মাত্র ২৫ শতক জমিতে চাষ করে সাড়ে চার মাস পর ২২ মণ বাগদা উৎপাদন হয়েছে। এক হাজার টাকা দরে বিক্রি করে পেয়েছেন ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। গল্প মনে হলেও এটা বাস্তব সত্য। আর এই অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার ভান্ডারপাড়া ইউনিয়নের কানাইডাড়া গ্রামের অভিজিৎ বিশ্বাস। এই চাষাবাদে তার খরচ হয় ৪ লাখ টাকা। সাড়ে চার মাসে তিনি চার লাখ ৮৫ হাজার টাকা নিট মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন।
অভিজিৎ বিশ্বাস বলেন, জলাশয় প্রস্তুতের পর পানির ট্রিটমেন্ট করি। নদী থেকে নোনা পানি তুলে ব্লিচিং পাউডার, পটাশ দিয়ে পোনা ছাড়ার উপযোগী করি। মে মাসের প্রথম সপ্তাহে ২৩ হাজার ৪শ’ টি বাগদার পোনা দেয়া হয়। খুলনার বটিয়াঘাটার ‘দেশ বাংলা হ্যাচারি’ থেকে পোনা সংগ্রহ করি। ওই হ্যাচারিতে ভাইরাসমুক্ত স্পেসিফিক প্যাথোজেন্ট ফ্রি (এসপিএফ) পোনা পাওয়া যায়। সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে বাগদা হারভেস্ট করা হয়। দিনে চার বার খাবার দেওয়া হয়েছে। খাবারের পাশাপাশি চুন, ওষুধ ও শ্রমিক খরচ মিলে ৪ লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়েছে। জাল টানা দিয়ে ৮৮৫ কেজি বাগদা পেয়েছি। প্রতিকেজি এক হাজার টাকা দরে ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় বিক্রি করি। প্রতিটি বাগদার গড় ওজন হয় ৫০ গ্রাম ।
তিনি জানান, অক্সিজেন সরবরাহ ঠিক রাখতে জলাশয়ে দুটি বৈদ্যুতিক মোটর বসানো হয়। বায়ো সিকিউরিটির জন্য ঘেরের পাড় নেট দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়। জলাশয় ৬ ফুট গভীরতা ও পাড় মজবুত করতে হয়েছে।
তিনি প্রথম ২০১৯ সালে আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চাষ শুরু করেন। প্রথম বছর খরচ একটু বেশি হয়। প্রথম বছর ৬ লাখ টাকা খরচ হয় তার। বিক্রি হয় ৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। করোনায় দাম পতনের ভয়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে চাষ করা থেকে বিরত থাকেন। ২০২১ সালে একই জমিতে চার লাখ টাকা খরচ করে ৮ লাখ টাকা বিক্রি করেছিলেন।
তিনি আরও বলেন, সিপি কোম্পানীর টেকনিশিয়ান হাবিব ভাইয়ের কাছ থেকে প্রথম পরামর্শ পেয়ে উদ্বুদ্ধ হই। ওই কোম্পানীর শোভন ভাইও সহযোগিতা করেন। আর ডুমুরিয়ার সিনিয়র উপজেলার মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আবু বকর সিদ্দিক স্যার সর্বদা দিকনির্দেশনা দিয়ে পাশে ছিলেন। আমার আবেগ বাড়িয়ে দিয়েছেন আবু বকর স্যার।
উপজেলা মৎস্য কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ডুমুরিয়া উপজেলায় ২৬ হাজার ৫১২ টি চিংড়ি ঘেরের মধ্যে ৭ হাজার ৮০০টিতে বাগদা চাষ করা হয়। বাকিগুলোতে গলদা চাষ হয়। এ উপজেলায় গড় বাগদার উৎপাদন ১০ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন । আধা নিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ এ এলাকায় বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এই পদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি চিংড়ির উৎপাদন সাধারণ পদ্ধতির চেয়ে প্রায় ৩০ গুণ বেশী।
তবে বেশ ঝুঁকি রয়েছে। ব্যাকটোরিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রোবায়োটিক ব্যবহার করতে হয়। ঘেরে নিয়মিত ইয়ারেশন কিংবা পেডেল হুইল চালিয়ে অক্সিজেনের সরবরাহ ঠিক রাখতে হয়। চার পাশ দিয়ে নেট ব্যবহার করে বায়োসিকিউরিটি নিশ্চিত করতে হয়। জলাশয়ে কমপক্ষে ৫/৭ ফুট গভীরতা থাকতে হয়। স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য নিয়মিত সুষম খাদ্য প্রয়োগ করতে হয়। রোগ-জীবানু নিয়ন্ত্রণে সর্বদা সতর্ক থাকা ও পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ প্রয়োগ করতে হয়।
ডুমুরিয়ার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক বলেন, অভিজিৎ বিশ্বাস অত্যন্ত দক্ষ একজন চিংড়ি চাষি। মৎস্য দপ্তর থেকে তাকে সকল প্রকার কারিগরী পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। অন্য বাগদা চাষিদের জন্য তিনি উদাহরণ।
তিনি আরও বলেন, আধা-নিবিড় পদ্ধতির চিংড়ি চাষ অনেক লাভজনক। কিন্তু বায়োসিকিউরিটি বা জৈব নিরাপত্তা রক্ষা করতে না পারলে বেশ ঝুঁকি রয়েছে।
খুলনা গেজেট/ টি আই