই কথাই চিন্তা করতে পারছি না। তবুও বাধ্য হয়ে ১০০ গ্রাম ৭০ টাকায় কিনেছি।

খুলনা নিউ মার্কেট কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুর রহিম বলেন, ঝাল এখন কম, ক্রেতা বেশি। আর অনেক খেত নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য ঝাল কম, দাম বেশি। আমাদের এক কেজি ঝাল কেনা ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকা। আমরা বিক্রি করছি ৬৮০ থেকে ৭০০ টাকায়।

তিনি বলেন, ঝাল আনতে পরিবহন খরচ আছে, আবার কিছু ঝাল নষ্ট হয়ে যায়। এসব বাদ দিয়ে আমাদের এভারেজে কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা লাভ হয়।

তিনি আরও বলেন, বড় বড় মোকামের ব্যবসায়ীরা লাভবান বেশি হয়। ওরা সিন্ডিকেট করে ঝাল আটকে রাখে বেপারীদের কাছ থেকে। পরে আমাদের কাছে বেশি দামে বিক্রি করে।

নগরীর ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারের ব্যবসায়ী রাসেল বলেন, রোববার সকালে ‍খুলনার আড়তে কাঁচা মরিচের সরবরাহ বেশ ছিল। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, কাঁচা মালের মূল্য সাবক্ষণিক পরিবর্তন হতে থাকে। সকালে এর দাম থাকে এক বিকেলে হলে তার মূল্য হয় আরেক। তিনি বলেন, অতি বৃষ্টিতে ঝাল গাছের গোড়ায় পানি জমা থাকার কারণে উৎপাদন কম হয়েছে যে কারণে এর মূল্য অধিক। ব্যবসায়ী জীবনে মরিচের দাম এ বেশী তিনি দেখেননি।

একই বাজারের ব্যবসায় সগীর আহমেদ বলেন, আগে প্রতিদিন ২০ কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রির জন্য কিনতেন। কিন্তু অধিক দাম হওয়ার কারণে প্রতিদিন ৫ কেজি মরিচ কেনেন তিনি। ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানি করেছেন সরকার। সেটি এখনও বাজারে আসেনি। আসলে দাম কমতে পারে।

তিনি আরও বলেন, বৃষ্টি লাগা কাঁচা মরিচ একদিনের বেশী সংরক্ষণ করা যায় না। একদিন অতিবাহিত হলে সেটি পঁচে যায়। মরিচের আমদানি বেশি হলে দাম কমে যাবে। না হলে এ দাম স্থায়ী হয়ে যাবে। প্রয়োজনের তুলনায় ক্রেতারা বেশী কিনছেন না।

নগরীর টুটপাড়া জোড়াকল বাজারের কাঁচা মরিচ বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, ৭০০ টাকা কেজিতে কাঁচা মরিচ বিক্রি করছি। ১৯ বছরের ব্যবসায় ঝালের দাম এতো দেখিনি।

নগরীর মিস্ত্রিপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান বলেন, ঈদের এক সপ্তাহ আগেও ১২০ টাকা থেকে ১৬০ টাকা কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি করেছি। বর্তমানে বাজারে কাঁচা মরিচ খুবই কম। আগে প্রতিদিন বাজারে ২০ থেকে ৩০ মণ কাঁচা মরিচ আনা হতো। এখন ২ মণও আসছে না। যা আসছে সবই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, বৃষ্টির কারণে বিভিন্ন এলাকায় মরিচ ক্ষেতে পানি জমেছে। পানি জমে গাছ নষ্ট হয়ে যায়। তবুও মরিচের দাম এতো বেশি নয়।

তিনি জানান, এ বছর খুলনায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে মরিচ চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ১০ মেট্রিক টন হিসেবে মোট উৎপাদন হওয়ার কথা ১ হাজার ৭৫০ মেট্রিক টন। যা স্থানীয় চাহিদা পূরণে সক্ষম। পদ্মা সেতু হওয়ার পর খুলনা থেকে কাঁচা মরিচ সরাসরি ঢাকায় যায়, আবার বিভিন্ন জেলা থেকে কাঁচা মরিচ খুলনায় আসে।

প্রসঙ্গত, ঈদের আগ থেকে সরবরাহের ঘাটতি দেখিয়ে পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এ পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। অঞ্চলভেদে তা ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হতে থাকে। কাঁচা মরিচের মূল্য স্থির রাখার লক্ষে সরকার প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়। রোববার বিকেলে দেশে ৯৩ টন কাঁচা মরিচ আমদানি করা হয়।

খুলনা গেজেট/এসজেড/এমএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!