খুলনা, বাংলাদেশ | ৭ অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ | ২২ নভেম্বর, ২০২৪

Breaking News

  ৪ দিনের সরকারি সফরে ঢাকায় পৌঁছেছেন বাইডেনের বিশেষ প্রতিনিধি দল
  পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৪৫
২৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা

৩০ শতাংশ পৌরকর মওকুফ ও ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করবেন হাতপাখার প্রার্থী

নিজস্ব প্রতিবেদক

মেয়র নির্বাচিত হলে নগরবাসীর পৌরকর ৩০ শতাংশ মওকুফ এবং ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসলামি আন্দোলনের হাতপাখার প্রার্থী হাফেজ মাওলানা আব্দুল আউয়াল।

আজ বেলা সাড়ে ১১টায় খুলনা প্রেসক্লাবে নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি এ ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি ২৮ দফা ইশতেহার ঘোষণা করেন।

ইশতেহারে পায়ে চালিত রিকশা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা, ব্যাটারি চালিত রিকশা, ইজিবাইকের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করারও ঘোষণা দেন তিনি।

তিনি বলেন, ১৯৯০ সালের ৬ আগষ্ট সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়া খুলনা সিটি আজ অনেক অবহেলিত ও বঞ্চিত। ঢাকা, চট্টগ্রাম সহ বিভিন্ন শহর আজ পরিবেশগত ভাবে বসবাসের উপযোগিতা হারিয়েছে। খুলনার পাশেই রয়েছে সুন্দরবন। নগরীর দুই পাশে রয়েছে প্রবাহমান নদী যা আমাদের পরিবেশ সুন্দর রাখতে সহায়তা করে। এতো সুন্দর প্রাকৃতিক পরিবেশ থাকা সত্বেও আজ খুলনা আবর্জনাভরা, যানজট ও মশার শহরে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ২/৫ বারের অধিক লোডশেডিংয়ে নগরবাসী বিরক্ত। সরকারী ব্যবস্থাপনায় উন্নত চিকিৎসা অনুপস্থিত। আমাদের সন্তানদের সুষ্ঠু শিক্ষা ও সুন্দর বিনোদনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। নগরের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় আজ খুলনার প্রতিটি অলিগলিতে মাদকের ছড়াছড়ি। বেড়েছে ইভটিজিং ও ছিনতাইয়ের উৎপাত। বিভিন্ন কলকারখানায় শ্রমিকরা ন্যায্য অধিকার বঞ্চিত। অপরিকল্পিতভাবে রাস্তা খননের দরুন পুরো শহরের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে জ্যাম। ফলে ভোগান্তির
চরম পর্যায়ে নগরবাসী। সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তাদের অবহেলায় আজ নগরবাসী বহুবিধ নাগরিক অধিকার হতে বঞ্চিত। সুপেয় পানির অভাব, ডাষ্টবিনের সঙ্কট, ল্যাম্বপোস্টের অধিকাংশ লাইট নষ্ট থাকার কারণে খুলনা নগরী হয়ে উঠেছে এক অন্ধকার শহর। এমন হাজারও সমস্যায় জর্জরিত যখন নগরবাসী, ঠিক তেমনি একটা মুহুর্তে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন।

হাতপাখার মেয়রপ্রার্থী আউয়াল বলেন, বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত এই নগরকে বাঁচাতে আর সময়ক্ষেপণ করার অবকাশ নেই। কোনো ধরনের অপ-রাজনীতি করার
সুযোগ নেই। দলান্ধতার কোনো ফুরসত নেই। সময় এসেছে দল-মত নির্বিশেষে সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে খুলনাকে
বাঁচানোর উদ্যোগ নেয়ার; এখন সময় এসেছে খুলনাকে উদ্ধার করার; এখন সময় এসেছে খুলনাকে দুর্নীতিমুক্ত জনবান্ধব আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলার কেসিসি’র মেয়র নির্বাচিত হলে শুধু দূর্নীতি দমন নয়, দূর্নীতি নির্মূলকরণ কর্মসূচি গ্রহণের মাধ্যমে যে কোন মূল্যে কেসিসিকে দূর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজী মুক্ত করে নাগরিক সেবা নিশ্চিত করবো, ইনশাআল্লাহ।

