নগরীর খানজাহান আলী থানার তেলিগাতী মৌজার ৪ দশমিক ৪৪ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত খুলনার ঐতিহ্যবাহী গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুল। স্কুলটির উত্তরে স্মরণাতীত কাল থেকে পানি নিষ্কাশনের নালা। তৎপরবর্তী খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ সম্প্রতি অধিগ্রহণকৃত ১৬ দশমিক ৫ একর বিলান ভূমি। দক্ষিণে ফুলবাড়িগেট থেকে বাইপাস পর্যন্ত দীর্ঘ ৬০ ফুট প্রশস্ত রাস্তা। পূর্বে ঐ প্রশস্ত ৬০ ফুট রাস্তার নীচ দিয়ে তৈরি ১২ ফুট পাকা কালভার্টের সাথে সংযুক্ত ড্রেন। তৎপূর্বে সরকারী হাইয়ার সেকেন্ডারী টিচার্স ট্রেনিং ইনন্সিটিউট (এইচএসটিটিআই), টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিটিসি) এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)। পশ্চিম পার্শ্বে সরকারী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, সরকারী মহিলা কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও সরকারী উদয়ন প্রাথমিক বিদ্যালয়।
চলতি বছরের শুরুতে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ ১৬ দশমিক ৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ করে ভরাট করার ফলে গভঃ ল্যাবরেটরী হাই স্কুল সহ উপরোক্ত ৫ টি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসে বর্ষা মৌসুমের পর থেকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।
উক্ত ১৬ দশমিক ৫ একর ভূমি ভরাট করার কারণে এ সকল সরকারী প্রতিষ্ঠানের পানি নিষ্কাশন ব্যাবস্থা বন্ধ হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে, এমন অভিযোগ এনে গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছাঃ খালেদা খানম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শিক্ষা ও কল্যাণ শাখায় গত ১৮ মে একটি অভিযোগ পত্র প্রদান করেন। যার স্মারক নং ২৯১/১৭। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, কুয়েট কর্তৃক উক্ত ভূমি ভরাট করার কারণে গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটির পূর্ব পাশ দিয়ে সরকারী টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, এইচএসটিআই, খানাবাড়ী, তেলিগাতী, মহেশ্বরপাশা এলাকার বিশাল অংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। বর্তমানে ঐ ড্রেনের উত্তর (শেষ অংশ) কুয়েট কর্তৃক ভূমি অধিগ্রহণ করে বালি ও মাটি দ্বারা ভরাট করায় পানিতে বিদ্যালয়ের ড্রেন, খেলার মাঠ, হোস্টেল ভবন পানি দ্বারা প্লাবিত হয়। বর্ষা মৌসুমে উক্ত ড্রেন দিয়ে পানি চলাচল বন্ধ থাকলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি পানিতে নিমজ্জিত হবে।
অন্যদিকে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পানি নিষ্কাশনের জন্য বিকল্প ড্রেনের যে প্রস্তাব করেছে সেটি উঁচুতে অবস্থিত এবং সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩/৪ ফুট নীচুতে থাকায় এ সব প্রতিষ্ঠানের পয়ঃ নিষ্কাশন ও পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা কোন ভাবেই বাস্তব সন্মত নয়।
গভঃ ল্যাবরেটরী হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কর্তৃক অভিযোগ সম্বলিত উক্ত চিঠি পাওয়ার পর ২৭ মে অতিঃ জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইটিসি) মোঃ সাদিকুর রহমান খান সরেজমিনে তদন্ত ও পরবর্তী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য সময় এবং স্থান নির্ধারণ করেন।
এ অবস্থায় ধার্য তারিখে সংশ্লিষ্ট সকলকে সরেজমিনে উপস্থিত থেকে শুনানীতে অংশগ্রহণ ও তদন্ত কাজে সার্বিক সহযোগীতা প্রদানের জন্য অনুরোধ করা হয়। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে একজন উপযুক্ত প্রতিনিধি তদন্তস্থলে উপস্থিত রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়। নির্ধারিত তারিখ এবং সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী উপস্থিত থেকে তদন্ত কাজে সহযোগীতা করলেও বিষয়টির কোন সুরহা হয়নি।
এব্যাপারে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী আনিচুর রহমান খুলনা গেজেটকে বলেন, উল্লেখিত স্থানের পানি নিষ্কাশনের সমস্যার স্থায়ী সমাধানের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যথেষ্ট আন্তরিক। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছেন।
অন্যদিকে স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে উপরোক্ত ৬ টি সরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসের ভেতরের রাস্তা, ড্রেন, খেলার মাঠ, আঙ্গিনা প্লাবিত এবং পানি দূষিত হয়ে পয়ঃ নালার সাথে মিশে কালো রং ধারণ করেছে। দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। পানি বিষাক্ত আকার ধারণ করেছে। মশার উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। স্থায়ী জলাবদ্ধতার কারণে এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্যাম্পাস বিভিন্ন রোগ জীবাণুর সূতিকাগারে পরিণত হয়েছে।
খুলনা গেজেট/ এস আই