খুলনা, বাংলাদেশ | ১৪ বৈশাখ, ১৪৩১ | ২৭ এপ্রিল, ২০২৪

Breaking News

  বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকচাপায় নিহত ২, আহত আরও ৩ জন
  গাজা নীতির বিরোধিতা করে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের পদত্যাগ

লকডাউনের সময় যত বাড়ছে ততই অর্থ ও খাদ্য সংকটে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষ ‌

নিজস্ব প্রতিবেদক

পশ্চিম কোণের সূর্য তখন বিদায় নিয়েছে। ভাঙ্গাচোরা টিনের ঝুঁপড়িতে টিমটিমে বাতি জ্বলছে। ভেতরে মাটির মেঝেতে বসে আছেন বয়সের ভারে ন্যুইয়ে পড়া নার্গিস-মান্নান দম্পতি। লকডাউনে কর্মহীন হয়ে পড়ায় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। ঘরে খাবার না থাকায় গত সপ্তাহ পার করেছেন মুড়ি চিবিয়ে।

রহিমনগর এলাকার ষাটোর্ধ নার্গিস বেগম জানান, খুলনার বেলায়েতের ডকইয়ার্ডে কাজ করতেন তিনি। গত রমজানের লকডাউনের পর কাজ হারিয়েছেন। এখন খুব কষ্টে তার দিন কাটছে। একমাত্র সন্তান থাকে ঢাকায়। দশ বছরেও ছেলে খোঁজ নেয়নি তাদের।

অসুস্থ বৃদ্ধ আব্দুল মান্নান এখন কর্মক্ষম। বয়স্ক ভাতার সামান্য কিছু টাকা আর স্ত্রীর ডকইয়ার্ডের দৈনিক হাজিরায় চলছিলো তাদের সংসার। কাজ বন্ধ হয়ে পড়ায় তাকে ধরতে হয়েছে ভিক্ষার ঝুঁলি। গত দু’দিন লকডাউনের মধ্যেই বের হয়েছেন ভিক্ষা করতে। রাস্তাঘাট ফাঁকা, গতকাল পেয়েছেন মাত্র ৭০ টাকা। তাই দিয়ে কিনেছেন চাল-ডাল।

আব্দুল মান্নান জানান, বয়সের কারণে নানা রোগে আক্রান্ত তিনি। একেতো আয়-রোজগার নেই অন্যদিকে ঘরভাড়া মাস গেলে আটশো টাকা। গত তিন মাসের ভাড়া বাকি রয়েছে। নিরুপায় হয়ে লজ্জা ভেঙ্গে ভিক্ষার পথ বেছে নিয়েছেন। গত বছরের লকডাউনে ত্রাণ সহায়তা পেলেও এ বারে এখনো কোনো সাহায্য পায়নি তারা।

গত ১ জুলাই থেকে চলমান কঠোর লকডাউনের সময় আরো সাত দিন বাড়িয়েছে সরকার। লকডাউনের সময় যত বাড়ছে ততই অর্থ ও খাদ্য সংকটে পড়ছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

লকডাউনে কর্মহীন মানুষের জন্য রূপসা উপজেলা প্রশাসন ও এমপি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সহায়ক প্রদান করা হচ্ছে।

উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানা যায়, চলতি লকডাউনে ইউনিয়ন পর্যায়ের দুঃস্থ, কর্মহীন মানুষের ত্রাণ সহায়তার জন্য প্রতিটি ইউপি চেয়ারম্যানদের দুই দফায় সাড়ে তিন লক্ষ টাকা প্রদান করা হয়েছে।

তবে এখনো পর্যন্ত উপজেলার রামনগর-রহিমনগর গ্রামের কর্মহীন, দিনমজুর অসহায়দের কাছে সে সহায়তা পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ অসহায় মানুষের।

ত্রান সহায়তার বিষয়ে জানতে তিন নং নৈহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বুলবুলের সাথে কথা হলে তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত আড়াই লক্ষ টাকার কোনো সহায়তা তিনি পাননি। তবে উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে সরকারের পক্ষথেকে একলক্ষ পঁচিশ হাজার টাকা তিনি পেয়েছেন। যে টাকা দিয়ে ২৫০ টি ত্রাণের প্যাকেট তৈরী করা হয়েছে। যা দু-এক দিনের মধ্যে বিতরণ করা হবে।

রহিমনগর কলোনির বাসিন্দা আসিফ মোল্লা জুতা তৈরীর কারিগর। তিনি জানান, লকডাউনে গত ১৫ দিন থেকে তার কাজ বন্ধ। পরিবারের পাঁচ সদস্যের মুখে খাবার তুলে দিতে হচ্ছে দোকানে ধার-দেনা করে।

একই এলাকার লালু মিয়া। পেশায় একজন বাদাম বিক্রেতা। লকডাউনের কারণে তারও ব্যবসা বন্ধ। দিন এনে দিন খাওয়া মানুষটি এখন রয়েছে চরম বিপাকের মধ্যে।

তিনি বলেন, ‘গত ১৫ দিন ব্যবসা বন্ধ, ঘরে কিছু নাই। আবার শুনছি আরো সাত দিনের লকডাউন দিছে। লকডাউন বাড়ালেও আমাদের দিকে কারো কোনো খেয়াল নেই। আমরা কি না খেয়ে মরবো?’

লালু মিয়ার মত এমন প্রশ্ন এ এলাকার সকল দিনমজুর, নিম্ন আয়ের মানুষের। রামনগর-রহিমনগর এলাকার অনেকে খুবই দরিদ্র। লকডাউনের কারণে অধিকাংশই কর্মহীন। অনেকের ঘরে খাবার নেই। অনাহারে অর্ধাহারে দিন পার করেছেন তারা। লজ্জায় চাইতেও পারেন না কারো কাছে। এমন অবস্থায় ত্রাণ সহায়তা তাদের হৃদয়ের নিশ্চুপ আকুতি।

ত্রাণ সহায়তার বিষয়ে রূপসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইদা তাসনিম জানান, ৩৩৩ নাম্বারে যারা সাহায্যের জন্য ফোন দিচ্ছেন তাদের হাতে সহায়তা পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। গতকালও ৫৪ পরিবারকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনের সময় অসহায়, কর্মহীন মানুষদের ত্রাণ সহায়তা করা হচ্ছে।

 

খুলনা গেজেট/ টি আই/এনএম




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!