তিনি অঙ্গীকার করে বলেন, মানবিক কারণে পায়ে চালিত রিক্সা, ভ্যান ও ঠেলাগাড়ির লাইসেন্স ফি মওকুফ করা হবে। ব্যাটারী চালিত রিক্সা, ইজি-অটোবাইক এবং জ্বালানি তেল চালিত মাহেন্দ্ৰা সহ অন্যান্য হালকা যানসমূহের লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। লাইসেন্স শুধুমাত্র প্রকৃত ড্রাইভারগণকেই প্রদান করা হবে। খুলনা সিটির বিভিন্ন গাড়ীর স্ট্যান্ড ও মালামাল উঠা-নামার ঘাট সমূহে সকল ধরণের চাঁদাবাজী বন্ধ করা হবে। ৩০% হোল্ডিং ট্যাক্স মওকুফ করা হবে। ট্রেড লাইসেন্স ফি অর্ধেক করা হবে। কেসিসি’র বর্ধিতকরণ প্রকল্পে যে সকল নতুন এলাকা সমূহ যুক্ত করা হয়েছে, সে সকল এলাকার হোল্ডিং ট্যাক্স ৫ বছরের জন্য মওকুফ করা হবে। তাদের পানির লাইন বিনা খরচে প্রদান করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নতুন এলাকার রাস্তাঘাট ও স্যুয়ারেজ লাইন মানসম্মতভাবে স্বল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাস্তবসম্মত প্রকল্প গ্রহণ করা হবে। টেকসই ও উন্নত রাস্তা-ঘাট নির্মাণ এবং জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেসিসিতে টেন্ডার হবে কিন্তু টেন্ডারবাজি হবে না। ই-টেন্ডারিং চালু করা হবে। কেসিসির সামগ্রিক আয়-ব্যয়ের রিপোর্ট প্রতিবছর প্রকাশ করা হবে।

আব্দুল আউয়াল বলেন, ইশতেহারে সিটি কর্পোরেশনের সকল ক্ষেত্রে শুধু দুর্নীতি দমন নয়, দুর্নীতি মূলোৎপাটন কর্মসূচি গ্রহণ, ভেজালমুক্ত খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও ইনসাফপূর্ণ বাজার নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নগর উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, বিগত মেয়রদের দেয়া সব ওয়াদা-প্রতিশ্রুতি ও ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহার অকার্যকর ও অন্তঃসারশূন্য ফাঁকা বুলিতে পরিণত হয়েছে দাবি করে আব্দুল আউয়াল বলেন, আজ খুলনা সিটি বসবাসের অনুপোযোগী একটি সিটিতে পরিণত হতে চলেছে। শিল্পাঞ্চল খুলনা আজ ধ্বংসের দারপ্রান্তে।

ঘোষিত ইশতেহারে তিনি আরও বলেন, অশুভ কায়েমী স্বার্থবাদী সিন্ডিকেটকে অবশ্যই ভাঙতে হবে। নোংরা রাজনীতির প্রভাব-দৌরাত্ম থেকে খুলনা সিটিকে রক্ষা করতে হবে। জনজীবনে স্বস্তি ও শান্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। নগরকে বসবাসোপযোগী শান্তির নগরীতে পরিনত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আমূল পরিবর্তনের। দরকার ব্যাপক সংস্কারের। প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগের। প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও আল্লাহভীরু নেতৃত্বের।

সংবাদ সম্মেলনে ঘোষিত নির্বাচনী ইশতেহারের মধ্যে রয়েছে, দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন, স্বচ্ছতা আনয়ন, জবাদিহি নিশ্চিতকরণ, শ্বেতপত্র প্রকাশ, নগর বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন, নগর সরকার গঠনে কার্যকর উদ্যোগ, বায়ূ দূষণ নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, পানি সমস্যার সমাধান, নদীদূষণ, শব্দদূষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড গঠন, খাদ্যে ভেজাল নিয়ন্ত্রণ, পরিকল্পিত খুলনা গঠন, যানজট নিরসন, ওয়ার্ড ভিত্তিক পরিকল্পনা প্রণয়ন, বিল্ডিং কোর্ডের যথাযথ অনুসরণ, দুর্যোগ সহিষ্ণু নগর গঠন, বাসা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ, স্মার্ট পার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ।

