সাতক্ষীরার শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে হত্যার উদ্দেশ্যে দুইজন সহকারী অধ্যাপকের উপর উপর্যুপরি সশস্ত্র হামলা ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত এবং শিক্ষাঙ্গনের পরিবেশ নষ্ট করার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ওই কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো: আবুল কালাম। তিনি শিক্ষকদের উপর হামলাকারিদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘শিক্ষাকে বাণিজ্যে পরিণত করা সাবেক অধ্যক্ষ মো: ফজলুর রহমান (মোশা) দায়িত্বে থাকাকালীন সময়ে সীমাহীন দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, রেজুলেশন জালিয়াতি, প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটিকে বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করে তোলা হয়। অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ডজন খানেক শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে এমপিও ভুক্ত করিয়ে এবং অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেন। এসব অপকর্মের কারণে মাউশি ২০১৭ সালের ৫’ফেব্রুয়ারি তার এমপিও বন্ধ করেন। এঘটনার পর কলেজ পরিচালনা পরিষদের এক সভায় দ্রুত সময়ের মধ্যে কলেজের পাওনা অর্থ কলেজ ফান্ডে জমা দেওয়ার ওয়াদা করেন সাবেক অধ্যক্ষ। পরবর্তীতে তিনি সে টাকা ফেরত না দিয়ে কৌশলে ২০২২সালের ২১ জুন কলেজের অদূরে গুলিবিদ্ধ হওয়ার নাটক সাজান এবং শিক্ষক পর্ষদের সেক্রেটারি সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রহিম ও মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক এজাহার দায়ের করেন। এর আগে ১৩ মে আ’লীগ নেতা মোঃ গোলাম মোর্শেদ কলেজ পরিচালনা পরিষদের সভাপতি নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম আরও বলেন, সাবেক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে শিক্ষক কর্মচারীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তদন্তের ভিত্তিতে ৩১’জানুয়ারি সভাপতি হিসেবে গোলাম মোর্শেদের নাম পরিবর্তন করে সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরাকে নিয়োগ দেন। এরপর গোলাম মোর্শেদ ৬’ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট থেকে ইউএনও’র সভাপতি পদ ‘স্টে’ করে চিঠি নিয়ে আসেন। পরদিন ৭ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বহিরাগত লোকজন নিয়ে তিনি কলেজ অফিসে প্রবেশ করে অফিস কর্মচারী ইয়ারুলকে দিয়ে শিক্ষক পর্ষদের সেক্রেটারি আব্দুর রহিম, শিক্ষক প্রতিনিধি সহকারী অধ্যাপক শাহিদুজ্জামান ও সহকারী অধ্যাপক তপন ঘোষকে অফিস রুমে ডেকে আনেন। গোলাম মোর্শেদ এসময় তাদেরসহ শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও হুমকি প্রদর্শন করে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এ ঘটনার পর শিক্ষকরা যথাসময়ে স্বাভাবিকভাবে কলেজ ছুটির পর বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। পথিমধ্যে সাতানী করিডোর সংলগ্ন মাকা মেম্বরের ‘স’ মিলের নিকটে পৌছালে সেখানে পূর্ব থেকে ওৎ পেতে থাকা গোলাম মোর্শেদের দুই ছেলে সাঈদ ও রাকিনসহ দুই গ্রুপের ২০/২৫ জন সন্ত্রাসী দা, চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, লাঠি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র শস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অতর্কিতে আমাদের দুজন সহকর্মী অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রহিম, মো: শাহিদুজ্জামান (ফারুক) এর উপর হামলা চালায়। তারা দুইজন শিক্ষককে হত্যার হুমকি দিয়ে রড দিয়ে মাথায় আঘাত করে। এসময় দুইজনের মাথায় থাকা হেলমেট ফেটে যায়। এসময় জামাকাপড় ধরে টেনে হেঁচড়ে তাদেরকে ফেলে দিয়ে এলোপাথাড়ি রড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে পিটিয়ে গুরুতর আহত করা হয়।
সন্ত্রাসীদের হামলায় শিক্ষকরা আর্তনাদ করতে থাকলে স্থানীয়রা ছুটে এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। এসময় হাসপাতালে গেটেও তাদের বাহিনীর লোকজন বাধাসৃষ্টি করে। বর্বরোচিত এই হামলায় আক্রান্ত আব্দুর রহিম বাদী হয়ে ৬ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০/২৫ জনকে অজ্ঞাত আসামী করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যার নং ৭৫।
মামলার খবরে আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে গোলাম মোর্শেদসহ তার সন্ত্রাসীরা বাহিনীর সদস্যরা। মামলা হলেও গ্রেপ্তার না হওয়ায় মামলা তুলে নিতে খুন জখমসহ মিথ্যো মামলায় জড়িয়ে হয়রানি ও হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন গোলাম মোর্শেদ ও তার লোকজন। বর্তমানে মোর্শেদ বাহিনীর ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা।
তিনি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে রক্ষার্থে হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার পূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন। সংবাদ সম্মেলনে শহীদ স্মৃতি ডিগ্রি কলেজের সকল শিক্ষকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
খুলনা গেজেট/ এসজেড