ঘরের মাটিতে সাদা পোশাকের ক্রিকেট মানেই যেন ন্যাড়া পিচে প্রতিপক্ষকে স্পিনজালে বেধে ফেলার একটা প্রাণান্তকর চেষ্টা। তবে চিরায়ত সেই অভ্যাস থেকে এবার বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশ। সিলেটে সবুজ উইকেটের টেস্টে আধিপত্য দেখালেন পেসাররা। ব্যাটাররাও পাল্টা জবাব দিলেন। আশা, হতাশা, উত্থান কিংবা পতন সবই দেখা গেছে চায়ের দেশের টেস্টের প্রথম দিনে। তবে দিনশেষে স্বাগতিকদের চেয়ে এগিয়ে গেছে সফরকারী শ্রীলঙ্কাই।
সিলেটে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে টাইগার পেসারদের তোপে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েও কামিন্দু মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার জোড়া সেঞ্চুরিতে ৬৮ ওভারে ২৮০ রানে থামে লঙ্কানদের ইনিংস। জবাবে শেষ বিকেলে ব্যাট করতে নেমে লঙ্কানদের মতোই বিপদে পড়ল স্বাগতিকরা। একের পর এক উইকেট বিলিয়ে ‘আশার পালে হাওয়া দেওয়া’ টেস্টের শুরুতেই পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
প্রথম দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ১০ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৩২ রান। একে একে সাজঘরে ফিরে গেছেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটার জাকির হাসান, অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক। লঙ্কানদের চেয়ে ২৪৮ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নামবে স্বাগতিকরা।
তৃতীয় সেশনে শ্রীলঙ্কার ইনিংস যতক্ষণে শেষ হয়েছিল, বেলা তখন পড়ন্ত। শেষবেলায় ব্যাট করতে নেমে অস্বস্তি নিয়েই দিন শেষ করেছে বাংলাদেশ। পরপর দুই ওভারে দুই উইকেট তুলে নিয়ে স্বাগতিকদের ব্যাকফুটে ঠেলে দেন মূলত ভিশ্ব ফার্নান্দো। ওপেনার জাকির হাসানের পর নাজমুল হোসেন শান্তকেও ফেরান লঙ্কান এই পেসার।
ভিশ্ব ফার্নান্দোর বলে পরাস্ত হয়েছিলেন জাকির। ব্যাটের ফাঁক গলে বল গিয়ে লাগে প্যাডে। জোরালো আবেদনে আঙুল তুলে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়েও শেষরক্ষা হয়নি। আম্পায়ার্স কলে কাটা পড়ার আগে দুই চারের মারে ৮ বলে ৯ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। এরপর শান্তকেও এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ভিশ্ব। এবার রিভিউ নিয়েও রক্ষা মিলল না টাইগার অধিনায়কের। সাজঘরে ফেরার আগে ১০ বলে ৫ রান করেছেন শান্ত।
দুই উইকেট পতনের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারলেন না অভিজ্ঞ ব্যাটার মুমিনুল হকও। শেষ দিকে আর বিপদ হতে দেননি মাহমুদুল হাসান জয় ও নাইটওয়াচম্যান তাইজুল ইসলাম। জয় ৩৪ বলে ৯ ও তাইজুল ১ বলে ০ রানে অপরাজিত থেকে নতুন দিনের খেলা শুরু করবেন।
এর আগে টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে প্রথম সেশনে বলতে গেলে লঙ্কানদের দুমড়েমুচড়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে ৫৭ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারিয়ে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল শ্রীলঙ্কা। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর ফিল্ডিং বেছে নেওয়ার সিদ্ধান্তটা দারুণভাবে কাজে লাগান টাইগার পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদ। তবে ষষ্ঠ উইকেটে দ্বিশতরানের জুটি গড়া কামিন্দু মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার জোড়া সেঞ্চুরিতে ভর করে ম্যাচে ফেরে লঙ্কানরা।
খালেদের পর লঙ্কান শিবিরে আঘাত হানেন অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানা। তরুণ এই পেসারের হাত ধরেই বহুল কাঙ্ক্ষিত ব্রেকথ্রু পায় বাংলাদেশ। ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি হাঁকানো কামিন্দু মেন্ডিসকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম উইকেটটা তুলে নেন এই পেসার। ১১ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো ইনিংসে ১২৭ বলে ১০২ রান করেছেন লঙ্কান এই ব্যাটার। তার বিদায়ে ভাঙে ধনঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে গড়া ২০২ রানের জুটি।
কামিন্দুর বিদায়ের পর একই ওভারে নাহিদ রানার বল সীমানা ছাড়া করে ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি ছুয়ে ফেলেন ধনঞ্জয়া ডি সিলভাও। অবশ্য প্রতিশোধ তুলতেও সময় নিলেন না তরুণ পেসার। নিজের ফিরতি ওভারে আক্রমণে এসে লঙ্কান অধিনায়ককেই লক্ষ্যবস্তু বানালেন। ১৪২ কিলো গতির বাউন্সারে পুল করার চেষ্টায় ব্যর্থ হলেন ডি সিলভা। ডিপ স্কয়ার লেগে কোনো ভুল করলেন না মেহেদী হাসান মিরাজ। সাজঘরে ফেরার আগে ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১৩১ বলে ১০২ রান করেন লঙ্কান কাপ্তান।
প্রথম দুই সেশনে উইকেটের অপেক্ষায় থাকা নাহিদ রানা শেষ বেলায় এসে পরপর তিন ওভারে তুলে নিলেন তিন উইকেট। দুই সেঞ্চুরিয়ানের পর লেজের দিকের ব্যাটার প্রবাথ জয়াসুরিয়াকেও ফেরালেন। এরপর আর বেশিদূর এগোতে পারেনি সফরকারীরা। রান আউটে সমাপ্তি ঘটে শ্রীলঙ্কার ইনিংসের। কাসুন রাজিথার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে আউট হন লাহিরু কুমারা। ২৮০ রানে থামে তাদের ইনিংস।