এছাড়া ফুটপাত দখলমুক্ত ও পথচারীদের চলাচল উপযোগী করা, আধুনিক মানের পাবলিক টয়লেট গড়ে তোলা, মশক নিধনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা, মাদক নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, খাল, জলাধার সংরক্ষণ করে জলাবদ্ধতা নিরসণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, নগরস্বাস্থ্য ব্যবস্থার আধুনিকায়ন, হকার ও ছিন্নমূল শিশুদের পুনবার্সন, নারীবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, নাগরিকদের নৈতিক উন্নয়ন, যাকাত বোর্ড গঠন এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হবে।

ইশতেহার ঘোষণায় এই মেয়রপ্রার্থী বলেন, বিগত নির্বাচনগুলো স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও জবাবদিহিমুলক না হওয়ায় এখনো জনমনে শঙ্কা, সংশয়, ও উদ্বেগ বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, জনগণের সংশয় ও সন্দেহ দূর করতে না পারলে নির্বাচন থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিবে। সাধারণ মানুষ যখন তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, তখন দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। এজন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনকেই নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষকে আগ্রহশীল করে তুলতে হবে।

আব্দুল আউয়াল বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনে দীর্ঘদিনের জমে থাকা জঞ্জাল, সীমাহীন অনিয়ম, পরিকল্পিত দুর্ভোগ, মাত্রাতিরিক্ত দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং উন্নয়নের কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাশীলদের অনৈতিক আধিপত্য নগরবাসীকে বিষিয়ে তুলেছে। জনমনে শান্তি নেই, স্বস্তি নেই; মানবজীবনের নিরাপত্তা নেই। নগরজীবনে স্বস্তি, শান্তি ও নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনার জন্য আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনারা সম্মিলিতভাবে খুলনার সমস্যার সমাধান করতে চাইলে এবং খুলনাকে বাসযোগ্য, টেকসই, উন্নত এবং আধুনিক সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চাইলে, আমি নগরবাসীর অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি। এ মহান কাজে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই, দোয়া চাই; আপনার মূল্যবান ভোটটি হাতপাখা মার্কায় চাই। আমি ইশতেহারে যে সকল কথা উল্লেখ করেছি, আপনারা আমার পাশে থাকলে এবং সহযোগিতা করলে, জীবনের বিনিময়ে হলেও আমি তা বাস্তবায়ন করবো, ইনশাআল্লাহ। আমাকে হাতপাখা মার্কায় আপনাদের মহামূল্যবান ভোট দিয়ে খুলনার সার্বিক উন্নয়ন ও দূষণমুক্ত পরিকল্পিত আধুনিক খুলনা গড়ার সুযোগ দিন।

সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার ঘোষনাকালে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান পরিচালক মোঃ নাসির উদ্দিন, সহকারী পরিচালক মুফতী আমানুল্লাহ সমন্বয়নকারী মুফতি ইমরান হুসাইন, সহ- সমন্বয়কারী হাফেজ আসাদুল্লাহ গালীব, নির্বাচনী প্রধান এজেন্ট শেখ হাসান ওবায়দুল করিম, যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় দফতর সম্পাদক হাসিব গোলদার, উপ সম্পাদক মুফতী শেখ আমিরুল ইসলাম, আবু গালিব, রবিউল ইসলাম তুষার, আব্দুল্লাহ আল নোমান, ফেরদৌস গাজী সুমন, মোঃ সাইফুল ইসলাম, মুহ. মঈন উদ্দিন আব্দুল্লাহ আল-মামুন, এম এ সাদী, মাহাদী হাসান মুন্না, এস এম আবুল কালাম আজাদ, মোঃ ইব্রাহিম খান, মুফতি আব্দুর রহমান মিয়াজী, ২৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ ইমরান হোসেন মিয়া ও ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ আব্দুর রশিদ প্রমুখ।




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!