রাজস্ব ঘাটতি অব্যহত রয়েছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। চলতি অর্থ বছরের শুরু থেকে প্রতি মাসেই রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে বন্দরের রাজস্ব শাখা। অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) এ বন্দরে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব ঘাটতি পড়েছে ৩২৯ কোটি টাকার বেশি।
দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ ভোমরা স্থলবন্দরকে পূর্নাঙ্গ বন্দর হিসাবে ঘোষনা হলেও এখনো পর্যন্ত ভারত থেকে সব ধরনের পণ্য এই বন্দর দিয়ে আমদানি করা হয় না। ফলে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না থাকা, পণ্য আমদানিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ, বৈষম্য, ডলার সংকটের কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণপত্র না খোলাসহ নানা কারণে এই বন্দরে আমদানি একরকম নিম্নমুখী। মূলত এ কারণেই অব্যহতভাবে রাজস্ব ঘাটতি দেখা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন বন্দর সংশ্লিষ্টরা।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব শাখা থেকে জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম আট মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৭০৯ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৬৬ কোটি ১৫ লাখ, আগস্টে ৮৪ কোটি ৪১ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৯৬ কোটি ৬৯ লাখ, অক্টোবরে ১০০ কোটি ৮৮ লাখ, নভেম্বরে ৯৮ কোটি ৫৬ লাখ, ডিসেম্বরে ৮৪ কোটি ১২ লাখ, জানুয়ারিতে ১০৩ কোটি ৯৮ লাখ এবং ফেব্রুয়ারি মাসে ৭৪ কোটি ৮২ লাখ টাকার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সে অনুযায়ী অর্থ বছরের গত আট মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩৮০ কোটি ৭১ লাখ টাকা। এর মধ্যে জুলাই মাসে ৪৪ কোটি ৭৪ লাখ, আগস্টে ৫৫ কোটি ২ লাখ, সেপ্টেম্বরে ৫৪ কোটি ৬০ লাখ, অক্টোবরে ৪০ কোটি ৯৫ লাখ, নভেম্বরে ৪২ কোটি ৮ লাখ, ডিসেম্বরে ৩৯ কোটি ৯১ লাখ, জানুয়ারিতে ৪৫ কোটি ৭৬ লাখ ও ফেব্রুয়ারিতে ৫৭ কোটি ৪৭ লাখ টাকার ঘাটতি দেখা দেয়। ফলে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২৯ কোটি ১ লাখ টাকায়।
সূত্রটি আরো জানায়, গত অর্থবছরের প্রথম আট মাসে এ বন্দরে রাজস্ব আদায় হয় ৪৮২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। সে হিসাবেও চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে ১০১ কোটি ৭২ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে।
ভোমরা স্থল বন্দরের আমদানি কারক প্রতিষ্ঠান রোহান এন্টারপ্রাইজের স্বত্তাধিকারী রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী জানান, এই বন্দর দিয়ে আমি পাথরসহ অন্যান্য ভারতীয় পণ্য আমদানি করতাম। কিন্তু এখানে ব্যবসায়ি সংগঠনের মধ্যে দ্বন্দ্বের পাশাপাশি বন্দরে প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা না থাকায় এখন হিলি বন্দর দিয়ে পাথর আমদানি করছি। পরিবহন খরচ একটু বেশি হরেও কোন ধরনের ঝামেলা হোপাতে হচ্ছে না।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী নওশাদ দিলওয়ার রাজু বলেন, রাজস্ব ঘাটতির অনেকগুলো কারণের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পণ্য আমদানিতে নানা ধরনের বিধিনিষেধ। বৈধ উপায়ে সব ধরনের পণ্য আমদানির অধিকার থাকার পরও এই বন্দর দিয়ে আমদানি করতে দেয়া হয় না। ফলে ব্যবসায়ীরা ভোমরা বন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে অন্য বন্দরে চলে যাচ্ছেন। এতে সরকার যেমন রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।
ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের ডেপুটি সহকারী কমিশনার নেয়ামুল হাসান ‘খুলনা গেজেট’ কে বলেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দা যাচ্ছে। এ কারণে রাজস্ব ঘাটতি তৈরি হয়েছে। কোনোভাবেই ঘাটতি কমছে না। একের পর এক বৈশ্বিক সংকট যেন লেগেই আছে। এর মধ্যে করোনা-পরবর্তী সময়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ব্যাংকে এলসি জটিলতা অন্যতম। তবে সামনের চার মাসে ব্যবসা ভালো হলে ঘাটতি কমবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তিনি।
খুলনা গেজেট/ বিএম শহিদ