খুলনা, বাংলাদেশ | ২৩ বৈশাখ, ১৪৩১ | ৬ মে, ২০২৪

Breaking News

  চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে ট্রাকের সঙ্গে ভটভটির মুখোমুখি সংঘর্ষে যুবক নিহত
  রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বাস-পিকআপ সংঘর্ষে নিহত ২

কলারোয়ায় পানি সিঙ্গারার বাম্পার ফলন, স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার

জুলফিকার আলী, কলারোয়া

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দিন দিন বাড়ছে পানি সিঙ্গারার চাষ। সুস্বাদু এ ফলটি বাজারজাতকরণ খুবই সহজ। জলাবদ্ধ এলাকায় পতিত জমিতে খুব সহজেই চাষ করা যায়। স্বল্প পূঁজিতে লাভজনক হওয়ায় পানিফল সিঙ্গারা চাষে ঝুঁকছে এখানকার চাষীরা।

এদিকে ডোবা আর বদ্ধ জলাশয়ে পানিফল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছে এই উপজেলার অনেক হতদরিদ্র কৃষক। অল্পপুঁজি ব্যয় করে পানিফল চাষের মাধ্যমে দু’পয়সা বাড়তি আয় করে অভাবের সংসারে সচ্ছলতা এনেছে প্রায় শতাধিক পরিবার। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করে। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় এই পানিফল চাষে অনেক আগ্রহী হচ্ছেন। এ উপজেলায় পানিফল উৎপাদনে সফলতা পাওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চাষিরা অনুপ্রাণিত হয়ে চাষাবাদ পদ্ধতি শিখে তাদের পতিত জমিতে চাষ শুরু করছেন।

প্রতিবছর বোরো ধান কাটার পর, খাল-বিল-ডোবায় জমে থাকা পানিতে প্রথমে এই ফলের লতা রোপণ করা হয়। তিন থেকে সাড়ে তিন মাসের মধ্যে ফল আসে গাছে। এ ফল চাষে সার-কীটনাশকের তেমন প্রয়োজন হয় না। প্রতি বিঘা জমি চাষে ৯/১০ হাজার টাকা খরচ করে ৩৫/৪০ হাজার টাকা লাভ করতে পারে চাষিরা। বাজারে প্রতি কেজি পানিফল বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকায়। প্রথমে দাম ছিলো ৫০/৬০ টাকা কেজি। এই ফল পৌষ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত বিক্রি করা যায়।

পানিফল চাষী হাসান ও রেজাউল ইসলাম জানান, ১৩ বছর ধরে তারা কলারোয়ার গোপিনাথপুরে পতিত ও জলাবদ্ধ জমিতে পানিফল চাষ করে আসছেন।অন্যান্য ফসলের থেকে এর পরিচর্যা কম। এ বছর তাদের ৬ বিঘা জমিতে পানিফল চাষের খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা।  পানি ফল বিক্রি হয়েছে ১ লাখ ৪০হাজার টাকা। তারা আশা করছে এবার ৬ বিঘা জমিতে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার ফল বিক্রি হবে।

পানি সিঙ্গারা চাষী ওয়াজেদ, মাজেদ, শিল্পি, একুব্বার, শফিকুল, মুনসুর আলী, নাজির গাজী, শামসুর রহমান, আব্দুর রউফ, রফিকুল ইসলাম, সোহাগ, আবুল, নুর ইসলাম, তৌহিদ, পফ্ফার, মোস্ত, আঞ্জুর জানান, সরকারি-বেসরকারি খাত থেকে ঋণ সহায়তা পেলে আরো অনেক মানুষ পানিফল চাষ করবে। এতে একদিকে নিজেরা যেমন স্বাবলম্বী হতে পারবে তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও অবদান রাখা সম্ভব হবে।

কলারোয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পানিফল কৃষিতে নতুন এক সম্ভাবনাময়
ফসল। আমাদের কৃষি বিভাগ সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছে পানিফল চাষের বিস্তার ঘটাতে। যে কোন পতিত খাল, পুকুর, ডোবা অথবা জলাশয়ে চাষ করা সম্ভব। চলিত বছরের প্রায় ৩৭ হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে চাষ হবে বলে তিনি মনে করেন। আরও বলেন, এ ফলের পুষ্টিরমান অনেক বেশি। পানিফল যেমন শরীরের জন্য বেশ উপকারি। খেতেও সুস্বাদু। এই ফল শরীরের পুষ্টির অভাব দূর করে, ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

উল্লেখ্য, এটি একটি বর্ষজীবী জলজ উদ্ভিদ। এর গাছ ৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পানির নীচে মাটিতে এর শিকড় থাকে এবং পানির উপর পাতা গুলি ভাসতে থাকে। আশ্চর্য বিষয় হলো, এই গাছে ফুল ফোটে ভোর বেলায়, পানির উপর ভাসতে দেখা যায়। কিন্তু ফুল ফোটার কিছুক্ষণ পরে সেই ফুল পানির নিচে চলে যায়। আর সেখানেই ফলে পরিণত হয়। অনেকই চিনেন ‘পানিফল’ হিসেবে। এর কারণ এটি কেবল হাঁটু বা কোমর পানিতেই জন্মায়। দেখতে খানিকটা বাজারে তৈরি সিঙ্গারার মতো হওয়ায় অনেকেই সিঙ্গারা বলেও চিনেন। তাছাড়াও এফলের নানা জায়গায় নানা নাম রয়েছে। ওয়াটার কালট্রপ, বাফেলো নাট, ডেভিল পড ইত্যাদি। আবার ইংরাজিতে একে ওয়াটার চেস্টনাটও বলা হয়। এরও বৈজ্ঞানিক নাম ‘ট্রাপা নাটানস’।

খুলনা গেজেট/ টি আই




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!