অ্যান্টিবায়োটিকের অতিমাত্রা ও অপব্যবহারের ফলে সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। এতে উপকারী ব্যাকটেরিয়া মারা যাচ্ছে। ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগের মাত্রা তীব্রতর হচ্ছে, ব্যাপ্তি বাড়ছে। খুলনা অঞ্চলে ৮১ শতাংশ রোগী অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে। বাণিজ্যিক মানসিকতার চিকিৎসক, ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ও কমিশন এজেন্টরা এর সাথে সংশ্লিষ্ট।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের বছর জুড়ে গবেষনায় এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
খুলনা বিভাগের রোগীদের মধ্যে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের হার দ্বিতীয় স্থানে। ময়মনসিংহ বিভাগ শীর্ষে রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া পল্লী চিকিৎসকদের প্রেসক্রিপশন ও অনেক ক্ষেত্রে ফার্মেসী মালিকদের পরামর্শে এ গ্রুপের ঔষধ সেবন করেন। ভাইরাল ডায়রিয়া ও সর্দি কাশিতেও অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছে। শিশুদের ওপর এর প্রয়োগ বেশী। যে কোন ঔষুধের অতিমাত্রা ও অপপ্রয়োগের ফলে দক্ষিণাঞ্চল মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরীর ওপর গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না। অতিমাত্রায় ব্যবহারের ফলে রোগ নির্ণয় করাও সম্ভব হচ্ছে না। অ্যান্টিবায়োটিক গ্রুপের ঔষধগুলো হচ্ছে- ডক্সিন, সেফ-৩, ট্রাইক্লাব, ক্লিন্ডাসিন ও ক্লাভুসেভ।
২৫০ শয্যাবিশিষ্ট্য জেনারেল হাসপাতাল, যশোর-এর ডা. জি.এম. শাফাত আলদ্বীন এপ্রসঙ্গে অভিমত দিয়েছেন চিকিৎসা ব্যবস্থা সঠিক কাঠামোতে নেই। মেডিকো লিগ্যাল জ্ঞানের অভাবে অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার হচ্ছে। ফলে রোগ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। এরজন্য ব্যবসায়ী মানসিকতার চিকিৎসক ও ঔষধ প্রস্তুত কোম্পানীরাই দায়ী।
বাগেরহাট জেলার চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. আবু ঈসা নুর এ প্রসঙ্গে বলে মাত্রাতিরিক্ত ও কম ডোজের অ্যান্টিবায়োটিকের কারণে ব্যকটেরিয়া মারা যাচ্ছে। ফলে সংক্রামক ব্যধি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। গাজী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. বঙ্গকমল বসু বলেছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের অতিমাত্রায় ব্যবহারে জীবানু প্রতিরোধ করার জন্য হাতের অস্ত্র কমে আসছে। জীবানুর দৌরাত্ম বাড়ছে।
সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মেডিকের অফিসার ডা. আহমাদ হোসাইন জানান, পল্লী চিকিৎসক ও ফার্মেসী মালিকের পরামর্শে রোগীরা অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে। এতে উপকারী ব্যকটেরিয়া মারা যাচ্ছে। পরবর্তীতে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে রোগীর কোন কাজ হচ্ছে না।
আবু নাসের হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ ডা. মো. জাহিদ হোসেন বলেন, অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারে লিভার ও কিডনীর ক্ষতি হচ্ছে। রোগীর পরিবারের অর্থ অপচয় হচ্ছে। ঔষধ শিল্পকে রক্ষা করার জন্য স্বার্থান্বেসী মহল নানাভাবে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে দক্ষিণ অঞ্চলের অল্প বয়সি রোগীদের স্বাস্থ্যহানী ঘটছে।
খুলনা মেডিকেল কলেজের ডা. অপু জানান, অতিমাত্রায় এর ব্যবহারের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিচ্ছে। সর্দি জ্বরেও যখন রোগী অতিমাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করছে পরবর্তীতে তার শরীরে অনেক ঔষধ কাজ করছে না। ক্ষেত্র বিশেষ রোগ নির্ণয় করা অসম্ভব হয়ে দাড়াচ্ছে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে এর সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।
খুলনা গেজেট/ আ হ আ